আঞ্চলিক

কুমিল্লায় বালুর নিচ থেকে যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধারের রহস্য উন্মোচন

কুমিল্লায় আলোচিত যুবক আমিনুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর আমিনুলকে নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশ বালুর নিচে চাপা দেয় হত্যাকারীরা। এ ঘটনায় মূল অভিযুক্তদের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১১।

হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত ঘটনা

র‌্যাব জানায়, নিহত যুবকের নাম আমিনুল ইসলাম (২২)। তাকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছিলেন সিরাজ নামের এক ব্যক্তি। শেষ পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় সিরাজ। টাকা ফেরত দিতে চাপ সৃষ্টি করলে পরিকল্পিতভাবে আমিনুলকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সে।

গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে আমিনুলকে সিলেটে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের করা হয়। পরদিন রাতে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার মোস্তফাপুর এলাকায় নিয়ে গলায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর দ্রুত লাশ বালুর নিচে চাপা দিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায় হত্যাকারীরা।

গ্রেপ্তার ও উদ্ধার করা আলামত

শুক্রবার রাতে চান্দিনা থানার এতবারপুর এলাকা থেকে সজিব (২০) নামের এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এসময় হত্যায় ব্যবহৃত একটি হাঁসুয়া, রক্তমাখা লুঙ্গি এবং একটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

র‌্যাব-১১ কোম্পানি কমান্ডার সাদমান ইবনে আলম শনিবার দুপুরে প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, গ্রেপ্তার সজিব প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। সে জানিয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডে মোট তিনজন অংশ নেয়। তাদের মধ্যে সিরাজ মূল পরিকল্পনাকারী, সজিব ও আরও একজন সহযোগী হিসেবে অংশ নেয়।

নিহত আমিনুল ইসলাম চাকরির আশায় সিরাজের কাছে বারবার যোগাযোগ করছিলেন। সিরাজ তাকে বিদেশে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে টাকা নেন। তবে টাকা নেয়ার পর আর চাকরির কোনো ব্যবস্থা করেননি। বিষয়টি জানাজানি হলে সিরাজের ওপর চাপ বাড়তে থাকে। এর ফলেই হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।

লাশ উদ্ধারের ঘটনা

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে স্থানীয় বাসিন্দা ফরিদ উদ্দিন তার জমিতে যাওয়ার সময় বালুর ভেতর রক্ত ও কিছু চাপা দেয়া অবস্থায় সন্দেহজনক দৃশ্য দেখতে পান। পরে তিনি ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। স্থানীয়দের সহায়তায় বালুর নিচ থেকে গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়।

নিহত আমিনুলের বাবা আলী আজ্জম বাদী হয়ে সদর দক্ষিণ মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের আসামি করা হয়।

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

এ ঘটনায় এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয়রা বলছেন, এভাবে পরিকল্পিতভাবে যুবককে হত্যা করে লাশ চাপা দেয়া জঘন্য ঘটনা। তারা দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

র‌্যাবের তৎপরতা ও পরবর্তী পদক্ষেপ

র‌্যাব জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্য দুই আসামিকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। বিশেষ করে মূল হোতা সিরাজকে ধরতে তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি নিহতের পরিবারের নিরাপত্তার দিকেও নজর রাখা হচ্ছে।

কেন বাড়ছে এ ধরনের প্রতারণা

চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়া এখন দেশে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক বেকার যুবক বিদেশে চাকরির আশায় দালালদের ফাঁদে পড়ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়মিত অভিযান চালালেও প্রতারণার নতুন কৌশলে যুবকেরা ঝুঁকছে।

অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি ও আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি। পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে দালালচক্রের কার্যক্রম চিহ্নিত করতে হবে।

পরিশেষে

কুমিল্লার এই হত্যাকাণ্ড আবারও প্রমাণ করেছে যে অর্থ ও প্রতারণার ফাঁদে পড়ে কতটা ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনতে পারে। র‌্যাবের তৎপরতায় ঘটনার রহস্য উন্মোচিত হলেও অপরাধীরা সবাই ধরা না পড়া পর্যন্ত নিহতের পরিবার ন্যায়বিচার পাবে না। এখন দেখার বিষয়, এই মামলার অগ্রগতি কত দ্রুত হয় এবং মূল হোতা সিরাজ কত দ্রুত ধরা পড়ে।

এম আর এম – ১৩০৯,Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button