পুকুর থেকে শামুক ধরতে গিয়ে দুই বোনের মর্মান্তিক মৃত্যু

নোয়াখালীর সেনবাগে মঙ্গলবার সকালে পুকুরে শামুক ধরার সময় দুই বোন পানিতে পড়ে মারা যান। স্থানীয়রা এবং পুলিশ ঘটনার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। পরিবারের অসহায়তা এবং স্থানীয়দের শোক প্রকাশ করা হয়েছে।
নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ রাজারামপুর গ্রামে মঙ্গলবার সকালে এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। দুই বোন—বিবি মরিয়ম অহি (১০) ও সিদরাতুল মুনতাহা ছহির (৬)—পুকুর থেকে শামুক ধরার সময় পানিতে পড়ে মারা যান। স্থানীয়রা এবং পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিস্তারিত
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে দুই বোন ঘরের পাশের পুকুরে মুখ ধোয়ার জন্য যায়। ঘাটে পৌঁছালে তারা একটি শামুক দেখতে পায়। বড় বোন অহি শামুকটি ধরার জন্য পুকুরে হাত দিয়ে নামলে পানিতে পড়ে যায়। তাকে সাহায্য করতে গিয়ে ছোট বোন ছহিরও পুকুরে পড়ে যায়।
দু’জনকেই অচেতন অবস্থায় স্থানীয় এক চাচা উদ্ধার করে পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে, চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। স্থানীয় সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও এই মুহূর্তটি ধরা পড়ে। সেনবাগ থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুর রউফ জানিয়েছেন, কোনো অভিযোগ না থাকায় মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
পরিবারের প্রতিক্রিয়া
পরিবারের সদস্যরা ঘটনার পর গভীর শোকে নিমগ্ন। নিহত দুই বোন স্থানীয় একটি মাদরাসার ছাত্রী ছিল। বাবা-মা বর্তমানে মানসিকভাবে খুবই দুর্বল অবস্থায় রয়েছেন। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, দুই বোন খুবই সৎ এবং শান্ত স্বভাবের ছিল।
স্থানীয়রা বলেন, “এই বয়সে এমন দুর্ঘটনা আমাদের সবাইকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। পরিবারকে আমরা সব ধরনের সাহায্য করার চেষ্টা করছি।”
স্থানীয়দের অভিজ্ঞতা এবং নিরাপত্তা বিষয়ক মন্তব্য
স্থানীয়রা আরও জানায়, পুকুরটি গভীর এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ইতিমধ্যেই পুকুরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছেন। সেনবাগ থানার পক্ষ থেকে স্থানীয়দের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় একটি নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, “শিশুদের জন্য পানির কাছাকাছি সতর্কতা খুব জরুরি। এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে স্থানীয় কমিউনিটি সচেতন হওয়া প্রয়োজন।”
নোয়াখালীতে শিশুদের পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার ঘটনা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কমেছে না। স্থানীয় সংবাদে দেখা যায়, কয়েকটি দুর্ঘটনার মূল কারণ ছিল পুকুর বা খাল এলাকায় পর্যাপ্ত নজরদারি না থাকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের কাছে পুকুর বা খাল থাকলে বাবা-মায়ের তত্ত্বাবধান অপরিহার্য।
প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ
এই দুর্ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসন এবং সমাজকর্মীরা শিশুদের নিরাপত্তা বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা শুরু করেছেন। শিশুদের জন্য পানির পাশে সতর্ক থাকার নিয়ম এবং অভিভাবকদের তত্ত্বাবধান বৃদ্ধির জন্য একটি কার্যকর কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে শুধু প্রশাসনের উদ্যোগ নয়, পরিবারের সচেতনতা ও স্থানীয় সমাজের সংহত ভূমিকা অপরিহার্য।
সমাপ্তি
দুই বোনের মর্মান্তিক মৃত্যু পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমেছে। পরিবার এবং প্রতিবেশীরা এখনও এই ক্ষতি থেকে উঠতে পারেনি। বিশ্লেষকরা বলছেন, শিশুদের নিরাপত্তা ও পানির কাছে সচেতনতা বৃদ্ধিই এই ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধের একমাত্র উপায়।
এম আর এম – ০৯৫১, Signalbd.com