আঞ্চলিক

তিন দিনে সাড়ে ৬ লাখ ঘনফুট সাদাপাথর স্বেচ্ছায় জমা দিয়েছেন লোকজন

Advertisement

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে সম্প্রতি লুট হওয়া সাদাপাথরের ব্যাপক ঘটনা ঘটেছে। তবে জেলা প্রশাসনের তৎপরতায় এবং স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় মাত্র তিন দিনে সাড়ে ৬ লাখ ঘনফুট সাদাপাথর স্বেচ্ছায় জমা দেওয়া হয়েছে। এটি স্থানীয় প্রশাসনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি সাফল্য হিসেবে ধরা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম জানান, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে স্থানীয় মানুষজন নিজ খরচে এই পরিমাণ সাদাপাথর প্রশাসনের কাছে তুলে দিয়েছেন। এর বাইরে যৌথ বাহিনী ও টাস্কফোর্সের অভিযানে আরও ১৯ লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়েছে।

স্বেচ্ছায় পাথর জমার প্রক্রিয়া

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত শনিবার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি বার্তা দেওয়া হয়, যাতে তারা লুট হওয়া পাথর স্বেচ্ছায় জমা দিতে পারেন। বার্তায় উল্লেখ করা হয়, যাঁরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাথর জমা দেবেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয়রা শনিবার থেকে নৌকা ও ট্রাক ব্যবহার করে পাথরগুলো সাদাপাথর-সংলগ্ন ভোলাগঞ্জ এলাকায় জমা দিতে শুরু করেন। পুরো প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী এবং শ্রমিকদের সমন্বয়ে কাজ করা হয়েছে।

উদ্ধারকৃত পাথরের পরিমাণ ও প্রতিস্থাপন

জেলা প্রশাসক জানান, মোট সাড়ে ছয় লাখ ঘনফুট পাথর স্বেচ্ছায় জমা দেওয়া হয়েছে। উদ্ধার হওয়া পাথরের মধ্যে ১১ লাখ ঘনফুট সাদাপাথরে প্রতিস্থাপন করা হবে। স্থানীয় প্রশাসন আশা করছেন, এক সপ্তাহের মধ্যে সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে সব পাথর প্রতিস্থাপিত হবে।

পাথর পরিবহনে অন্তত ৪০০ নৌকা ও ৩০০ ট্রাক ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিস্থাপনের কাজে প্রচুর শ্রমিক নিয়োগ করা হয়েছে।

আইনগত ব্যবস্থা ও দোষীদের খুঁজে বের করা

নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ায়, যাঁরা পাথর জমা দেননি, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জেলা প্রশাসক জানান, অভিযানের মাধ্যমে মূল দোষীদের শনাক্ত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছে এবং আরও কয়েকজন গ্রেপ্তারের অপেক্ষায় রয়েছেন।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, সাদাপাথরসহ প্রতিটি স্পটে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। দোষীদের শনাক্তকরণের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে।

প্রশাসনের ও কমিটির ভূমিকা

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি সম্প্রতি সাদাপাথর এলাকা পরিদর্শন করেছে। কমিটির নেতৃত্বে আছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার বিভাগের সচিব জাহেদা পারভীন। কমিটির সদস্যরা স্থানীয় ব্যবসায়ী, এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছেন।

জেলা প্রশাসক নিশ্চিত করেছেন, দুর্ঘটনায় যারা অপরাধী, তারা আইনের আওতায় আনা হবে, এবং নিরীহ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন তা দেখা হচ্ছে।

সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব

সাদাপাথরের লুটের ঘটনায় স্থানীয় পর্যটন ও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। কিন্তু প্রশাসনের উদ্যোগ এবং স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় দ্রুত পাথর জমা দেওয়ায় পর্যটনকেন্দ্রকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

এ ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে প্রশাসনের প্রতি বিশ্বাস এবং দায়িত্ববোধ বাড়িয়েছে। পাশাপাশি, সাদাপাথরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভবিষ্যতে নিয়মিত নজরদারি ও পর্যবেক্ষণ বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

পরিশেষে

মাত্র তিন দিনের মধ্যে সাড়ে ছয় লাখ ঘনফুট সাদাপাথর স্বেচ্ছায় জমা দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং জনগণের সমন্বয়ে এটি সম্ভব হয়েছে। আগামী দিনে, যারা এখনও দোষীদের মধ্যে আছেন, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই উদ্যোগ শুধুমাত্র সাদাপাথরের পুনঃপ্রতিস্থাপন নয়, বরং প্রশাসন ও জনগণের মধ্যে সহযোগিতা ও দায়িত্ববোধের একটি উদাহরণ তৈরি করেছে।

এম আর এম – ১০৫৭, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button