
সিলেট–সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের বাহাদুরপুর এলাকায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা
সুনামগঞ্জ সদরে বাস ও অটোরিকশার সংঘর্ষে দুই শিক্ষার্থীসহ ৩ জন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন একজন। বুধবার (৬ আগস্ট) দুপুরে সুনামগঞ্জ-সিলেট মহাসড়কের বাহাদুরপুর এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনার বিস্তারিত
দুর্ঘটনাটি ঘটে দুপুর ১:৩০ থেকে ২টার মধ্যে। সুনামগঞ্জ থেকে শান্তিগঞ্জগামী একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা বিপরীত দিক থেকে আসা একটি সিলেটগামী লোকাল বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ করে। সংঘর্ষের ফলে সিএনজিটি ব্যাপকভাবে দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং ঘটনাস্থলে থাকা যাত্রীরা গুরুতরভাবে আহত হন।
নিহতদের পরিচয়
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন:
- স্নেহা চক্রবর্তী (১৮), সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
- আফসানা জাহান খুশী (১৭), সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইন্সটিটিউটের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।
- সফিকুল ইসলাম (৫০), সুনামগঞ্জ শহরের আলিপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
দুর্ঘটনার পরিণতি
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্নেহা ও আফসানা ঘটনাস্থলেই নিহত হন। সফিকুল ইসলামকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি প্রাণ হারান।
আহতদের অবস্থা
দুর্ঘটনায় আরও কমপক্ষে একজন যাত্রী গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁকে সিলেট MAG Osmani মেডিকেল কলেজে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার করা হয়েছে। বাকি আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে।
পুলিশ ও উদ্ধারকাজ
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায় এবং আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করেন। দুর্ঘটনায় ব্যবহৃত বাস জব্দ করা হয়েছে। চালক ও হেলপার দুর্ঘটনার পরই গাড়িটি রেখে পালিয়ে যান, পুলিশ তাদের খোঁজে তৎপর আছে।
প্রাথমিক অনুমিত কারণ
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, সিএনজিটি শান্তিগঞ্জগামী সময়ে বিপরীতমুখী বাস বিপদসীমা অতিক্রম করে হঠাৎ সংঘর্ষে জড়ায়। সড়কে গতি নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ও যানবাহনের অভাবনীয় গতিতে ট্রাজেডিটি ঘটে।
সুনামগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনার ইতিহাস
সুনামগঞ্জে গত ক’মাসে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে, বিশেষ করে বাস-সিএনজি বা বাস-লেগুনা সংঘর্ষে প্রায়ই প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ, ফেব্রুয়ারি ২০২৫ এ শান্তিগঞ্জে বাস-সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত ও তিনজন আহত হন। জুলাই ২০২৫ এ দিরাই অঞ্চলে লেগুনা ও সিএনজির সংঘর্ষে চালকসহ ৪ মাস বয়সী শিশু নিহত হন, আহত হয় ছয়জন।
নীতিগত প্রেক্ষাপট ও সম্ভাব্য প্রতিশ্রুতি
বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সংসদে সড়ক আইন সংস্কারের পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন ট্রাফিক কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে পথচারী ও যাত্রীদের নিরাপত্তা আশ্বাস দিতে চায়। কিন্তু বাস্তবে সুনামগঞ্জসহ সিলেট বিভাগে এখনো অপরিকল্পিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেন রুখছে না।
বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন
কারণ ও ব্যবস্থাপনা অমিল
১. অতি গতি এবং নিয়ন্ত্রিত পরিবহন ব্যবস্থা না থাকা – সুনামগঞ্জ–সিলেট মহাসড়কে বাস ও সিএনজি চরম অতিরিক্ত গতিতে চলাচল করে, যা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। ২. তরুণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাহীন পরিবহন – সিএনজি অটোরিকশার মতো ছোট যানবাহনে শিক্ষার্থীরা ভ্রমণ করলেও দুর্ঘটনায় পুরোপুরি অরক্ষিত। ৩. ঘটনার পর অপরাধীর পালিয়ে যাওয়া – ঘটনাস্থল ত্যাগ করে বাস ও সিএনজির চালক পালিয়ে গেলে দায় ও বিচারের পথে বাধা তৈরি হয়। ৪. উদ্ধার ও চিকিৎসা ব্যবস্থার ধীরগতি – দুর্ঘটনার পর জরুরিতে আদর্শ সময়মতো উদ্ধার ও উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করা কঠিন হচ্ছে।
সম্ভাব্য সমাধান ও সুপারিশ
- জরুরি নিরাপত্তা মেজর: সড়ক দুর্ঘটনার প্রবণ এলাকা নির্ধারণ করে নিয়মিত গতি নিয়ন্ত্রণ, রাডার ও পুলিশের টহল নিশ্চিত করতে হবে।
- যাত্রীসেবা ও শিক্ষা সচেতনতা: শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ পরিবহনের বিকল্প পরিকল্পনা গড়ে তোলা প্রয়োজন।
- দুর্ঘটনার পর তৎকালীন ব্যবস্থা: পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস দ্রুত পৌঁছানো এবং আহতদের সময় মতো উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করা জরুরি।
- দায়িত্ব ও আইন প্রয়োগ: ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার দায়ীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা এবং চালক ও হেলপারদের শনাক্ত করা।
পরিবার ও স্থানীয় প্রতিক্রিয়া
নিহত স্নেহা ও আফসানার পরিবার গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। স্থানীয়রা বলেন, “দুজনই শিক্ষাজীবনের পথে, জীবনের স্বপ্ন নিয়ে ছিলেন। এভাবে চলে যাওয়া ন্যায়সঙ্গত নয়।” পরিবারগুলো চান, ঘটনার পূর্ণ তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি চাইছেন।
প্রশাসনের বক্তব্য
সুনামগঞ্জ থানা ও ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, বাস উদ্ধার ও চালক শনাক্তে কাজ চলছে। আইনি প্রক্রিয়ায় ভুক্তভোগীদের পরিবারের সংবাদদাতা দিশা চাওয়া হলে সংশ্লিষ্ট ওসি জানান, “চার্জশিট প্রস্তুত করে কোর্টে প্রেরণ করা হবে।”
সুনামগঞ্জের এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা দূর্ঘটনার দৃষ্টান্ত, যেখানে দুই ছাত্রীর জীবন নিঃশেষিত হলো নিরাপত্তা ও পরিকল্পিত পরিবহন ব্যবস্থার অভাবে। যথোচিত নিরাপত্তা, গতি নিয়ন্ত্রণ ও আইনি ব্যবস্থাপনা ছাড়া ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন। যে তিনটি প্রাণ গেল—স্নেহা, আফসানা ও সফিকুল—তাঁদের স্মরণে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণই হবে সত্যিকার শ্রদ্ধা।
MAH – 12171 , Signalbd.com