ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় পাথর মেরে খুন হওয়া ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ হত্যাকাণ্ডের মূল আসামিরা অবাধে ঘুরে বেড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিহতের পরিবার আজ কেরানীগঞ্জ মডেল টাউন এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করে তাদের ভোগান্তির কথা জানান। তারা বলেন, নিরাপত্তাহীনতায় তারা ভীষণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন এবং আশঙ্কায় রয়েছেন।
ঘটনা ও পরিবারের বক্তব্য
গত ৯ জুলাই মিটফোর্ড হাসপাতালের কাছে পাকা রাস্তার ওপর একদল দুষ্কৃতকারী সোহাগকে পাথর ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে পেটানো ও কুপিয়ে হত্যা করে। ঘটনার পর ১০ জুলাই সোহাগের বড় বোন মঞ্জুয়ারা বেগম কোতয়ালি থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে মামলায় অজ্ঞাত আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করা হয়। পুলিশ ইতোমধ্যেই ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
তবে অভিযোগ রয়েছে, মামলার মূল আসামি ও নির্দেশদাতা টিটু এবং তার সহযোগীরা এখনো অবাধে চলাফেরা করছে। সম্প্রতি মিটফোর্ড এলাকার একটি দোকান থেকে তার মোটরসাইকেল চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লেও, তার বিরুদ্ধে এখনো কোনও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সে কারণে নিহতের পরিবার আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
নিরাপত্তাহীনতার ভয় ও পরিবারের মানসিক অবস্থা
সোহাগ হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই তার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে। নিহতের স্ত্রী লাকি বেগম বলেন, “ভয় ও দুশ্চিন্তায় জীবন অতিবাহিত হচ্ছে। পুলিশ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়ায় আমি ও আমার সন্তানরা আশঙ্কায় আছি।” তিনি আরও বলেন, “ঢাকায় ফিরে এসে সন্তানদের নিয়ে বাঁচতে পারবো কিনা জানি না।”
নিহতের বড় বোন মঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, “অসাধু মহল মামলা প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। প্রকৃত দোষীরা এখনও অধরা। আমরা এখনো সুষ্ঠু বিচার পাচ্ছি না।” পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, মামলার এজাহারে আসামিদের নাম বারবার পরিবর্তন করা হচ্ছে এবং কিছু আসামির নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে।
মামলার অস্থিরতা ও পুলিশের ভূমিকা
মামলার এজাহারে কিছু আসামির নাম বাদ দিয়ে অন্যদের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি পরিবার কর্তৃক তীব্রভাবে নিন্দা করা হয়েছে। মামলার বাদী মঞ্জুয়ারা বলেন, “আমাদের অনুমতি ছাড়া পুলিশ মামলার কাগজপত্রে পরিবর্তন করেছে। এ কারণে আমরা বিচারপ্রক্রিয়ায় অবিশ্বাসী।”
কোতোয়ালি থানার ওসি মনিরুজ্জামান মনিরুজ্জামান মনির বলেন, “এজাহার পুলিশ করেনা, বাদী দেন। আমরা যেটা পাই সেটাই মামলা রেকর্ড করি। আসামিদের শনাক্তকরণ ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করে সব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।”
সামাজিক ও মানবিক প্রভাব
সোহাগের ছোট মেয়ে সোহানা এবং ছেলে সোহান আজ বাবা ছাড়া অনাথ। তারা জানায়, “আমরা আমাদের বাবার হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তি চাই। আমরা চাই আর কোনো শিশুর বাবাকে এভাবে মেরেই না ফেলা হোক।” ছোট শিশুদের চোখে শোক আর মুখে বিচার দাবি স্পষ্ট।
পড়শিরা ও স্থানীয়রা জানান, এই হত্যাকাণ্ড পুরো এলাকায় ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই নিরাপত্তার অভাবে রাতে বাড়ির বাইরে বের হতে ভয় পাচ্ছেন। পরিবারটি এখন নিরাপত্তা ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছে।
ভবিষ্যত ও আশা
পরিবারের আশা-আকাঙ্ক্ষা হলো তারা দ্রুত বিচার পাবে এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত হবে। তারা সরকার ও প্রশাসনের প্রতি আবেদন জানাচ্ছে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং মামলাটির ন্যায়বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা যাতে পুনরায় না ঘটে, তার জন্য শুধু বিচার প্রক্রিয়া নয়, পুরো সমাজে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে।
এম আর এম – ০৭৯১, Signalbd.com



