ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষা, অংশ নিতে পারবে কেবল সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

২০২৫ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর। এ বছর শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্যই এই বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করছে সরকার। শিক্ষার্থীদের বাছাই করা হবে প্রথম সাময়িক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে।
পরীক্ষার সময়সূচি ও বিষয়ভিত্তিক বিস্তারিত
২০২৫ সালের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী বৃত্তি পরীক্ষা আগামী ২১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে চলবে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এক সরকারি প্রজ্ঞাপনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এবারের পরীক্ষায় চারটি বিষয়ে ১০০ নম্বর করে মোট ৪০০ নম্বরের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বিষয়গুলো হলো:
- বাংলা
- ইংরেজি
- প্রাথমিক গণিত
- বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং প্রাথমিক বিজ্ঞান (প্রত্যেকটি ৫০ নম্বর করে)
প্রতিটি বিষয়ের জন্য পরীক্ষার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট।
কোন শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারবে?
এই বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে কেবল সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে রয়েছে:
- সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
- সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন প্রাথমিক শাখার শিক্ষার্থীরা
- পিটিআই (প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট) সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
এই তিন ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অন্য কোনো বেসরকারি বা এনজিওভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না।
শিক্ষার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া
বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের প্রথম সাময়িক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বৃত্তি পরীক্ষার জন্য নির্বাচন করা হবে।
একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে। অর্থাৎ, পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদেরকে বিদ্যালয়ের নিজস্ব মূল্যায়নের মাধ্যমে বাছাই করতে হবে।
এই উদ্যোগের লক্ষ্য হচ্ছে মেধাবী শিক্ষার্থীদের নির্বাচন এবং সরকারি পর্যায়ে মানসম্পন্ন শিক্ষাকে উৎসাহিত করা।
বৃত্তি পরীক্ষার উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব
বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘদিন ধরেই প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করে আসছে, যার মূল উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়ানো এবং মেধাবীদের উৎসাহ দেওয়া।
এই বৃত্তি শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ জাগায় এবং প্রাথমিক স্তর থেকেই প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা গড়ে তোলে।
প্রতিবারের মতো এবারও বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত সময় পর্যন্ত মাসিক ভিত্তিতে সরকারি আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে, যা শিক্ষার্থী ও অভিভাবক উভয়ের জন্যই সহায়ক।
পূর্ববর্তী বছরের তুলনা ও পরিবর্তন
গত বছর প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পেরেছিল সরকারি ও বেসরকারি দুই ধরণের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই। কিন্তু চলতি বছর শুধুমাত্র সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এই সুযোগ সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে।
এছাড়া, এবার থেকে প্রথম সাময়িক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী নির্বাচন একটি নতুন সংযোজন। পূর্বে অনেক বিদ্যালয়ে অভ্যন্তরীণ সুপারিশের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী মনোনয়ন করা হতো।
বিশেষজ্ঞ মতামত ও অভিভাবকদের প্রতিক্রিয়া
শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, কেবল সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হলে মেধাবী কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হতে পারে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে।
অভিভাবকদের অনেকে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও কেউ কেউ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, বিশেষ করে মফস্বলের বিদ্যালয়গুলোতে তথ্য জানার ঘাটতির কারণে যোগ্য শিক্ষার্থীরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
সামনে কী?
২০২৫ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নিয়ে এখন থেকেই শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রস্তুতির চাপ বেড়েছে। শিক্ষার্থীদের মাঝে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়াও জরুরি, যাতে কেউ সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয়।
তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে আরও পরিসরে পরিবর্তন আনবে কিনা, নাকি সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যেই সীমিত থাকবে বৃত্তি প্রাপ্তির সুযোগ?
এম আর এম – ০৪১৮, Signalbd.com