আঞ্চলিক

বনানীতে ৩০ লাখ টাকার চুরি, ২৫ লাখ উদ্ধারসহ গ্রেপ্তার ১

রাজধানীর বনানীতে ঘটে যাওয়া আলোচিত চুরির ঘটনায় চুরি হওয়া প্রায় ২৫ লাখ টাকা এবং চুরির টাকায় কেনা একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্য অনুযায়ী, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির নাম মো. কাউছার আহমেদ (২২)। তাকে শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫) রাত প্রায় ১১টা ৪৫ মিনিটে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে আটক করে বনানী থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে নগদ টাকা, মোটরসাইকেল ও দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

চুরির ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মুস্তাজিরুল শোভন ইসলাম রাজধানীর বনানীর ১৮ নম্বর সড়কের ৩৮/বি নম্বর বাড়িতে পরিবারসহ বসবাস করেন। গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতের বেলা পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে পড়ার পর অজ্ঞাত চোর বাসায় প্রবেশ করে।

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে পরিবার দেখতে পান—

  • শয়নকক্ষের বিভিন্ন জিনিসপত্র এলোমেলো অবস্থায়
  • ওয়াল আলমারির দরজা খোলা
  • ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহৃত একটি হ্যান্ড সুটকেস মেঝেতে পড়ে আছে

সেই স্যুটকেসে রাখা ছিল ৩০ লাখ টাকা। কিন্তু টাকা আর সেখানে ছিল না।

ঘটনার পর ১১ সেপ্টেম্বর বনানী থানায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী মুস্তাজিরুল শোভন ইসলাম।

পুলিশের তদন্ত ও অভিযান

মামলার পরপরই পুলিশ প্রযুক্তিগত সহায়তা ব্যবহার করে সন্দেহভাজনের অবস্থান শনাক্ত করে। এরপর মানিকগঞ্জে অভিযান চালিয়ে পুলিশ কাউছার আহমেদকে গ্রেপ্তার করে

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে চুরির টাকার বিষয়টি স্বীকার করে। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২৪ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও চুরি করা টাকায় কেনা একটি মোটরসাইকেল ও দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

পুলিশের বক্তব্য

উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান—

“গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি স্বীকার করেছে যে সে বনানীর ওই বাসায় চুরি করেছে। তার কাছ থেকে প্রায় ২৫ লাখ টাকা এবং মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।”

তিনি আরও বলেন, “চুরির শিকার ব্যবসায়ীকে অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। বাকি টাকার খোঁজে তদন্ত চলছে।”

রাজধানীতে চুরির প্রবণতা বাড়ছে?

ঢাকা শহরে সাম্প্রতিক সময়ে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীতে প্রায় তিন শতাধিক বড় ধরনের চুরির ঘটনা ঘটেছে

এর মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই চোরেরা বাড়ির সুরক্ষা ভেঙে টাকা, সোনাদানা, মোবাইল ফোন ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে—

  • দ্রুত নগরায়ণ,
  • অর্থনৈতিক বৈষম্য,
  • মাদকাসক্তি,
  • এবং বেকারত্ব

এসব কারণে যুবকদের একটি অংশ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চ্যালেঞ্জ

পুলিশ বলছে, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেও অপরাধীরা নানা কৌশল অবলম্বন করে অপরাধ সংঘটিত করছে। যেমন—

  • ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার,
  • বিভিন্ন জেলায় পালিয়ে যাওয়া,
  • চুরি করা টাকায় দ্রুত সম্পদ কেনা।

তবে প্রযুক্তির ব্যবহার ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধির কারণে অধিকাংশ বড় অপরাধই এখন পুলিশের নজরে আসছে এবং দ্রুত গ্রেপ্তার সম্ভব হচ্ছে।

চুরি প্রতিরোধে করণীয়

নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন যেগুলো মানলে চুরির ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব:

  1. বাসায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন
  2. শক্তিশালী দরজা ও তালা ব্যবহার
  3. নগদ টাকা ও মূল্যবান সামগ্রী ব্যাংকে রাখা
  4. বাসার প্রহরী নিয়োগ
  5. প্রতিবেশীদের সাথে সুসম্পর্ক রাখা, যাতে সন্দেহজনক কিছু দেখলে তারা জানাতে পারে

ভুক্তভোগীর প্রতিক্রিয়া

ব্যবসায়ী মুস্তাজিরুল শোভন ইসলাম বলেন—

“আমরা ঘুমিয়ে থাকাকালীন যে ঘটনা ঘটেছে, তা আমাদের জন্য মানসিকভাবে ভীষণ কষ্টদায়ক। পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপে টাকার একটা বড় অংশ উদ্ধার হওয়ায় আমরা কৃতজ্ঞ। আশা করছি পুরো টাকাই উদ্ধার হবে।”

গ্রেপ্তার যুবকের প্রেক্ষাপট

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তারকৃত মো. কাউছার আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত ছিল। তবে সে নিয়মিত কোনো কাজ করত না। পুলিশের ধারণা, অর্থের লোভে ও সহজ উপায়ে টাকা পাওয়ার আশায় সে চুরির মতো ঝুঁকিপূর্ণ পথে নেমেছে।

রাজধানীর বনানীতে ঘটে যাওয়া এই চুরির ঘটনায় প্রমাণিত হলো—সতর্কতা ও নিরাপত্তার ঘাটতি থাকলে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। তবে পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপে অন্তত ২৫ লাখ টাকা উদ্ধার হওয়ায় স্বস্তি ফিরে এসেছে ভুক্তভোগীর পরিবারে।

এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—বাকি টাকার কী হলো? সেটি উদ্ধার করতে পারবে কি পুলিশ? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে তদন্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

MAH – 12791  Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button