আঞ্চলিক

দক্ষ ইলেকট্রিশিয়ান হওয়ার স্বপ্ন, কিন্তু সড়কে হারালেন জীবন

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে আজ বৃহস্পতিবার সকাল দশটার দিকে একটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় দুই তরুণের প্রাণ হারাল। ফেনী-নোয়াখালী মহাসড়কের দুর্গাপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকার সুরের পোল নামক স্থানে একটি দ্রুতগতির ট্রাক তাদের মোটরসাইকেলকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মো. ইমন (২০) নামের এক তরুণের। আর তার বন্ধু নুর হোসেন ওরফে রিফাত (২০) হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান।

স্বপ্ন ছিল বিদেশে ক্যারিয়ার গড়ার

ইমন ও নুর হোসেন দক্ষ ইলেকট্রিশিয়ান হতে চেয়েছিলেন। স্থানীয়ভাবে ইলেকট্রিকের কাজ শিখছিলেন তারা। তাদের লক্ষ্য ছিল দেশের বাইরে গিয়ে আরও ভালো ক্যারিয়ার গড়ে সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা আনা। পরিবার ও বন্ধুদের জন্য তারা যে স্বপ্ন দেখে চলছিলেন, তা আজ একটি ট্রাজেডিতে রূপ নিল।

নুর হোসেনের বড় ভাই রাকিব জানালেন, “ইমন ও নুর হোসেন বন্ধু। তারা একসাথে ইলেকট্রিকের কাজ শিখছিল। আজ সকালেই তারা বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে কাজের জন্য চৌমুহনীর দিকে যাচ্ছিল। পথে একটি দ্রুতগতির ট্রাক তাদের মোটরসাইকেলকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এই দুর্ঘটনায় দুইজনেই প্রাণ হারায়।”

দুর্ঘটনার স্থান ও ঘটনার বিবরণ

ফেনী-নোয়াখালী মহাসড়ক, যা সারা অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রান্সপোর্ট রুট, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য ইতিমধ্যেই পরিচিত। বিশেষ করে সড়কের সুষম প্রশস্তি না থাকা এবং যানবাহনের দ্রুতগতি এই ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হয়ে থাকে।
স্থানীয়রা জানান, ট্রাক চালক দুর্ঘটনার পর গাড়ি ফেলে পালিয়ে যান। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিদর্শন করেছে।

চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোবারক হোসেন ভূঁইয়া বলেন, “দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। নিহতদের পরিবার অভিযোগ দায়ের করলে, ট্রাক চালকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

দুই পরিবারের শোক ও স্থানীয় প্রতিক্রিয়া

নিহত ইমনের বাবা মো. খুরশিদ আলম ও নুর হোসেনের পরিবার গভীর শোকে নেমে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, “এই দুই যুবক খুবই শ্রমমুখী এবং সৎ ছিল। তাদের মৃত্যু এলাকায় একটি শূন্যতার সৃষ্টি করেছে।”
স্থানীয়রা আরও জানিয়েছেন, মহাসড়কটি যথেষ্ট বিপজ্জনক, বিশেষ করে স্কুল-কলেজের ছাত্র ও চাকরিজীবী কর্মীদের জন্য। দ্রুতগতির যানবাহন নিয়ন্ত্রণের অভাবে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে।

সড়ক দুর্ঘটনা: বিস্তৃত প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিদিনই প্রায়শই ঘটে। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ও জেলা মহাসড়কে ট্রাক, বাস ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (BRTA) রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশে প্রায় ৬ হাজার ৫০০ জন সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই ছিল দ্রুতগতির ট্রাক এবং মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “মোটরসাইকেল চালক ও ট্রাক চালকদের প্রশিক্ষণ এবং মহাসড়কের অবকাঠামোর উন্নয়ন ছাড়া এই ধরনের দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। পর্যাপ্ত সাইনবোর্ড, স্পিড ব্রেকার এবং পুলিশি নজরদারি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সাবধানতার আহ্বান

নিহতদের পরিবার ও স্থানীয় সমাজসেবা সংস্থাগুলো আহ্বান জানিয়েছে যে, দ্রুতগতির যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ এবং সড়ক নিরাপত্তার জন্য শক্তিশালী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তারা আশা করছেন, স্থানীয় প্রশাসন মহাসড়কে আরও সতর্কতা ব্যবস্থা নেবে।

বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, মোটরসাইকেল চালকরা হেলমেট ব্যবহার নিশ্চিত করবেন, রাতের বেলা রিফ্লেক্টিভ জ্যাকেট পরিধান করবেন এবং কোনো পরিস্থিতিতেই দ্রুতগতির ট্রাকের কাছে ওভারটেকের চেষ্টা করবেন না।

স্থানীয় ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া

দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো পরিবারকে সহায়তা প্রদান করেছে। স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা শোক প্রকাশ করেছে এবং সড়ক নিরাপত্তার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছে।

একজন স্থানীয় বাসিন্দা বললেন, “যদি সড়ক নিরাপত্তা আরও কঠোর হতো, হয়তো এই দুই যুবকের জীবন রক্ষা করা যেত। আমাদের সকলের দায়িত্ব সচেতন থাকা।”

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে আজকের এই দুর্ঘটনা শুধু দুই পরিবারের জন্য নয়, পুরো স্থানীয় সমাজের জন্য একটি শোকের বার্তা। দক্ষ যুবকদের স্বপ্ন, পরিবারকে সাহায্য করার ইচ্ছা, এবং দেশের উন্নয়নে অবদান রাখার আকাঙ্ক্ষা, সবই এক মুহূর্তে শেষ হয়ে গেল।
এ ধরনের ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, সড়ক নিরাপত্তা ও সচেতনতা কোনো বিকল্প নয়। প্রতিটি প্রাণ মূল্যবান।

MAH – 12762,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button