বাংলাদেশ

জুলাই আন্দোলনে গুলি চালানোর সময় পুলিশকে হিন্দিতে কথা বলতে শুনেছি

Advertisement

শহীদ আহম্মেদের সাক্ষ্য: চানখারপুল হত্যাকাণ্ডের চিত্র

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, রাজধানী ঢাকার চানখারপুল এলাকায় ঘটে যায় এক মর্মান্তিক ঘটনা—যাকে ইতিহাসে ‘চানখারপুল হত্যাকাণ্ড’ নামে চিহ্নিত করা হয়। এই ঘটনায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান সাতজন নিরীহ বিক্ষোভকারী, যাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন দশম শ্রেণির ছাত্র শহিদুল্লাহ খান আনাস। এটি ছিল ‘জুলাই বিপ্লব’ আন্দোলনের একটি অন্ধকার অধ্যায়।

আন্দোলনের পটভূমি

২০২৪ সালের জুন মাসে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট সরকারী চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহালের রায় দেয়। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে জুলাই মাসে দেশব্যাপী শুরু হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন। শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের দাবি তুলে ধরতে রাস্তায় নামেন। তবে, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সহিংস দমন-পীড়ন শুরু হয়।

চানখারপুল হত্যাকাণ্ডের দিন

৫ আগস্ট, সকাল সাড়ে ১১টার দিকে, শহীদ আহম্মেদ তার ভাতিজা ইয়াকুব, ছেলে সালমান ও অন্যান্য প্রতিবেশীসহ গণভবনের উদ্দেশ্যে রওনা হন। চানখারপুল এলাকায় পৌঁছালে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী একত্রিত হন। এসময় পুলিশ ও ছাপা পোশাকধারী পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। শহীদ আহম্মেদ জানান, পুলিশ সদস্যরা হিন্দি ভাষায় কথা বলছিলেন এবং তাদের দিকে লক্ষ্য করে ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। এরপর সরাসরি গুলি চালানো হয়, যার ফলে ইয়াকুবসহ কয়েকজন আহত হন।

ইয়াকুবের মৃত্যু ও পরবর্তী ঘটনা

আহত ইয়াকুবকে দ্রুত মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শহীদ আহম্মেদ দাবি করেন, ইয়াকুবকে গুলি করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান ও যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি

১৩ আগস্ট, ২০২৫, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শহীদ আহম্মেদ সাক্ষ্য দেন। তিনি বলেন, “পুলিশের গুলি ও নির্দেশে ইয়াকুবসহ অন্যান্যরা প্রাণ হারিয়েছেন।” তিনি আসামিদের বিচার দাবি করেন।

চানখারপুল হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী ঘটনা

এই হত্যাকাণ্ডের পর, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কনস্টেবল সুজন হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। তিনি ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে কারাগারে পাঠানো হন। এছাড়া, আনাস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়।

‘জুলাই বিপ্লব’ ও এর প্রভাব

‘জুলাই বিপ্লব’ আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে জনতার ক্ষোভ ও প্রতিবাদের প্রতিফলন। এটি দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা

শহীদ আনাসের স্মরণে গেন্ডারিয়া এলাকার ‘দিননাথ সেন রোড’ নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ আনাস রোড’ রাখা হয়। এছাড়া, তার পরিবারের প্রতি সহানুভূতি ও সমর্থন জানাতে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি এগিয়ে আসেন।

চানখারপুল হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। এই ঘটনা সরকারের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদের প্রতিফলন। শহীদ আহম্মেদের সাক্ষ্য ও অন্যান্য তথ্য প্রমাণ করে যে, এই হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিতভাবে সংঘটিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে আসামিদের বিচার হওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

“২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, রাজধানী ঢাকার চানখারপুল এলাকায় ঘটে যায় এক মর্মান্তিক ঘটনা—যাকে ইতিহাসে ‘চানখারপুল হত্যাকাণ্ড’ নামে চিহ্নিত করা হয়। এই ঘটনায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান সাতজন নিরীহ বিক্ষোভকারী, যাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন দশম শ্রেণির ছাত্র শহিদুল্লাহ খান আনাস। এটি ছিল ‘জুলাই বিপ্লব’ আন্দোলনের একটি অন্ধকার অধ্যায়। শহীদ আহম্মেদের সাক্ষ্য ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ভূমিকা বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদনটি ‘Singnalbd.com’ এর পাঠকদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।”

MAH – 12313 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button