আঞ্চলিক

বদলে যাচ্ছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার নাম

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার (ডিআইটিএফ) নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে। আগামী বছর থেকে এই মেলার নাম হবে ‘ঢাকা বাণিজ্য মেলা (ডিটিএফ)’। এতে ‘আন্তর্জাতিক’ শব্দটি বাদ দেওয়া হবে। সিদ্ধান্তটি ইপিবির (এক্সপোর্ট প্রসোমোশন ব্যুরো) ১৪৮তম পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে নেওয়া হয়েছে।

নাম পরিবর্তনের পেছনের কারণ

ডিআইটিএফের মূল উদ্দেশ্য ছিল বিদেশি ও দেশীয় ক্রেতা-বিক্রেতাদের সমন্বয়ে একটি আন্তর্জাতিক মানের বাণিজ্য মেলা আয়োজন করা। ১৯৯৫ সাল থেকে এই মেলা আয়োজন করা হচ্ছে, যেখানে বিদেশি প্রতিষ্ঠান সরাসরি অংশগ্রহণ করে পণ্য প্রদর্শন করতেন।

কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, অনেক বিদেশি প্রতিষ্ঠান দূতাবাস বা সরকারি প্রতিনিধি দলের মাধ্যমে অংশগ্রহণ না করে স্থানীয় এজেন্ট বা ব্যক্তির মাধ্যমে অংশ নিচ্ছে। ফলে পণ্যের মান যাচাই করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড বা ম্যানুফ্যাকচারারের সরাসরি উপস্থিতি না থাকায় ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছেন এবং মেলার আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে মেলার নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ইপিবির বৈঠকে নেওয়া অন্যান্য সিদ্ধান্ত

ইপিবির ১৪৮তম পরিচালনা পর্ষদ সভায় আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মেলা ক্যালেন্ডার এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছরের আংশিক মেলা ক্যালেন্ডার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, ‘সোর্সিং বাংলাদেশ ২০২৫’ শীর্ষক একটি স্বতন্ত্র আন্তর্জাতিক সোর্সিং ফেয়ার আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, “সোর্সিং মেলা আয়োজন না করলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশি পণ্যের পরিচিতি বাড়ানো সম্ভব হবে না। দেশের সক্ষমতাও তৈরি হবে না।”

বিরোধ ও সমর্থন

নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্তে পরিচালনা পর্ষদের কিছু সদস্য বিরোধিতা করেছেন। তবে ইপিবি চেয়ারম্যান এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এবং ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন এই সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “প্রতিটি মেলা সম্পর্কে আমাদের একটি বিশ্লেষণ থাকা প্রয়োজন। যেখানে দেশের পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ প্রয়োজন, সেখানে কার্যকরভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে। শুধু অংশগ্রহণ নয়, দেশের উন্নতি এবং ব্যবসা বৃদ্ধি নিশ্চিত করা আমাদের লক্ষ্য।”

নাম পরিবর্তনের প্রভাব

মেলার নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রেতা ও দর্শনার্থীর দৃষ্টি আকর্ষণ কমতে পারে। তবে ইপিবির কর্মকর্তারা মনে করেন, এটি মেলার বিশ্বাসযোগ্যতা ও গুণগতমান বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

তুরস্ক, ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠান ঢাকা বাণিজ্য মেলাতেও অংশ নিতে পারবে। অর্থাৎ, বিদেশি অংশগ্রহণ এখনও থাকবে, তবে মেলার কাঠামো এবং প্রত্যাশার সঙ্গে মানিয়ে নেয়া হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নাম পরিবর্তন একটি কৌশলী পদক্ষেপ যা মেলার মান ও বিশ্বস্ততা পুনঃস্থাপন করবে। দীর্ঘমেয়াদে এটি দেশের রপ্তানিমুখী শিল্প খাত এবং উৎপাদকদের বৈশ্বিক বাজার সম্প্রসারণে সহায়তা করবে।

একই সঙ্গে, সোর্সিং ফেয়ার আয়োজনের মাধ্যমে দেশি পণ্যের আন্তর্জাতিক পরিচিতি বৃদ্ধি পাবে। এটি বিদেশি বিনিয়োগ ও ব্যবসায়িক সহযোগিতার সুযোগও বৃদ্ধি করবে।

ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা

মেলার নতুন নামের অধীনে আগামী বছর থেকে আরও আধুনিক ও গুণগতমানসম্পন্ন আয়োজন করা হবে। ইপিবি বিদেশি প্রতিষ্ঠান ও দূতাবাসের সঙ্গে সমন্বয় বাড়িয়ে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার পরিকল্পনা করছে।

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, “আমাদের লক্ষ্য শুধু মেলা আয়োজন নয়, দেশের পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ, মান উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।”

বিশ্লেষকদের মতে, নাম পরিবর্তনের প্রভাব ও সফলতা নির্ভর করবে মেলার বাস্তবায়ন ও আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণের ওপর।

সংক্ষিপ্তসার

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার নাম পরিবর্তন একটি বড় পরিবর্তন যা দেশের বাণিজ্য ও রপ্তানি খাতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে। নতুন নামের অধীনে মেলার মান ও বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানো হবে, এবং দেশি পণ্যের বৈশ্বিক বাজারে উপস্থিতি শক্তিশালী হবে। তবে এটি কেমন সাড়া ফেলবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ কিভাবে প্রভাবিত হবে, তা ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।

এম আর এম – ০৯৩১, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button