চাঁপাইনবাবগঞ্জে পানিবন্দি ৩৫০ পরিবারের পাশে দাঁড়াল জামায়াত

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নে পদ্মা ও মহানন্দা নদীর পানি বৃদ্ধি হলে পানিবন্দি হয়ে পড়া ৩৫০টি পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ জামায়তে ইসলামী। শনিবার এসব পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বন্যার্তদের পাশে জামায়াত
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নে পদ্মা ও মহানন্দা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে এলাকাজুড়ে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পানিবন্দি হয়ে পড়া ৩৫০টি পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ জামায়তে ইসলামী। শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা জামায়াতের আয়োজন এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সহযোগিতায় এসব পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
জামায়াতের নেতারা জানান, তারা ত্রাণ বিতরণ করতে আসেননি বরং তারা বন্যার্ত পরিবারের সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেওয়ার জন্য উপস্থিত হয়েছেন। তারা বলেন, “আমাদের এই সামগ্রীকে ত্রাণ হিসেবে নয়, বরং হাদিয়া হিসেবে গ্রহণ করুন। আপনারা আমাদের ভাই, তাই আমরা আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি।”
বিতরণকৃত খাদ্যসামগ্রীর বিস্তারিত
প্রতি পরিবারের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে ছিল:
- মুড়ি ২ প্যাকেট
- চিড়া ২ কেজি
- গুড় ১ কেজি
- বিস্কুট ৫০০ গ্রাম
- ডাল ১ কেজি
- আলু ৩ কেজি
- স্যালাইন ১০ পিস
এভাবে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে বন্যার্তদের মৌলিক চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি তাদের মনোবলও বৃদ্ধি করা হয়েছে।
নেতাদের বক্তব্য ও সহায়তার উদ্দেশ্য
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়তে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে সূরার সদস্য ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি অধ্যাপক লতিফুর রহমান, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক আবু বকর, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর ও সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোখলেশুর রহমান, সদর উপজেলার সেক্রেটারি আব্দুর রহমান এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম।
নেতারা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা আমাদের ভাইদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এখানে এসেছি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী নূরুল ইসলাম বুলবুল অসুস্থ থাকায় উপস্থিত হতে পারেননি, তবে তিনি বন্যার্তদের প্রতি শুভেচ্ছা ও সমবেদনা জানিয়েছেন।
বন্যার প্রভাব ও স্থানীয় পরিস্থিতি
চাঁপাইনবাবগঞ্জে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বহু পরিবার ঘরবাড়ি ও ফসলের ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে। বিশেষ করে নারায়নপুর ইউনিয়নের অনেক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এবং জীবনযাত্রা খুবই কষ্টকর হয়ে উঠেছে।
স্থানীয়রা জানান, এই ধরনের পরিস্থিতিতে সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের সহায়তা তাদের জন্য এক বিশাল আশ্বাস। খাদ্যসামগ্রী পাওয়া অনেক পরিবারের জন্য তাৎক্ষণিক উপকার হলেও, দীর্ঘমেয়াদী সহায়তার প্রয়োজন এখনও রয়েছে।
পূর্ববর্তী ঘটনা
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নিম্নাঞ্চলগুলি প্রতি বছর বর্ষাকালে বন্যার সম্মুখীন হয়। নদীর পানি বৃদ্ধি এবং বেড়িবাঁধের দুর্বলতা নিয়মিতভাবে সমস্যার সৃষ্টি করে। এর আগে ২০২২ ও ২০২৩ সালে এ ধরনের বন্যার কারণে হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়েছিল এবং জামায়াতসহ স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো মানবিক সহায়তা প্রদান করেছিল।
বিশ্লেষণ ও সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া
স্থানীয়রা জামায়তের এই উদ্যোগকে মানবিক ও সহমর্মিতার উদাহরণ হিসেবে দেখছেন। অনেক পরিবার জানান, “আমরা আশা করেছিলাম কেউ আমাদের পাশে দাঁড়াবে, তবে জামায়াতের এই সহায়তা আমাদের জন্য বড় প্রেরণা। এটি শুধু খাদ্য নয়, আমাদেরকে আশার আলো দিয়েছে।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের সামাজিক সহায়তা শুধু প্রাথমিক চাহিদা পূরণ নয়, বরং স্থানীয় মানুষের মনোবল ও সামাজিক সংহতিও বাড়ায়।
সামনের ধাপ ও আশার বার্তা
জামায়াতের নেতারা জানিয়েছেন, তারা ভবিষ্যতেও বন্যার্তদের পাশে থাকবে এবং নিয়মিতভাবে এই ধরনের সহায়তা অব্যাহত রাখবে। পাশাপাশি তারা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনমতো ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মতো বন্যা প্রবণ এলাকায় স্থানীয় এবং রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর মানবিক উদ্যোগ বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
শেষ কথা
চাঁপাইনবাবগঞ্জের পানিবন্দি পরিবারের পাশে দাঁড়ানো জামায়তের এই উদ্যোগ শুধু খাদ্য সহায়তা নয়, এটি মানবিক সহমর্মিতা এবং সামাজিক সংহতির এক শক্তিশালী বার্তা। সামনের দিনগুলোতে এই ধরনের উদ্যোগ বন্যার্তদের জন্য আশার আলো হতে পারে।
এম আর এম – ০৮৮৭, Signalbd.com