আঞ্চলিক

ছেলে ও তার স্ত্রী মিলে মারছেন বৃদ্ধ মাকে

Advertisement

সাঁথিয়া উপজেলার হাঁপানিয়া (রামচন্দ্রপুর) গ্রামে এক বৃদ্ধা নারীকে তার পুত্র ও পুত্রবধূ যৌথভাবে নির্যাতন করার ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, বৃদ্ধা নারীকে নিয়মিত শারীরিক নির্যাতন করা হচ্ছিল। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আনতে স্থানীয়রা চেষ্টা করেছেন এবং অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছেন।

নির্যাতনের বিস্তারিত

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মৃত আবুল হোসেনের পুত্র নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী নিয়মিতভাবে বৃদ্ধা মাকে মারধর করতেন। ভুক্তভোগী নারী বৃদ্ধ বয়সে অসহায় হয়ে পড়ায় শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, ঘটনার সময় বৃদ্ধা রীতিমতো আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন।

স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, “নজরুল ও তার স্ত্রী বৃদ্ধাকে মারধর করছিলেন। আমাদের আশেপাশের মানুষরা অনেকবার বিষয়টি দেখেছেন, কিন্তু বৃদ্ধা সাহায্য চাওয়ার ক্ষমতা রাখেন না। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।”

পুলিশি পদক্ষেপ

সাঁথিয়া থানা পুলিশ ঘটনার খবর পেয়ে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রীকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার প্রকৃততা যাচাইয়ের পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পুলিশের মতে, এই ধরনের অপরাধে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। বিষয়টি সামাজিক ও মানবিক গুরুত্বে বিপুল।

বাংলাদেশে পারিবারিক সহিংসতা বিশেষ করে বৃদ্ধ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা বিভিন্ন সময় সংবাদ শিরোনামে এসেছে। বিশেষ করে পরিবারে অর্থনৈতিক বা মানসিক টানাপোড়েন বৃদ্ধদের ওপর নির্যাতনের মূল কারণ হিসেবে ধরা হয়।

সাধারণভাবে দেখা গেছে, বৃদ্ধা বা অসহায় পরিবারের সদস্যরা এ ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়ে সামাজিক ও মানসিক চাপের মুখোমুখি হন। প্রতিটি ঘটনার পরে সমাজ ও প্রশাসনের সচেতনতার অভাব দেখা যায়।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া

ভুক্তভোগী বৃদ্ধার প্রতিবেশীরা এই ঘটনা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তারা প্রশাসনের কাছে দাবি করেছেন, অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।

স্থানীয় মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, “বৃদ্ধদের নির্যাতন সমাজের জন্য লজ্জার বিষয়। প্রশাসনের উচিত কঠোর ব্যবস্থা নেয়া এবং পুনরাবৃত্তি রোধ করা।”

পরিসংখ্যান এবং তুলনা

বাংলাদেশে ২০২৪ সালে এক সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রতি ১০০ পরিবারের মধ্যে প্রায় ১৫ পরিবারে বৃদ্ধ বা নারী সদস্য নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি, আইন প্রয়োগ ও সামাজিক সমর্থনের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞ মতামত

সামাজিক কর্মী ও মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “বৃদ্ধ ও নারীদের প্রতি সহিংসতা রোধ করতে আইন কঠোর করা এবং পরিবারের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। শুধু বিচার করা নয়, একই সঙ্গে সামাজিক শিক্ষা ও মানসিক সহায়তা জরুরি।”

একজন আইনজীবী মন্তব্য করেছেন, “এ ধরনের অপরাধে অভিযুক্তদের দ্রুত বিচার করা সমাজের জন্য সতর্কবার্তা হবে এবং বৃদ্ধ ও অসহায়দের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।”

সাঁথিয়া উপজেলার এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করছে, পরিবারের ভেতরের সহিংসতা সমাজের জন্য বড় হুমকি। প্রশাসন, মানবাধিকার সংস্থা ও স্থানীয় সমাজকে একযোগে কাজ করতে হবে, যাতে বৃদ্ধ ও অসহায় সদস্যদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের সমাজ কি যথাযথভাবে এই ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে সক্ষম?

এম আর এম – ১০৯৯, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button