আঞ্চলিক

পবিসের অনুপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কড়া বার্তা দিলো বিদ্যুৎ বিভাগ

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) অনুপস্থিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কর্মস্থলে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গণছুটির নামে কর্মস্থল ছাড়াকে অগ্রহণযোগ্য ঘোষণা করেছে মন্ত্রণালয়।

ঘটনা বিস্তারিত

রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) বিদ্যুৎ বিভাগের এক ঘোষণায় বলা হয়, পল্লী এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ একটি অত্যাবশ্যক পরিষেবা। এই সেবা প্রদানে বিঘ্ন ঘটানো অত্যাবশ্যক পরিষেবা আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই যারা বিনা অনুমতিতে কর্মস্থল ছেড়েছেন, তাদের অবিলম্বে কাজে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিউল্লাহ জানান, “পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে সরকার ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। কিন্তু বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত করলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কয়েকদিন ধরে চার দফা দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছেন। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে আরইবি-পবিস একীভূতকরণ, চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের নিয়মিতকরণ, চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহাল এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ।

এরই ধারাবাহিকতায় রোববার থেকে তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য গণছুটিতে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়।

সরকারের পদক্ষেপ ও প্রতিক্রিয়া

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, কর্মীদের দাবি যাচাই-বাছাই করতে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বদলি ও সাময়িক বরখাস্তদের পুনর্বহালের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, “সরকার কর্মীদের সমস্যার প্রতি সংবেদনশীল। কিন্তু আন্দোলনের নামে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলাকে আমরা সমর্থন করি না। এর পেছনে দেশবিরোধী শক্তির ইন্ধনও থাকতে পারে।”

কর্মবিরতির প্রভাব

গণছুটি ঘোষণার কারণে গ্রামীণ অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে কৃষক, ব্যবসায়ী ও সাধারণ গ্রাহকরা চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন।

অন্যদিকে, বিদ্যুৎ বিভাগের এই কঠোর নির্দেশনায় অনেকে কাজে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে আন্দোলনকারীরা বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের কর্মবিরতি চলবে।

আইনি প্রেক্ষাপট

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, অত্যাবশ্যক পরিষেবা আইন লঙ্ঘন করলে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহকে যেহেতু অপরিহার্য সেবা হিসেবে ধরা হয়, তাই কর্মস্থল ছেড়ে আন্দোলনে যাওয়াটা আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

তবে শ্রম অধিকার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কর্মীদের দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান না হলে এ ধরনের অসন্তোষ পুনরাবৃত্তি ঘটবে।

বিশেষজ্ঞ মতামত

শক্তি খাত বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদ্যুৎ দেশের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। তাই এই খাতে অস্থিতিশীলতা হলে কৃষি থেকে শুরু করে শিল্প, প্রতিটি ক্ষেত্রেই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

তাদের মতে, সরকার ও কর্মীদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা জরুরি। কঠোর পদক্ষেপের পাশাপাশি সহানুভূতিশীল মনোভাব দেখানো হলে সমাধান দ্রুত আসবে।

ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি

এখন নজর থাকবে কর্মীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কর্মস্থলে ফেরেন কি না। যদি ফেরেন, তবে সংকট কাটতে পারে। কিন্তু ফেরত না এলে বিদ্যুৎ সরবরাহে বড় ধরনের বিপর্যয় তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সরকারের দাবি, তাদের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এখন কর্মীরা সহযোগিতা করলে পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে।


পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীদের অনুপস্থিতি দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। বিদ্যুৎ বিভাগের কড়া নির্দেশনার পর এখন দেখার বিষয়, কর্মীরা কাজে ফেরেন নাকি আন্দোলন চালিয়ে যান। তবে সাধারণ মানুষের স্বার্থে উভয় পক্ষের সমঝোতায় সমাধান খুঁজে বের করাই হবে সঠিক পথ।

এম আর এম – ১২২২,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button