আঞ্চলিক

জাকসু নির্বাচন বর্জনের পর ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল

বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাত সোয়া নয়টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাকসু) ক্যাম্পাসে ছাত্রদল বিক্ষোভ মিছিল করেছে। মিছিলটি শুরু হয় নতুন কলাভবনের সামনে থেকে এবং চলে জাকসু নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ের সামনের সড়ক দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর পর্যন্ত।

ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা মিছিল চলাকালে ‘বয়কট বয়কট, জাকসু বয়কট’, ‘প্রহসনের জাকসু, বয়কট বয়কট’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। তারা অভিযোগ করেছেন যে, নির্বাচন পরিচালনায় বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে ফলাফল প্রভাবিত করা হয়েছে।

নির্বাচন বর্জনের কারণ

ছাত্রদলের এক নেতা অভিযোগ করেন, প্রায় ১২ হাজার ভোটারের বিপরীতে ১৫–১৭ হাজার ব্যালট ছাপানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই অতিরিক্ত ব্যালট সরবরাহ করেছেন প্রতিষ্ঠিত জামায়াত নেতা। এছাড়া, ইসলামী ছাত্রশিবির ও ছাত্রী সংস্থা এই ব্যালট পেতে পোলিং এজেন্টদের মাধ্যমে সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছে এবং কারচুপি করেছে।

নির্বাচন চলাকালীন দুই ঘণ্টা ধরে পোলিং এজেন্টদের বাধা দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে নারী হলে, কোনও পোলিং এজেন্টকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। জাহা নারা ইমাম, ফজিলাতুন্নেছা, রোকেয়া ও নজরুল হলে মব সৃষ্টি করে পোলিং এজেন্টদের ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষককে পিছনের পরিকল্পনায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি দীর্ঘদিন ধরেই তীব্র। বিশেষ করে জাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তেজনা লক্ষ্য করা যায়। অতীতেও ভোট কারচুপি, ভোটারদের বাধা প্রদান এবং অরাজকতা তৈরি করার অভিযোগে মিছিল, বিক্ষোভ এবং বয়কটের ঘটনা ঘটেছে।

ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির ও অন্যান্য সংগঠন প্রায়ই ভোট প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের অভিযোগ করেছে। এতে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পায় এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়।

মিছিলে ছাত্রদলের বক্তব্য

ছাত্রদলের নেতা-নেত্রীদের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে, তারা নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। তারা অভিযোগ করেছেন যে, কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী ভোট প্রক্রিয়ায় অনিয়ম করেছে।

এক নেতা বলেন, “আমরা ভোটের অধিকার রক্ষা এবং স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্যই এই মিছিল করেছি। অবৈধ ব্যালট ও পোলিং এজেন্টদের বাধা দেওয়ার ঘটনা ক্ষমার্য নয়।”

ছাত্রদল দাবী করেছে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়া হলে তারা ভবিষ্যতে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত।

প্রভাব ও বিশ্লেষণ

মিছিল ও বিক্ষোভের ফলে ক্যাম্পাসে অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষার্থীরা ক্লাস, পরীক্ষা ও গবেষণার কাজের মধ্যে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভোট কারচুপি ও পোলিং এজেন্টদের বাধা শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষের জন্ম দিচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে, কিন্তু রাজনৈতিক চাপ ও ছাত্রদলের দাবি মেনে নিতে হবে। অস্বচ্ছতা থাকলে ভবিষ্যতের নির্বাচন আরও উত্তপ্ত হতে পারে।

প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলেছে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মিছিল শান্তিপূর্ণ রাখতে পুলিশ এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মোতায়েন করা হয়েছে। তারা আশ্বাস দিয়েছে যে, ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে এবং শিক্ষার ক্ষতি না হয় তা দেখবে।

অতিরিক্ত ব্যালট ও ভোট প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের অভিযোগ তদন্তের আওতায় আনা হতে পারে। প্রশাসন আশা করছে, সমস্ত পক্ষ সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করবে।

বিশেষজ্ঞ মতামত

রাজনীতি বিশ্লেষক ড. রাকিব হাসান মন্তব্য করেন, “ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধির মূল কারণ ভোট প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার অভাব। ছাত্রদলের বিক্ষোভ একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি কার্যকর সমাধান না দেয়, তবে উত্তেজনা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।”

অন্যদিকে শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ড. সুলতানা আক্তার বলেন, “ছাত্ররাজনীতি এবং নির্বাচনের মধ্যে ভারসাম্য রাখা জরুরি। শুধুমাত্র মিছিল বা বিক্ষোভ নয়, সংলাপ ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান জরুরি।”

জাকসু নির্বাচন বর্জনের পর ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি করেছে। ভোট কারচুপির অভিযোগ এবং পোলিং এজেন্টদের বাধা শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি করেছে।

প্রশাসনের দায়িত্ব রয়েছে পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা এবং স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করা। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, ভবিষ্যতের নির্বাচনে শিক্ষার্থীরা কি স্বাভাবিকভাবে অংশ নেবে, নাকি আরও বিক্ষোভ ও আন্দোলনের মুখোমুখি হবে?

এম আর এম – ১২৯৬,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button