কদমতলীতে বিদ্যালয়ের বাউন্ডারি দেয়াল ভেঙে শিক্ষক নিহত

রাজধানীর কদমতলী মুরাদপুর এলাকায় একটি বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন বাউন্ডারি দেয়াল ভেঙে মোস্তাফিজুর রহমান (৩০) নামে এক শিক্ষক নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দেয়াল ভেঙে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে মোস্তাফিজুর গুরুতর আহত হন।
পরবর্তীতে সহকর্মীরা তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসক সন্ধ্যা ৭টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, “নির্মাণাধীন বাউন্ডারি দেয়াল ভেঙে মোস্তাফিজুর গুরুতর আহত হন। হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বর্তমানে মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে।”
নিহতের পরিচয় ও পটভূমি
নিহত মোস্তাফিজুর রহমান মুরাদপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। তিনি পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার বাসিন্দা এবং তার বাবার নাম সিরাজুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি মুরাদপুর এলাকায় ভাড়া থাকতেন।
নিহতের সহকর্মী আবুল হোসেন জানান, “আমরা কয়েকজন শিক্ষক ওই বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন বাউন্ডারি দেয়ালের কাজ দেখাশোনা করছিলাম। হঠাৎ দেয়াল ভেঙে পড়ে মোস্তাফিজুরের উপর।”
নিহতের ভাতিজা শরিয়তুল্লাহ বলেন, “আমাদের পরিবারের জন্য এটি এক অতি শোকের দিন। তিনি খুব সহমর্মী ও দায়িত্বশীল শিক্ষক ছিলেন।”
দুর্ঘটনার স্থান ও পরিস্থিতি
মুরাদপুর এলাকায় বিদ্যালয়টি একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত। বর্তমানে বিদ্যালয়ের বাউন্ডারি দেয়ালের কাজ চলছিল, যা দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দেয়ালটি নির্মাণের সময় পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থার অভাব ছিল।
বিদ্যালয় প্রশাসন এবং স্থানীয়রা বর্তমানে দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন। তারা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনা রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পুলিশ ও প্রশাসনের পদক্ষেপ
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের কর্মকর্তারা নিহতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, “আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি এবং যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করা হবে।”
বিদ্যালয় প্রশাসনও ঘটনাস্থলে তদন্তকারী দল পাঠিয়েছে। তারা জানিয়েছে যে নির্মাণকাজের সময় যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব ঘটেছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
প্রত্যক্ষদর্শী এবং স্থানীয়রা এই দুর্ঘটনার ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। একজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, “এ ধরনের নির্মাণ কাজের সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকলে ভবিষ্যতে আরও বিপজ্জনক ঘটনা ঘটতে পারে।”
শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা দুর্ঘটনায় আহত শিক্ষককে নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তারা আশা প্রকাশ করেছেন যে, প্রশাসন ভবিষ্যতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকে বিশেষ মনোযোগ দেবে।
গত কয়েক বছরে রাজধানীতে বিদ্যালয় ও অন্যান্য নির্মাণাধীন স্থানে দুর্ঘটনা ঘটার ঘটনা বেশ বেড়েছে। বিশেষ করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকা বা দুর্বল থাকার কারণে শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা বিপদে পড়ছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নির্মাণ কাজের সময় যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নেওয়া হলে এমন দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। তারা প্রশাসনকে সতর্ক করেছেন যে, ভবিষ্যতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জনবসতিপূর্ণ এলাকায় নির্মাণকাজে কড়া নিরাপত্তা প্রয়োজন।
বিশ্লেষণ ও প্রভাব
নিহতের মৃত্যুর ফলে বিদ্যালয় সম্প্রদায়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শিক্ষার্থীরা তাদের প্রিয় শিক্ষকের অভাব অনুভব করছে। শিক্ষকমণ্ডলীও শোকাহত এবং প্রশাসনের প্রতি আরও শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছেন।
নির্মাণ কাজে নিরাপত্তা মানদণ্ড নিশ্চিত করা না হলে ভবিষ্যতে আরও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এজন্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক হতে হবে এবং নিরাপত্তা বিধি কঠোরভাবে পালন করতে হবে।
সংক্ষিপ্তসার
কদমতলীর এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা শিক্ষা ও নির্মাণ খাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার গুরুতর অভাবের চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে। মোস্তাফিজুর রহমানের অকালমৃত্যু শোকের পাশাপাশি সকলকে সতর্ক করেছে যে নির্মাণকাজের সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
ভবিষ্যতে প্রশাসন এবং বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে যাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হয়।
এম আর এম – ১৩০০,Signalbd.com