
মাদারীপুর-শরীয়তপুর-চাঁদপুর মহাসড়কের ফোরলেন সড়ক এখন যেন চলাচলের পথ নয়, বরং এক মৃত্যুফাঁদ। কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে নির্মিত এই মহাসড়ক প্রতি বছরই সংস্কার হয়, বরাদ্দও আসে, কিন্তু বৃষ্টির পানি নামলেই আবার ভেঙে যায় সড়ক। জনদুর্ভোগ কমার পরিবর্তে দিন দিন আরও বাড়ছে।
সড়কের অবস্থা: খানাখন্দে ভরা বিপজ্জনক পথ
মোস্তফাপুর থেকে ডিসি ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। রাস্তার পিচ উঠে গেছে, বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই সেই গর্তে জমে পানি। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করেন। যাত্রী, চালক ও পথচারীরা বলছেন, বর্ষাকালে এই সড়কে গাড়ি চালানো মানেই মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে চলা।
কোটি কোটি টাকা ব্যয়, তারপরও সমাধান নেই
২০১৮ সালে এই সড়ক দুই লেন থেকে চার লেনে উন্নীত হয়, ব্যয় হয় প্রায় ৭৭ কোটি টাকা। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই রাস্তায় দেখা দেয় গর্ত। এরপর ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রাথমিক মেরামতে খরচ হয় ৪৫ লাখ টাকা। পরবর্তী বছর আরও প্রায় ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা খরচ করেও স্থায়ী সমাধান হয়নি। এর পর থেকে প্রায় প্রতি বছরই সংস্কারের নামে টাকা খরচ হচ্ছে। কিন্তু সড়কের উন্নতির পরিবর্তে বর্ষা আসলেই আবারো পুরনো দৃশ্য: রাস্তা ভেঙে যায়, গর্ত তৈরি হয়।
সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও ভোগান্তি
এই ভাঙাচোরা সড়ক নিয়ে স্থানীয়দের ক্ষোভ চরমে। মাদারীপুর শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো যেমন কলেজ গেট, থানার মোড়, ইটেরপুল, খাগদী, মোস্তফাপুর এবং ডিসি ব্রিজ এলাকায় বড় বড় গর্তে প্রতিনিয়ত ঘটে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
একজন কলা ব্যবসায়ী হাদিম বেপারী বলেন, “এখন এই রাস্তা দিয়ে পণ্য আনা-নেওয়া করা খুব কষ্টকর। ট্রাক উল্টে গেলে ক্ষতির দায় কে নেবে?”
ইজিবাইক চালক রাসেল মাতুব্বর বলেন, “বৃষ্টি হলে গর্তে পানি জমে যায়। তখন বোঝাই যায় না কোথায় গর্ত আছে, কোথায় রাস্তা। প্রায়ই গাড়ি উল্টে যায়, যাত্রীরা আহত হয়।”
এছাড়াও, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন এই ভাঙাচোরা রাস্তায় যাতায়াত করতে হয়। ফলে তাদের পড়াশোনায়ও প্রভাব পড়ছে।
দায়িত্বহীনতা না কি দুর্নীতি?
স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়ক সংস্কারের নামে যেন চলছে টাকার খেলা। বড় অঙ্কের বাজেট বরাদ্দ হলেও কাজ হয় নিম্নমানের। সংস্কারের পর কয়েক মাসের মধ্যেই সড়ক আগের অবস্থায় ফিরে যায়। এতে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন জেগেছে—কোটি কোটি টাকা খরচ হয় কোথায়?
সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, ভারী যানবাহনের চাপ এবং বর্ষার পানি জমে থাকায় সড়ক দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তারা দীর্ঘস্থায়ী সংস্কারের জন্য নতুন প্রকল্প পাঠিয়েছেন, বরাদ্দ এলেই কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতামত: টেকসই সমাধান জরুরি
সড়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসম্মত উপকরণ দিয়ে সঠিক পদ্ধতিতে সড়ক সংস্কার না করলে যত বরাদ্দই আসুক না কেন সমস্যার সমাধান হবে না। টেকসই পরিকল্পনা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত না করলে এই চক্র চলতেই থাকবে।
তাদের মতে, সড়ক ব্যবস্থাপনায় জবাবদিহিতা বাড়াতে হবে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাজের মান যাচাই করে প্রকৃত দায়িত্ব নির্ধারণ করতে হবে। অন্যথায় এই সড়ক শুধু মানুষের জীবন ঝুঁকির মধ্যেই রাখবে।
ভবিষ্যতের আশা কোথায়?
বর্তমানে নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও, স্থানীয়রা দ্রুত স্থায়ী সমাধানের দাবি জানাচ্ছেন। তাদের মতে, কেবল কাগজে-কলমে নয়, বাস্তবে যেন উন্নয়ন হয়, সেটাই এখন সবচেয়ে জরুরি।
যাত্রী ও স্থানীয়দের প্রশ্ন—আর কত দিন বরাদ্দের টাকা খরচ হবে কিন্তু সমস্যার সমাধান হবে না? সঠিক তদারকি ও টেকসই উদ্যোগ নিলে কি এই মৃত্যুফাঁদ থেকে মুক্তি মিলবে?
এম আর এম – ০৬৫৯, Signalbd.com