আঞ্চলিক

সেই আলোচিত ম্যাজিস্ট্রেট হলেন সিলেটের জেলা প্রশাসক

Advertisement

সিলেটের নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন প্রশাসনের আলোচিত কর্মকর্তা মো. সারোয়ার আলম। এক সময় র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ভেজালবিরোধী ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে ব্যাপক পরিচিতি পাওয়া এই কর্মকর্তা দীর্ঘদিন পর আবারও আলোচনায় এলেন নতুন দায়িত্বের কারণে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সোমবার (১৮ আগস্ট) এক প্রজ্ঞাপনে এ নিয়োগের ঘোষণা দেয়। সারোয়ার আলম এর আগে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

প্রজ্ঞাপনে নতুন নিয়োগের ঘোষণা

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন-২ শাখা থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, মো. সারোয়ার আলমকে সিলেট জেলার জেলা প্রশাসক হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। এর আগে তিনি উপসচিব হিসেবে কাজ করছিলেন এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন।

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ও সৎভাবে দায়িত্ব পালনের ইতিহাস বিবেচনা করেই তাকে এই গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

আলোচিত ভেজালবিরোধী অভিযানের নায়ক

মো. সারোয়ার আলম সবচেয়ে বেশি পরিচিত র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তার সাহসী কর্মকাণ্ডের কারণে। তিনি প্রায় তিন শতাধিক ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেন, যা দেশব্যাপী ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়।

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান থেকে শুরু করে ভুয়া করোনা টেস্ট, অনিয়মিত হাসপাতাল এবং অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্যের বিরুদ্ধে তার অভিযানগুলো সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে বড় ভূমিকা রাখে।

তার নেতৃত্বে রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাবে পরিচালিত ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান দেশে আলোচিত হয়ে ওঠে। আবার করোনা মহামারির সময় ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয় তার নেতৃত্বে।

বঞ্চনা থেকে পদোন্নতি

তবে সাহসী কর্মকাণ্ডের জন্য পুরস্কৃত হওয়ার পরিবর্তে তিনি অনেক সময় বঞ্চিত হয়েছেন। তিনবার পদোন্নতি না পাওয়া এবং এর প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখা একটি স্ট্যাটাস তাকে বিতর্কিত করেছিল। সেই সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তাকে ‘অসদাচরণ’ উল্লেখ করে তিরস্কার করেছিল।

এরপরও তিনি হাল ছাড়েননি। অবশেষে গত বছরের আগস্টে উপসচিব পদে পদোন্নতি পান। সেই পদোন্নতির এক বছর পরই এবার সিলেটের জেলা প্রশাসক হিসেবে পদায়ন হলো তার।

বিশেষ অভিযানে জনমনে আস্থা

সারোয়ার আলমের পরিচালিত কিছু অভিযান জনমনে বিশেষভাবে দাগ কাটে। বিশেষ করে সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের বাড়িতে পরিচালিত অভিযানে তিনি নেতৃত্ব দেন। সেখান থেকে অস্ত্র, মাদক ও অবৈধ ওয়াকিটকি উদ্ধার হয়। এই অভিযানের পর হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমকে দেড় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

এই ধরনের কঠোর অবস্থানের কারণে সাধারণ মানুষ তাকে ‘সাহসী ম্যাজিস্ট্রেট’ হিসেবে অভিহিত করে।

নতুন দায়িত্বে প্রত্যাশা

সিলেটের মতো একটি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ জেলায় তাকে দায়িত্ব দেওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে। সিলেটের সামাজিক ও রাজনৈতিক মহল আশা করছে, তিনি দুর্নীতি দমন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং নাগরিক সেবা নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।

প্রশাসনের অভ্যন্তরে অনেকেই মনে করেন, সারোয়ার আলমের মতো অভিজ্ঞ কর্মকর্তা সিলেটকে আরও এগিয়ে নিতে সক্ষম হবেন।

পেশাগত জীবনের সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা

২৭তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা মো. সারোয়ার আলম কর্মজীবনের শুরু থেকেই নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। ক্যারিয়ারের শুরুতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করার পর র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ পান তিনি।

পরবর্তীতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে বদলি হলেও তার আলোচিত কর্মকাণ্ডের কারণে তিনি সাধারণ মানুষের কাছে এক ভিন্নমাত্রার কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

সারোয়ার আলমকে ঘিরে আলোচনার কারণ

প্রশাসনে অনেক কর্মকর্তা নিয়ম মেনে চললেও আলোচনায় আসেন না। কিন্তু সারোয়ার আলম তার কাজের ধরণ, দৃঢ়তা এবং ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য বারবার সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের কর্মকর্তারাই প্রশাসনকে জনবান্ধব করে তোলে।

শেষ কথা 

আলোচিত এই ম্যাজিস্ট্রেট এখন সিলেটের জেলা প্রশাসক। জনগণ প্রত্যাশা করছে, তার অতীতের মতো সাহসী ভূমিকা ও জনকল্যাণমূলক উদ্যোগ এখানেও অব্যাহত থাকবে। আগামী দিনে সিলেটবাসীর জীবনমান উন্নয়নে তিনি কীভাবে ভূমিকা রাখেন, সেটিই এখন সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু।

এম আর এম – ০৯২১, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button