কুমিল্লায় ভাড়া বাসা থেকে মা-মেয়ের রহস্যজনক মৃত্যু, পুলিশ তদন্তে

কুমিল্লা নগরের কালিয়াজুরি এলাকায় একটি ভাড়া বাসা থেকে মা-মেয়ে তাহমিনা বেগম এবং তার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মেয়ে সুমাইয়া আফরিনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, উদ্ধারকৃত মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনাস্থল ও পুলিশি তদন্ত
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতের দিকে কালিয়াজুরির ওই বাসায় মা-মেয়ের মরদেহ পাওয়া যায়। নিহত মেয়ে সুমাইয়া আফরিন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী।
ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজে এক সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে বাসায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে, যার পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। পুলিশ এ ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছে।
পুলিশ আরও জানায়, ঘটনার রাতেই নিহত তাহমিনার ছেলে বাসায় এসে মা ও বোনকে ঘুমন্ত অবস্থায় পায়। ডাকাডাকির পরও কোনো সাড়া না পেয়ে সন্দেহ হয় এবং পরে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে এবং মৃতদেহে মৃদু আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে, তবে হত্যার প্রকৃত কারণ এখনও নির্ধারণ করা যায়নি।
পরিবারের বিপর্যয় ও প্রতিবেশীদের বক্তব্য
পরিবেশকরা জানিয়েছেন, নিহত তাহমিনা বেগম এবং তার পরিবার স্থানীয় সমাজে শান্তিপূর্ণ এবং সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করতেন। প্রতিবেশীরা বলেন, “এ ধরনের ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। আমরা হতভম্ভ হয়ে গিয়েছি।”
পুলিশি পদক্ষেপ ও তদন্ত
কুমিল্লা মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক তদন্তে হত্যার প্রমাণ এবং কোনো ধরণের খুনের চিহ্ন পাওয়া গেছে। হত্যাকারীকে দ্রুত শনাক্ত করার জন্য তদন্ত চলছে। পুলিশ নিহতদের আত্মীয়-স্বজন এবং আশেপাশের প্রতিবেশীদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, “ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরই আমরা মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্ধারণ করতে পারব। তারপরই হত্যা নাকি আত্মহত্যা, তা স্পষ্ট হবে।”
শিক্ষার্থী এবং নিরাপত্তা বিষয়ক উদ্বেগ
নিহত মেয়ে সুমাইয়া আফরিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উচ্চশিক্ষিত শিক্ষার্থী ছিলেন। এই ধরনের ঘটনা শিক্ষার্থীদের এবং পরিবারের জন্য এক বড় ধাক্কা। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, শিক্ষার্থী ও নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেন পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “শহরে নারী ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা একটি বড় সমস্যা। পুলিশি তৎপরতা বৃদ্ধি, সিসিটিভি মনিটরিং, এবং কমিউনিটি পুলিশিং বাড়ানো প্রয়োজন।”
শহরে বাড়ছে নৃশংসতা, সচেতনতার আহ্বান
কুমিল্লা শহরে সাম্প্রতিক সময়ে এমন ধরনের হত্যার ঘটনা উদ্বেগজনক। বিশেষ করে পরিবারকেন্দ্রিক নৃশংস ঘটনা সমাজে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। নাগরিকদের উচিত শঙ্কাস্পদ পরিস্থিতি পুলিশকে জানানো এবং পারিপার্শ্বিক সতর্কতা অবলম্বন করা।
সাংবাদিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ঘটনা ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হয়েছে। অনেকেই হত্যাকারীর দ্রুত শনাক্তকরণ এবং কঠোর শাস্তি দাবি করছেন।
পরবর্তী পদক্ষেপ
পুলিশ আশা করছে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এবং সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে হত্যাকারীর পরিচয় দ্রুত জানা যাবে। এছাড়াও বাসার আশেপাশের এলাকায় অতিরিক্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
নাগরিকদের সচেতনতা এবং পুলিশি তৎপরতা বাড়ানো ছাড়া এই ধরনের নৃশংস ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব নয়।
MAH – 12692, Signalbd.com