আঞ্চলিক

কোম্পানীগঞ্জের পর এবার টার্গেট জাফলং, হচ্ছে পাথর লুট

Advertisement

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে পাথর লুটের পর এবার নতুন করে টার্গেট হয়েছে জাফলং। বিখ্যাত এই পর্যটন এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে রাতের আঁধারে ও দিনের আলোয় চলছে প্রকাশ্য পাথর উত্তোলন। স্থানীয়রা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে জাফলংয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

জাফলংয়ে পাথর লুটের বর্তমান চিত্র

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জাফলংয়ের জিরো পয়েন্ট ও আশপাশের এলাকা থেকে বড় বড় পাথর কেটে নিয়ে যাচ্ছে পাথরখেকোরা। দিনের বেলাতেও তাদের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে, যদিও বেশিরভাগ সময় রাতের অন্ধকারে অপকর্মটি বেশি ঘটে। ইতোমধ্যেই জিরো পয়েন্টের সৌন্দর্য অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে।

পর্যটকদের অভিযোগ, প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ায় পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। অনেকেই এই অবস্থা দেখে হতাশা প্রকাশ করেছেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ জানিয়েছেন।

কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথরের ঘটনা

এর আগে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে ভয়াবহ পাথর লুটপাট ঘটে, যা দেশের নানা প্রান্তে আলোচনার জন্ম দেয়। প্রকাশ্য দিবালোকে চলা ওই লুটপাটের ফলে পর্যটন কেন্দ্রটি প্রায় মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত শুরু করে এবং একটি নয় সদস্যের দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

স্থানীয়দের মতে, সাদাপাথরের ঘটনার পর থেকেই পাথরখেকোরা নতুন টার্গেট হিসেবে জাফলংকে বেছে নিয়েছে।

প্রশাসনের অবস্থান ও গৃহীত পদক্ষেপ

প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জাফলংয়ে পাথর লুট ঠেকাতে টহল জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের যৌথভাবে নজরদারি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। তবে কিছু অসাধু ব্যক্তি সুযোগ নিয়ে এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে, যাদের চিহ্নিত করে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পরিবেশ ও পর্যটনে সম্ভাব্য প্রভাব

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অনিয়ন্ত্রিত পাথর উত্তোলন জাফলংয়ের নদী তীর ক্ষয়, জৈব বৈচিত্র্য ধ্বংস ও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাসের কারণ হতে পারে। এছাড়া পর্যটন কেন্দ্রের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গেলে পর্যটকের আগমন কমে যেতে পারে, যা স্থানীয় অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

পর্যটক সুমাইয়া রহমান বলেন, “আমি বহুবার জাফলং ঘুরতে এসেছি, কিন্তু এবার এসে দেখি অনেক জায়গা ফাঁকা হয়ে গেছে। সৌন্দর্য হারিয়ে যাচ্ছে দেখে খুব খারাপ লাগছে।”

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, পাথর উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, মাঝে মাঝে অভিযান হলেও দীর্ঘমেয়াদী সমাধান আসছে না।
একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, “পাথর লুটপাট বন্ধ না হলে পর্যটকের সংখ্যা কমে যাবে, এতে আমাদের জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে।”

আইনগত দিক ও শাস্তির বিধান

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করলে জরিমানা ও কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। তবে বাস্তবে এই আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ না হওয়ায় অপরাধীরা বারবার এ ধরনের কাজে জড়াচ্ছে। আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অভিযানের পাশাপাশি নিয়মিত নজরদারি ও সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে।

ভবিষ্যতের করণীয়

বিশ্লেষকদের মতে, জাফলং রক্ষায় সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। এর মধ্যে থাকতে হবে—নিয়মিত আইন প্রয়োগ, প্রযুক্তি ব্যবহার করে পর্যবেক্ষণ, স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করা এবং বিকল্প জীবিকার সুযোগ তৈরি করা।
এছাড়া পরিবেশ ও পর্যটন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করলে দীর্ঘমেয়াদে এ ধরনের অপরাধ রোধ সম্ভব হবে।

সংক্ষিপ্তসার

জাফলং কেবল সিলেট নয়, সমগ্র বাংলাদেশের জন্য একটি গর্বের স্থান। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষা করা সবার দায়িত্ব। অবৈধ পাথর লুট বন্ধে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে এর ক্ষতি আর পূরণ করা যাবে না। এখন দেখার বিষয়—প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কত দ্রুত এবং কার্যকরভাবে এই সংকট মোকাবিলা করতে পারে।

এম আর এম – ০৮৩৯, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button