ভোট বানচাল প্রতিরোধে ইউল্যাব কেন্দ্রের গেইটে শিক্ষার্থীদের অবস্থান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভোটের দিন সকাল থেকেই উত্তেজনা দেখা দিয়েছে ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ (ইউল্যাব) কেন্দ্রে। ভোট বানচালের আশঙ্কায় গেইটের সামনে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় সাংবাদিক ও কিছু পোলিং এজেন্টকে কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পরিস্থিতি ঘিরে শিক্ষার্থীদের অবস্থান ভোটের পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি করেছে।
ইউল্যাব কেন্দ্রে ভোটের পরিস্থিতি
সকাল ৮টা থেকে ডাকসুর ভোট শুরু হলেও ইউল্যাব কেন্দ্রে সকাল থেকেই নানা অভিযোগ উঠতে থাকে। ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সমর্থিত জিএস পদপ্রার্থী খায়রুল আহসান মারজান অভিযোগ করেছেন, তাদের পোলিং এজেন্টকে কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। একইভাবে ছাত্রশিবির মনোনীত প্রার্থী এস এম ফরহাদ দাবি করেছেন, সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সাংবাদিকদের প্রবেশ আটকে দেওয়া হয়।
সাংবাদিক প্রবেশে বাধার বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা শহীদুল জাহিদ অবশ্য দাবি করেছেন, “পোলিং এজেন্ট এবং সাংবাদিক উভয়ই কেন্দ্রে আছেন। সকাল থেকেই লাইভ সম্প্রচারও হয়েছে।” তবে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এক ফটোসাংবাদিককে প্রবেশে বাধা দেওয়ার ঘটনা সরাসরি প্রত্যক্ষ করেন উপস্থিত অনেকে।
শিক্ষার্থীদের অবস্থান ও অভিযোগ
গেইটের সামনে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, তাদের ভোটাধিকার সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগে প্রশাসন ব্যর্থ হলে নির্বাচনের ফলাফল প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে। শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, নির্দিষ্ট কিছু প্রার্থীর এজেন্টকে ঢুকতে না দেওয়া আসলে ভোটকে প্রভাবিত করার অংশ।
এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা চাই নিরপেক্ষ নির্বাচন। যদি আমাদের এজেন্টকেই ঢুকতে না দেওয়া হয়, তবে কীভাবে ভোটের স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে?”
ইউল্যাব কেন্দ্রের গুরুত্ব
ইউল্যাব স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রটি ডাকসু নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে শামসুন নাহার হলের প্রায় ৪ হাজার ৯৬ জন শিক্ষার্থী ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত। এত বড় একটি ভোটার গ্রুপের কেন্দ্রকে ঘিরে অনিয়ম বা প্রশ্ন উঠলে তা পুরো নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন করতে পারে।
ডাকসুর ইতিহাসে এ ধরনের বড় কেন্দ্রগুলো সবসময় আলোচনায় থাকে। এবারের নির্বাচনেও ইউল্যাব কেন্দ্র ভোটের স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা ইস্যুতে কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
ডাকসু নির্বাচনে এর আগেও ভোটকেন্দ্র ঘিরে অনিয়ম, সাংবাদিক প্রবেশে বাধা ও এজেন্ট বিতাড়নের অভিযোগ উঠেছিল। ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিভিন্ন কেন্দ্রে একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, যার ফলে নির্বাচনের ফলাফলকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আস্থা সংকট তৈরি হয়।
এবারের নির্বাচনে প্রশাসন স্বচ্ছতা নিশ্চিতের আশ্বাস দিলেও ইউল্যাব কেন্দ্রের ঘটনাগুলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেই পুরনো আশঙ্কা আবারও জাগিয়ে তুলেছে।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
শিক্ষার্থীদের অবস্থান কেন্দ্রের ভেতরকার পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। যারা গেইটের সামনে অবস্থান নিয়েছেন, তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, প্রয়োজনে তারা ভোটকেন্দ্র বন্ধ করে দেবেন।
অন্যদিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা দাবি করেছেন, সবকিছু নিয়মমাফিক চলছে। তিনি বলেন, “আমাদের পর্যবেক্ষকরা উপস্থিত আছেন। ভোট শান্তিপূর্ণভাবে চলছে।” তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ও অবস্থান থেকে বোঝা যাচ্ছে, কেন্দ্রের ভেতরে-বাইরে আস্থার সংকট প্রকট আকারে বিদ্যমান।
নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এ ধরনের ঘটনা ভোটের সুষ্ঠুতা প্রশ্নবিদ্ধ করে। বিশ্লেষকরা বলেন, “যদি সাংবাদিক ও প্রার্থীর এজেন্টকেই ঢুকতে না দেওয়া হয়, তবে ভোটারদের মধ্যে স্বচ্ছতা নিয়ে আস্থা তৈরি হবে না।”
একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “ইউল্যাব কেন্দ্রের এই পরিস্থিতি শুধু ডাকসু নয়, সামগ্রিকভাবে ছাত্ররাজনীতির প্রতি শিক্ষার্থীদের আস্থা ক্ষুণ্ন করতে পারে।”
পরিশেষে
ডাকসু নির্বাচনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইউল্যাব কেন্দ্রকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের অবস্থান ও অভিযোগ নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে। প্রশাসন স্বচ্ছ ভোটের আশ্বাস দিলেও বাস্তব পরিস্থিতি শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে। আগামী দিনে ভোট প্রক্রিয়া কীভাবে এগোয় এবং শিক্ষার্থীদের অবস্থান নির্বাচনকে কতটা প্রভাবিত করে, তা নিয়েই এখন সবার দৃষ্টি।
এম আর এম – ১২৫৩,Signalbd.com