ডাকসুর ফলাফল ঘিরে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা, সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন পরবর্তী ভোট গণনা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা কাবু করেছে। ভোটের দিন থেকে ওঠা অভিযোগগুলো গণনার সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় নানা কেন্দ্র ও আশপাশে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। পরিস্থিতির আশঙ্কায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করেছে।
ঘটনা ও ভোট গণনার চিত্র
বিকালে ভোটগ্রহণ সরকারি সময়ে শেষ হওয়ার পর বিভিন্ন কেন্দ্রে গণনা শুরু হয়। ঢাবি ক্লাব, টিএসসি, কার্জন হল, শামসুন্নাহার হল ও অন্যান্য বড় কেন্দ্রে সমর্থক ও পর্যবেক্ষকদের সমাগম লক্ষ্য করা গেছে। কিছু কেন্দ্রে গণনার সময় প্রযুক্তিগত ত্রুটি যেমন লাইট বন্ধ থাকা ও কাগজপত্র পুনর্গঠনজনিত কারণে গণনা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। কেন্দ্রগুলোর বাইরে সমর্থকদের সমাবেশ এবং কিছু ক্ষেত্রে স্লোগান উথ্থান ঘটেছে। অনেকে অভিযোগ করেছেন যে তাদের পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে, ফলে গণনা পর্যবেক্ষণে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। রিটার্নিং কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন অধিকাংশ কেন্দ্রে গণনা শান্তিপূর্ণভাবে চলছে, তবু কয়েকটি সংবেদনশীল কেন্দ্রে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
গত কয়েক দফায় ছাত্রসংসদ নির্বাচনে কেন্দ্রভিত্তিক বিতর্ক ও অভিযোগ উঠেছে। পোলিং এজেন্টের প্রবেশাধিকার, গণনা প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও সরঞ্জামগত ত্রুটি—এসব কারণেই পূর্বে আস্থা সংকট দেখা গিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন পরিচালনাকারী কমিটি এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আগে থেকেই সতর্কতার নির্দেশ দিয়েছিল। তবু অভিযোগ ও অনিশ্চয়তার কারণে এইবারও পরিস্থিতি উত্তেজনাময় হয়ে উঠেছে এবং গণনা-পর্বে নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন বাড়ছে।
প্রার্থী ও অঙ্গসংগঠনের প্রতিক্রিয়া
গণনা চলাকালে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বাম ঐক্যসহ বিভিন্ন প্যানেলের নেতারা একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ-প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছেন। কেন্দ্রগুলোর বাইরে মিছিল করা, স্লোগান দেওয়া ও কখনও কখনও কেন্দ্র ঘিরে অবস্থান করা দেখা গেছে। ছাত্রদল মনোনীত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেছেন, তাদের এজেন্টদের পর্যবেক্ষণে বাধা দেওয়া হলে তারা ফলাফল মানতে পারবে না। শিবির সমর্থিত কিছু প্রার্থী সাদিক কায়েম গণনা পর্যবেক্ষণের দাবি জানিয়েছেন। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে—টিএসসি, শাহবাগ মোড়, নীলক্ষেত ও দোয়েল চত্বরে—সমাবেশ লক্ষ্য করা গেছে। রিটার্নিং কর্মকর্তারা অভিযোগ যাচাই করে সমাধানের চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি ও পদক্ষেপ
ফলাফল ঘোষণার আগে ক্যাম্পাস ও আশপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ ও রমনা বিভাগের কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে জনসমাগম ও উত্তেজনা কমানোর লক্ষ্যে টহল বাড়ানো হয়েছে এবং সন্দেহভাজন যানবাহনে তল্লাশি চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীও প্রবেশপথ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তৎপর রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, অশান্তি দেখা দিলে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অধিকার রক্ষা করবে। প্রশাসন ও পুলিশ একযোগে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে বলে জানানো হয়েছে।
ক্যাম্পাস জীবনে প্রভাব
ভোট ও গণনা-সংক্রান্ত উত্তেজনার কারণে শিক্ষাঙ্গনজুড়ে গতি স্তব্ধ হচ্ছে। লাইব্রেরি, পাঠাগার ও অনুষদীয় কার্যক্রমে বিরতি পরিলক্ষিত হয়েছে। কিছু হলে আবাসিক শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাজনিত কারণে চলাচলে সীমাবদ্ধতা অনুভব করেছেন। পরীক্ষা বা অফিসিয়াল কার্যক্রমে প্রভাব পড়ায় অনেক শিক্ষার্থী উদ্বিগ্ন এবং নিরাপদ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি তুলেছেন।
পরিসংখ্যান ও তুলনামূলক চিত্র
এবারের ডাকসু নির্বাচনে শতাধিক কেন্দ্র ও কয়েকশো বুথে ভোট প্রদান হয়েছে। গত কিছু নির্বাচনের তুলনায় অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেড়েছে; ফলে বড় বড় কেন্দ্রে মনোযোগ এবং তৎপরতা বেশি দেখা গেছে। নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত পর্যবেক্ষক মোতায়েন করা হলেও কেন্দ্রভিত্তিক সমস্যাগুলো এখনও সমাধান দাবি করছে। নিরীক্ষকরা বলছেন যে পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার দ্রুত প্রযুক্তিগত সহায়তা ও কেন্দ্র পর্যায়ের তদারকি বাড়ানো প্রয়োজন।
বিশ্লেষণ ও পরামর্শ
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভোটের স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সংখ্যা বাড়ানো, প্রতিটি কেন্দ্রে লাইভ সম্প্রচার ও সিসিটিভি রেকর্ডিং নিশ্চিত করা জরুরি। পোলিং এজেন্ট ও মিডিয়ার অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করলে অভিযোগের মাত্রা কমবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত ও স্বচ্ছ পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের আস্থা পুনরুদ্ধারে সাহায্য করবে। শিক্ষার্থী নেতৃত্বও সংলাপ ও ধৈর্যের আহ্বান জানালে অশান্তি এড়ানো সহজ হবে। দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রবাহ গুজব প্রতিহত করবে এবং জনগণের আস্থা রক্ষা করবে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন।
আইনি প্রতিক্রিয়া ও অনুসরণ
কিছু প্রার্থী ইতোমধ্যেই রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেছেন এবং উচ্চ পর্যায়ে আপিলের কথা ভাবছেন। আইনজীবীরা বলছেন যে নির্বাচন সংক্রান্ত অভিযোগ থাকলে তা নথিভুক্ত করে দ্রুত অনুসন্ধান করা প্রয়োজন, যাতে আইনি প্রক্রিয়া দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন হয়ে বাস্তব সমাধান পাওয়া যায়। স্বচ্ছ অভিযোগ-নথিভুক্তি ও দ্রুত তদন্ত করলে ভবিষ্যতে একইরকম বিতর্ক কমবে।
শেষ কথা
ডাকসুর ফলাফল ঘিরে ক্যাম্পাসে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনা সাময়িক হলেও গভীরে থাকা প্রশাসনিক ও সংগঠনিক সমস্যাগুলো অপসারণ না করা হলে তা পুনরায় সৃষ্টি হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্কতার পাশাপাশি স্বচ্ছতা, প্রযুক্তি ও সমন্বয়ই এই সংকট থেকে উত্তরণে প্রধান হাতিয়ার। আগামী কয়েক ঘন্টার মধ্যে ফলাফল প্রকাশ ও প্রতিক্রিয়ার ধারা নির্ধারণ করবে এই নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রভাব। নিজেদের দাবিগুলো তুলে ধরার ক্ষেত্রে ছাত্রনেতারা শান্তিপূর্ণ পথে অগ্রসর হলে সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধানযোগ্য হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
এম আর এম – ১২৫৪,Signalbd.com