আঞ্চলিক

জাকসু নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে সেনাবাহিনী: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার বিকেলে এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। আগামী বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ঘোষণা

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২টি ফটক ও ক্যাম্পাসজুড়ে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ১০ সেপ্টেম্বর দুপুর থেকে ১১ সেপ্টেম্বর নির্বাচনের দিন পর্যন্ত প্রায় ১২০০ পুলিশ সদস্য পোশাকে ও সাদা পোশাকে ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন।

ভোটকেন্দ্র ও হলে দায়িত্বে থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী। এছাড়া নির্বাচনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকবেন দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ঢাকা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল। সেনাবাহিনী ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করবে এবং প্রয়োজনবোধে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে কার্যক্রমে অংশ নেবে।

একজন নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, “সেনাবাহিনী উপস্থিত থাকায় নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু হবে। প্রয়োজনে তারা ভোটকেন্দ্রে তৎপরতা বজায় রাখবেন।”

ভোটগ্রহণ ও প্রক্রিয়ার বিস্তারিত

এবারের নির্বাচনে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ২১টি হলের ২২৪টি বুথে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ১০টি ছাত্রী হল ও ১১টি ছাত্র হল রয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে থাকবেন একজন রিটার্নিং কর্মকর্তা, ৬৭ জন পোলিং অফিসার ও ৬৭ জন সহকারী পোলিং অফিসার।

ভোটাররা কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে মোট ৪০টি ব্যালটে ভোট দেবেন। বিশেষ ওএমআর মেশিনে ভোট গণনা করা হবে। সিনেট হলে বসানো বড় স্ক্রিনে সব হলের ভোট পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং প্রতি ঘন্টায় ফলাফল ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রদর্শিত হবে।

প্রার্থী সংখ্যা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা

বিভিন্ন পদে মোট ১৭৮ জন প্রার্থী চূড়ান্তভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ৯ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৯ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে ৬ জন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

নির্বাচন কমিশনার জানান, প্রার্থীদের নিরাপত্তা ও ভোট প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য সব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

পূর্বনির্বাচন নিরাপত্তা ব্যবস্থা

আগের নির্বাচনে ক্যাম্পাসে সহিংসতা ও গোলযোগের ঘটনা ঘটার কারণে এইবারের নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা ও সেনাবাহিনী যৌথভাবে দায়িত্ব পালন করবে।

নির্বাচন কমিশনার বলেন, “আমরা চাই যে, ভোটাররা নিরাপদে এবং নিরপেক্ষভাবে তাদের ভোট দিতে পারে। প্রতিটি ভোট গণনা সতর্কতার সঙ্গে সম্পন্ন করা হবে।”

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনীর উপস্থিতি ছাত্র ও কর্মকর্তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করছে। অনেক শিক্ষার্থী মন্তব্য করেছেন, “সেনাবাহিনী থাকায় নির্বাচন আরও শান্তিপূর্ণ হবে এবং কোনো প্রকার জটিলতা এড়ানো সম্ভব হবে।”

কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, এটি নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে প্রার্থীদের মধ্যে শান্তিপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা সম্ভব হবে।

বিশেষজ্ঞ মন্তব্য

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, সেনাবাহিনীর স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া এক ধরনের নিরাপত্তা জোরদারক ব্যবস্থা। এটি নির্বাচনের সময় সম্ভাব্য জটিলতা ও অনিয়ম রোধে কার্যকর হবে।

একজন প্রশাসনিক বিশেষজ্ঞ বলেন, “শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু ভোট পরিচালনার জন্য এই ধরনের যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ভবিষ্যতে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের জন্যও দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।”

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ায় নির্বাচন প্রক্রিয়া নিরাপদ ও সুষ্ঠু করার প্রচেষ্টা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ভোটারদের নিরাপত্তা, প্রার্থীদের স্বচ্ছ প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং নির্বাচন কমিশনের তদারকি সকলেই এই ব্যবস্থার সুবিধা পাবেন।

এম আর এম – ১২৭৮,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button