আঞ্চলিক

জব্দ গাঁজার ওজন কম দেখানোর অভিযোগ, এসআই প্রত্যাহার

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায় এক বস্তা গাঁজা জব্দের ঘটনায় ওজন কম দেখানোর অভিযোগে বনপাড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের এসআই আবদুর রাজ্জাককে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় পুলিশ ও এলাকার মানুষদের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

ঘটনার বিস্তারিত

মধ্যরাতে উপজেলার ছাতিয়ানগাছা মোল্লাপাড়া মোড় থেকে একটি কাভার্ড ভ্যান ও এর চালককে আটক করে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশকে খবর দেন। রাতেই বনপাড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের এসআই আবদুর রাজ্জাক ঘটনাস্থলে এসে ১৪টি প্যাকেট গাঁজা জব্দ করেন। তবে উপস্থিত লোকজনের দাবি, গাঁজার প্রকৃত ওজন ছিল আনুমানিক ৩০ কেজি। কিন্তু পুলিশের প্রাথমিক রিপোর্টে তা মাত্র সাত কেজি দেখানো হয়।

তদন্ত ও অভিযোগ

জব্দকৃত গাঁজার ওজন কম দেখানোর ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি তদন্তে নেমে এসআই আবদুর রাজ্জাককে বনপাড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্র থেকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনে যুক্ত করেন। বড়াইগ্রাম সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শোভন চন্দ্র হোড় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয়দের বর্ণনা

প্রত্যক্ষদর্শী বাসিন্দা আসাদুল ইসলাম জানান, রাত দেড়টার দিকে ভ্যান থেকে দুজন ব্যক্তি একটি বড় পলিথিনের বস্তা নামাচ্ছিলেন। চোর সন্দেহে গ্রামবাসী ধাওয়া করলে তারা বস্তা ফেলে পালিয়ে যান। পরে ভ্যানসহ চালককে আটক করা হয়। অন্য একজন গ্রামবাসী নজরুল ইসলাম বলেন, “আমরা নিজেরাই ১৪টি পলিথিন ব্যাগের গাঁজা গুনে পুলিশকে দেখাই। প্রতিটি ব্যাগ অন্তত দুই কেজির ছিল, কিন্তু মামলায় মাত্র সাত কেজি দেখানো হয়েছে।”

মামলা ও গ্রেপ্তার

গাঁজাসহ আটক ব্যক্তি সায়েম মণ্ডল (৩৪), লালমনিরহাট জেলার সিংগাদার গ্রামের বাসিন্দা। এছাড়া পলাতক দুই আসামি আশরাফ আলী (৪৫) ও ফয়েজুল্লাহ প্রামাণিক (৪৮)-কে আসামি করা হয়েছে। গাঁজাসহ আটকরা আদালতে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে।

নাটোরে আগে বিভিন্ন সময়ে গাঁজা জব্দের ঘটনায় স্থানীয়দের অভিযোগ উঠে আসার পর পুলিশি তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে এই ধরনের ওজন কম দেখানোর ঘটনা নতুন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে ভিডিও এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত তথ্যের কারণে স্থানীয়দের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

স্থানীয় জনগণ এবং সচেতন নাগরিকরা পুলিশের কার্যপ্রণালী নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন ঘটনা পুলিশি স্বচ্ছতা ও দায়িত্ববোধের জন্য ক্ষতিকর। তারা আরও বলেন, পুলিশি কার্যক্রমে সঠিক তথ্য প্রদান অপরিহার্য, বিশেষ করে মাদক জব্দের মতো সংবেদনশীল বিষয়ে।

বিশ্লেষণ

পুলিশি সূত্রে জানা গেছে, এসআই আবদুর রাজ্জাককে পুলিশ লাইনসে যুক্ত করার পাশাপাশি ঘটনার তদন্ত চলছে। এটি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত দায়িত্বে কোনো অনিয়ম নয়, বরং পুলিশের স্বচ্ছতা ও জনসেবার মান উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় প্রশাসন এবং ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা আশা করছেন, তদন্ত শেষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে

নাটোরের বড়াইগ্রামে জব্দ গাঁজার ওজন কম দেখানোর অভিযোগে এসআই প্রত্যাহারের ঘটনা পুলিশি দায়িত্ব ও স্বচ্ছতার গুরুত্ব তুলে ধরেছে। স্থানীয় জনগণ আশা করছে, তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটিত হবে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে।

এম আর এম – ১১৭৩, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button