আঞ্চলিক

অন্তর্বর্তী সরকারের ‘গায়েবানা জানাজা’ পড়লেন শিক্ষার্থীরা

Advertisement

রাজধানীতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ এবং সরকারের প্রতি দাবির অবহেলার প্রতিবাদে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা অন্তর্বর্তী সরকারের ‘গায়েবানা জানাজা’ পড়েছেন। শিক্ষার্থীরা তাদের মূল দাবির বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং সরকারের পদক্ষেপের অভাবে এই অভিনব কর্মসূচি পালন করেছেন।

গায়েবানা জানাজা

বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে চট্টগ্রামের দুই নম্বর গেইট এলাকায় প্রায় আড়াই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন। তারা ঢাকায় পুলিশের হামলার প্রতিবাদে এবং প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলনের তিন দফা দাবির বাস্তবায়ন না হওয়ায় এই কর্মসূচি পালন করেছেন।

বিক্ষোভের শেষপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা সড়কে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে মাগরিবের নামাজের পর গায়েবানা জানাজা আদায় করেন। এই অদ্ভুত ও প্রতীকী কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ ও হতাশার প্রকাশ হিসেবে দেখা যায়।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজারখানেক শিক্ষার্থী এতে অংশ নেন।

ছাত্রদল ও শিক্ষার্থীদের বক্তব্য

চুয়েটের এক ছাত্র সাংবাদিকদের বলেন, “ইন্টেরিম সরকারের জ্ঞানবুদ্ধি লোপ পেয়েছে। তার মানে ইন্টেরিম এখন মৃত। এজন্য আমরা গায়েবানা জানাজা পড়েছি। আমাদের দাবি ছিল তিন দফা। এটি রাজপথে ছাত্রদের রক্ত ঝরার আগ পর্যন্ত।”

তিনি আরও বলেন, “শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরার পর আমাদের দাবি এখন চার দফা। পুলিশকে ছাত্রদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে এবং হামলায় জড়িতদের বিচার করতে হবে। অন্যথায় আমরা আবার লংমার্চ টু যমুনা ঘোষণা করব।”

দাবিসমূহ ও মূল ইস্যু

শিক্ষার্থীরা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নামের আগে ‘প্রকৌশলী’ উপাধি না দেয়ার বিষয়, পদোন্নতি প্রদানে সমতা, নবম ও দশম গ্রেডে স্নাতক প্রকৌশলীদের সুযোগ নিশ্চিতকরণসহ অন্যান্য পেশাগত দাবিতে আন্দোলন করছেন। এই দাবির বাস্তবায়ন না হলে তাদের আন্দোলন আরও তীব্র রূপ নেবে।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণে নগরীর মুরাদপুর, অক্সিজেন সড়ক, চকবাজার ও মেডিকেল সংযোগ সড়কে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়। শত শত যানবাহন আটকে পড়ে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শিক্ষার্থীদের এই ধরনের প্রতিবাদ সরকারি অনীহা বা দেরিতে পদক্ষেপের কারণে আরও বিস্তৃত হতে পারে। তবে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং তাদের দাবির যৌক্তিকতা মেনে নিলে পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান সম্ভব।

সরকারের ভূমিকা ও পরবর্তী পরিকল্পনা

শিক্ষার্থীরা জানান, তারা সরকারের নিকট তিন বা চার দফা দাবি উপস্থাপন করেছেন। তবে অবহেলার কারণে তারা অভিনব কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত স্পষ্ট কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের চুপচাপ থাকা এবং দাবির প্রতি অনীহা পরিস্থিতিকে উত্তেজিত করেছে। সরকারের উচিত দ্রুত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংলাপ স্থাপন ও তাদের দাবির যৌক্তিকতা যাচাই করা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন একটি সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাগত ঐতিহ্য। পুলিশি বাধা বা অবহেলা শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ বাড়াতে পারে। সরকার যদি শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির দিকে মনোযোগ দেয়, তাহলে শিক্ষাক্ষেত্রে ন্যায্যতা ও সমতা নিশ্চিত করা সম্ভব।

শিক্ষাবিদরা বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমন আচরণ অনাকাঙ্ক্ষিত। এটি শিক্ষার্থীদের মানসিক ও সামাজিক অবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

শেষ কথা 

চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশের জন্য অভিনব কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। গায়েবানা জানাজা দিয়ে তারা সরকারের অনীহা ও পুলিশের হামলার প্রতিবাদ করেছেন। শিক্ষার্থীদের দাবির বাস্তবায়ন, পুলিশের ক্ষমা ও জড়িতদের বিচারই পরিস্থিতি শান্ত করার একমাত্র উপায়।

এম আর এম – ১০৭২, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button