পুকুরে ধসে পড়ল শ্রেণিকক্ষের মেঝে, অল্পের জন্য রক্ষা

বগুড়ার আদমদীঘিতে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণিকক্ষের মেঝে ধসে পড়ে পাঁচ শিক্ষার্থী পুকুরে পড়ে যান। অল্পের জন্য প্রাণহানি এড়ানো সম্ভব হয়। ঘটনাটি বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত দুর্বলতার দিকে আবারও জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
ঘটনার বিবরণ
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আদমদীঘির ছাতিয়ানগ্রাম ইউপির বাগবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণির কক্ষে এই দুর্ঘটনা ঘটে। শ্রেণিকক্ষের মেঝে হঠাৎ ধসে পড়ে পাঁচ শিক্ষার্থী পুকুরে পড়ে যান। স্থানীয়রা শিক্ষার্থীদের তাড়াহুড়ো করে উদ্ধার করেন।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার রুহুল আমিন জানান, খবর পেয়ে দ্রুত বিদ্যালয়ে গিয়ে মেঝে ধসে যাওয়া কক্ষটি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া স্থানীয়দের অভিযোগ ও তথ্য সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নোট করা হয়েছে।
প্রধান শিক্ষকের ভূমিকা ও বিদ্যালয়ের অবস্থা
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামনাথের অবহেলা এবং দায়িত্বশীলতার ঘাটতি এই দুর্ঘটনার মূল কারণ। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর থেকে তিনি বিদ্যালয় পরিচালনায় উদাসীন ছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রধান শিক্ষক বরাদ্দকৃত অর্থের ব্যবহার নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কোনো পরামর্শ না করে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতেন। অবকাঠামো রক্ষায় প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হয়নি। প্রধান শিক্ষক স্বীকার করেছেন, তিনি কিছু বরাদ্দ পেয়েছিলেন, কিন্তু স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা না করেই তা ব্যবহার করেছেন এবং এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
পুকুরের ওপর শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের ঝুঁকি
বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণিকক্ষটি পূর্বে পুকুরের ওপর নির্মিত হয়েছিল। সম্প্রতি শুধু উত্তর পাশে গাইড ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। মেঝের পুরাতন অবস্থা এবং অতিরিক্ত ওজনের কারণে মেঝে ধসে পড়ার ঝুঁকি ছিল। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, স্কুলের অবকাঠামো পরীক্ষা ও নিয়মিত সংস্কার না করার ফলে এ ধরনের দুর্ঘটনা পুনরায় ঘটতে পারে।
শিক্ষার্থীদের প্রভাব
দুর্ঘটনায় যে পাঁচ শিক্ষার্থী পুকুরে পড়ে যান তারা অল্পের জন্য গুরুতর আহত হননি। স্থানীয়রা তাদের নিরাপদে উদ্ধার করেন। তবে এই ধরনের ঘটনা শিশুদের মধ্যে মানসিক আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারে। বিদ্যালয় ও পরিবারকে শিশুদের মানসিক সহায়তা দিতে হবে যাতে তারা নিরাপদ বোধ করতে পারে।
প্রশাসনের পদক্ষেপ
উপজেলা শিক্ষা অফিস খবর পেয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। দুর্ঘটনার পর ওই শ্রেণিকক্ষটি বন্ধ করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অন্যান্য শ্রেণিকক্ষের অবকাঠামো পরীক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের লক্ষ্য, ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত দুর্বলতা চিহ্নিত করে নিয়মিত সংস্কার কার্যক্রম না করা হলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভবিষ্যতের সতর্কতা
বিদ্যালয়ের অবকাঠামো রক্ষার জন্য নিয়মিত তদারকি, সংস্কার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। স্থানীয় প্রশাসন ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের অবশ্যই জরুরি সংস্কার কার্যক্রম শুরু করতে হবে।
পরিশেষে
বগুড়ার এই দুর্ঘটনা শিশু শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার প্রতি বিদ্যালয় ও প্রশাসনের দায়িত্বের গুরুত্ব আবারও তুলে ধরেছে। প্রধান শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীলতার অভাবের কারণে এমন দুর্ঘটনা ঘটে। ভবিষ্যতে পুনরায় এমন দুর্ঘটনা এড়াতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
“পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ভবিষ্যতের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ভর করছে প্রশাসনের তৎপরতার ওপর।”
এম আর এম – ১২৮৪,Signalbd.com