ব্রাজিল থেকে গরুর মাংস আমদানি করা যাবে ১২০-১২৫ টাকায়

বাংলাদেশে গরুর মাংসের দাম নিয়ন্ত্রণ এবং আমিষের চাহিদা পূরণের জন্য ব্রাজিল থেকে কম দামে গরুর মাংস আমদানি করার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হতে যাচ্ছে। ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো দিয়াজ পেরেজ জানিয়েছেন, বাংলাদেশের হালাল সার্টিফিকেট দ্রুত নিশ্চিত হলে ব্রাজিলের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দেশটিতে বিনিয়োগ এবং মাংস আমদানি করতে আগ্রহী হবে।
ব্রাজিলের বিনিয়োগ পরিকল্পনা
রাষ্ট্রদূত ফার্নান্দো জানিয়েছেন, ব্রাজিলের বিভিন্ন মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ কোম্পানি বাংলাদেশে মিট প্রসেসিং কারখানা স্থাপন করতে চায়। এর ফলে শুধু গরুর মাংস আমদানি নয়, স্থানীয় উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ খাতে ব্রাজিলের প্রযুক্তি সহায়তা গ্রহণ করলে দেশি গরু ও দুধ উৎপাদনে বিশেষ সুবিধা আসবে।
আমদানি প্রক্রিয়া এবং হালাল সার্টিফিকেশন
ব্রাজিল থেকে গরুর মাংস আমদানি কার্যক্রম দীর্ঘদিন স্থগিত ছিল। পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে নানা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং হালাল সার্টিফিকেটের অভাবে এটি সম্ভব হয়নি। তবে বর্তমান সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ এবং প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেট নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে আমদানি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় প্রত্যাশা করা হচ্ছে, কেজি প্রতি দাম মাত্র ১২০-১২৫ টাকায় গরুর মাংস বাংলাদেশে আসবে।
বাংলাদেশের বাজারে প্রভাব
গরুর মাংসের কম দামের আমদানি স্থানীয় বাজারে সরবরাহ বাড়াতে সাহায্য করবে। এর ফলে সাধারণ মানুষ সস্তায় গরুর মাংস কিনতে পারবে এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া, মাংসের দাম স্থিতিশীল থাকায় চট্টগ্রাম, ঢাকার মতো বড় শহরগুলোতে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা পরিচালনায় সুবিধা পাবে।
দুই দেশের বাণিজ্য ও সহযোগিতা
রাষ্ট্রদূত ফার্নান্দো আরও জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে ব্রাজিলের বাণিজ্য কেবল মাংস আমদানিতেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি আশা প্রকাশ করেন, চামড়া ও জুতা শিল্পে দুই দেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও উন্নত হবে। আগামী অক্টোবরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ-ব্রাজিল ৩য় ফরেন অফিস কনসালটেশন, যেখানে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।
কৃষি ও প্রযুক্তি সহায়তা
ব্রাজিলের গবাদি পশুর প্রযুক্তি বাংলাদেশে রপ্তানি হলে দেশি খামারিরা নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়াতে পারবে। যেমন, বাংলাদেশে একটি গরু দিনে গড়ে ৫ কেজি দুধ দেয়, যেখানে ব্রাজিলের গরু দিনে ৪৫ কেজি দুধ দিতে সক্ষম। রাষ্ট্রদূতের মতে, প্রযুক্তি সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ খাত আরও প্রতিযোগিতামূলক হবে।
ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ব্রাজিল থেকে আমদানির ফলে স্থানীয় বাজারে সঠিক মূল্যে গরুর মাংস সরবরাহ এবং নতুন ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশাবাদী। এক উদ্যোক্তা বলেন, “ব্রাজিলের গরুর মাংস আমদানি শুরু হলে আমাদের ব্যবসা দ্রুতগতিতে পরিচালনা সম্ভব হবে।”
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
রাষ্ট্রদূত ফার্নান্দো আশা প্রকাশ করেছেন, বাংলাদেশে মাংস আমদানির পাশাপাশি কৃষি, স্বাস্থ্য, প্রতিরক্ষা ও খেলাধুলার খাতে দুই দেশের সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ করে বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নয়নে ব্রাজিল প্রস্তুত সহায়তা দিতে।
পরিশেষে
ব্রাজিল থেকে গরুর মাংস আমদানি শুরু হলে বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা, দাম স্থিতিশীলতা এবং ব্যবসার সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রক্রিয়ার সফল বাস্তবায়ন মূলত সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ, হালাল সার্টিফিকেটের নিশ্চয়তা এবং বেসরকারি খাতের সক্রিয় অংশগ্রহণের ওপর নির্ভর করছে।
এম আর এম – ০৯৫০, Signalbd.com