আঞ্চলিক

সাতক্ষীরায় বিএসএফের গুলিতে শেখ আলমগীর আহত

Advertisement

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভোমরা ইউনিয়নের লক্ষীদাঁড়ি সীমান্তের ১নং মেইন পিলারের কাছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে এক বাংলাদেশি ঘের ব্যবসায়ী শেখ আলমগীর হোসেন আলম (৩৫) গুরুতর আহত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সীমান্তে কেন তীব্র উত্তেজনা?

সাতক্ষীরার ভোমরা এলাকা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত হিসেবে পরিচিত। সীমান্তের এই অংশে দুই দেশের বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে নিয়মিত টহল চললেও মাঝে মাঝে সীমান্তবর্তী এলাকা নিয়ে বিরোধ ও গুলির ঘটনা ঘটে।
সীমান্তে বসবাসরত মানুষদের জীবিকা এখন সীমান্ত সংলগ্ন মাছের ঘের ও অন্যান্য কৃষিজাত পণ্যে নির্ভরশীল। এক্ষেত্রে ভারতীয় বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিক আহত হওয়া নিয়ে এলাকাবাসী মাঝে মাঝে আশঙ্কা প্রকাশ করে থাকেন।

গুলিতে আহত আলমগীর হোসেনের ব্যথাবহ গল্প

আহত আলমগীর হোসেন আলম লক্ষীদাঁড়ি গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা, তিনি শেখ সাঈদ হোসেনের পুত্র। তিনি মাছের ঘের ব্যবসায় নিয়োজিত। সম্প্রতি ভারী বর্ষণে তার ঘের তলিয়ে যাওয়ায় ভোরের অন্ধকারে ঘের বাঁধতে গিয়েছিলেন।
সেই সময় ভারতের ঘোজাডাঙা বিএসএফ ক্যাম্পের টহলরত সদস্যরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গুলির চিহ্ন তার মাথা, মুখমণ্ডল, ডান চোখ এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে পড়েছে।

আলমগীর আহত অবস্থায় নিজেই সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে পৌঁছান এবং চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি জানান, “আমি শুধুমাত্র মাছের ঘের বাঁধতে গিয়েছিলাম, আমার কোন দোষ ছিল না।”

হাসপাতালের চিকিৎসা ও আহতের অবস্থা

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. এবিএম আক্তার মারুফ জানান, ভোর ৮:৩৫ মিনিটে আলমগীরকে নিয়ে আসা হয়। তার শরীরের বিভিন্ন অংশে ছররা গুলির চিহ্ন এবং তীব্র আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। বর্তমানে তার অবস্থা স্থিতিশীল হলেও পুরোপুরি সুস্থ হতে আরও সময় লাগবে।
চিকিৎসক দলের পক্ষ থেকে আরো পর্যবেক্ষণ চলছে এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিজিবি তদন্ত শুরু, পরবর্তী করণীয়

ভোমরা বিজিবি ক্যাম্পের সুবেদার জহির আহম্মেদ সাংবাদিকদের জানান, “আমরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছি এবং ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করা হয়েছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।”
সীমান্তের এই ধরনের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য দুই দেশের নিরাপত্তা বাহিনী মাঝে মাঝে আলোচনা ও সমঝোতা করেন। তবে গুলির প্রকৃত কারণ এখনো জানা যায়নি।

সীমান্তে গুলির পেছনের প্রেক্ষাপট

সীমান্তে বিএসএফ এবং বিজিবির মাঝে সংঘর্ষ বা গুলির ঘটনা নতুন কিছু নয়। পূর্বের অনেক ঘটনার মত, সাধারণত নিষেধাজ্ঞা অমান্য, সীমান্ত পারাপার, এবং সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত মানুষের ঘের বা জমির মালিকানা নিয়ে এই ধরনের ঘটনা ঘটে।
পাশাপাশি ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ও সন্ত্রাস দমন কার্যক্রমের নামে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের অভিযোগও মাঝে মাঝে উঠে আসে।
সীমান্তবর্তী এলাকায় এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি মানুষকে ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলে এবং দুই দেশের সম্পর্কেও প্রভাব ফেলে।

স্থানীয়দের উদ্বেগ ও মানবাধিকার

সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসকারী সাধারণ মানুষদের জন্য এই গুলির ঘটনা মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। স্থানীয়রা তাদের জীবিকা ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। মাছের ঘের, জমি বা অন্য কোনো সম্পদ রক্ষার জন্য যারা কাজ করেন তারা প্রায়ই এই ধরনের সহিংসতার শিকার হন।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোও সীমান্তে গুলির ঘটনার বিষয়ে নিয়মিত নজর রাখে এবং দুই দেশের সরকারের কাছে নিরাপদ পারস্পরিক সমঝোতার আহ্বান জানায়।

সাতক্ষীরা সীমান্ত: ঐতিহাসিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট

সাতক্ষীরা জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে অবস্থিত এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সাথে দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে।
এই সীমান্ত এলাকা বর্ধিত কৃষি ও মাছ চাষের জন্য পরিচিত। অনেক সীমান্তবর্তী গ্রামীণ অর্থনীতি মাছ চাষ, গবাদিপশু পালন ও কৃষিজাত পণ্যের ওপর নির্ভরশীল।
তাই সীমান্তে সুষ্ঠু পরিবেশ ও নিরাপত্তার অভাব এলাকাবাসীর জীবন ও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

দুই দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা ও সমাধানের উদ্যোগ

বাংলাদেশ ও ভারতের বিজিবি ও বিএসএফ নিয়মিত সীমান্ত নিরাপত্তা বজায় রাখে এবং চোরাচালান, সন্ত্রাস দমন ও অপরাধ রোধে কাজ করে।
তবে কখনো কখনো সীমান্ত টহলরত সদস্যদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও অতিরিক্ত জবাবদিহিতা গুলির মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটায়।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় দুদেশের সরকার এবং নিরাপত্তা বাহিনী মাঝে মাঝে সীমান্ত শান্তি ও সহযোগিতা নিয়ে আলোচনার প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলে।

সংবাদ সংক্ষেপ

  • সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভোমরা ইউনিয়নের লক্ষীদাঁড়ি সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি ঘের ব্যবসায়ী শেখ আলমগীর হোসেন (৩৫) গুরুতর আহত।
  • তিনি বর্তমানে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
  • আহত আলমগীর জানিয়েছেন, তিনি মাছের ঘের বাঁধতে গিয়েছিলেন, টহলরত বিএসএফের গুলিতে আহত হয়েছেন।
  • বিজিবি তদন্ত শুরু করেছে এবং বিস্তারিত জানানো হবে।
  • সীমান্তে বারবার এই ধরনের গুলির ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।

MAH – 12128 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button