
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলায় ঝোপঝাড় থেকে মমতাজ বেওয়া (৬৫) নামে এক বৃদ্ধার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের তিন ছেলে, এক ছেলের স্ত্রী এবং শ্যালিকাসহ মোট পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। দীর্ঘদিনের পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে ধারণা করছে স্থানীয়রা।
ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার
শনিবার দুপুরে উপজেলার হাসানপাড়া গ্রামের একটি ঝোপঝাড়ে স্থানীয়রা মরদেহটি দেখতে পান। গাছের পাতা দিয়ে ঢেকে রাখা অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
প্রাথমিকভাবে নিহতের পরিচয় নিশ্চিত করে জানা যায়, তিনি ওই গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদ ওরফে বাদশা মুন্সির স্ত্রী মমতাজ বেওয়া।
আটককৃতদের পরিচয়
মামলার তদন্তে পুলিশ নিহতের তিন ছেলে—আব্দুল গফুর (৫০), নুর আলম (৪৫) ও সজিব মিয়া (৩৫), নুর আলমের স্ত্রী এবং তার শ্যালিকাকে আটক করেছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, জমিজমা এবং পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে মায়ের সঙ্গে ছেলেদের সম্পর্ক দিন দিন খারাপ হচ্ছিল। এ বিরোধই শেষ পর্যন্ত মর্মান্তিক পরিণতি ডেকে আনতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন।
পারিবারিক দ্বন্দ্ব
প্রতিবেশীদের ভাষ্য অনুযায়ী, স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে জমিজমা নিয়ে মমতাজ বেওয়ার সঙ্গে তার সন্তানদের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। যদিও তিনি জীবদ্দশায় কিছু জমি ছেলেদের নামে লিখে দিয়েছিলেন, তবুও বিরোধ থামেনি।
নিহত বৃদ্ধা মেজ ছেলে নুর আলমের সঙ্গে পুরনো একটি ঘরে বসবাস করতেন। সেখানে প্রায়ই ছেলের সঙ্গে ঝগড়া হতো। এ কারণে তিনি ভয়ে কখনো মেয়ের বাড়ি আবার কখনো প্রতিবেশীদের বাড়িতে রাত কাটাতেন।
শুক্রবার সকাল থেকেই মমতাজ বেওয়া নিখোঁজ ছিলেন। নুর আলমের পরিবার তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি ছড়িয়ে দেয়। এর পরের দিনই তার মরদেহ উদ্ধার হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ ও প্রতিক্রিয়া
এলাকাবাসীর অনেকে অভিযোগ করছেন, পরিকল্পিতভাবেই তিন ছেলে মিলে মাকে হত্যা করেছে। কেউ কেউ দাবি করছেন, শ্বাসরোধে হত্যার পর মরদেহ ঝোপে ফেলে রাখা হয়।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য একরামুল হক বলেন, “মমতাজ বেওয়া ও তার সন্তানদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমিজমা নিয়ে বিরোধ ছিল। এই হত্যাকাণ্ড সেই বিরোধেরই ফল হতে পারে। তবে তদন্তেই প্রকৃত কারণ জানা যাবে।”
পুলিশের বক্তব্য
সাদুল্লাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজউদ্দিন খন্দকার জানান, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তিন ছেলে, ছেলের স্ত্রী এবং শ্যালিকাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “হত্যা নাকি অন্য কোনো কারণে মৃত্যু হয়েছে তা এখনো নিশ্চিত নয়। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।”
বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকদের মতামত
আইন ও সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করছেন, পারিবারিক দ্বন্দ্ব থেকে শুরু করে সহিংসতায় রূপ নেওয়ার প্রবণতা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষত জমিজমা সংক্রান্ত বিবাদের কারণে হত্যা বা খুনের ঘটনা অনেক সময়ই ঘটে থাকে।
একজন অপরাধ বিশ্লেষক বলেন, “পারিবারিক দ্বন্দ্বে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয় পরিবারের দুর্বল সদস্যদের। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে সামাজিক সচেতনতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি জরুরি।”
গাইবান্ধার এই হত্যাকাণ্ড স্থানীয়দের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। মমতাজ বেওয়ার মৃত্যু স্বাভাবিক নাকি হত্যাকাণ্ড—তা নির্ভর করছে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের ওপর। তবে আটক পাঁচজনের সম্পৃক্ততা থাকলে তা বাংলাদেশের পারিবারিক সহিংসতার একটি বড় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
এম আর এম – ১২০৩, Signalbd.com