মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে সেলফি তোলায় দুই কিশোরকে আটক করেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। ভারতীয় ভূখণ্ডে অনিচ্ছাকৃতভাবে প্রবেশ করায় তাদের আটক করে বিএসএফ। পরে বাংলাদেশী বর্ডার গার্ড (বিজিবি) কর্তৃপক্ষের আন্তঃসংযোগে তারা দেশে ফিরেছে।
সীমান্ত এলাকা থেকে মোবাইল কামের সেলফি তুলতে গিয়ে আটক
শনিবার (২ আগস্ট) বিকেল চারটার দিকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার আলীনগর সীমান্ত এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। মোটরসাইকেলে করে সেখানকার পিলার ১৮৪৫/এম এর কাছ দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ভূখণ্ডে প্রবেশ করেন দুই কিশোর। মোবাইলে ছবি তুলে তাদের দম্পতিকে দেখতে পেয়ে বিএসএফ তাদের আটক করে নিজেদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়।
আটক দুই কিশোরের পরিচয়
আটক দুই কিশোরের নাম সুবর্ণ শীল (১৭) ও শুভ্র নাইডু (১৮)। সুবর্ণ শীল কর্মধা ইউনিয়নের কালিটি চা বাগানের শ্রমিক সঞ্জয় শীলের ছেলে এবং শুভ্র নাইডু রামানু নাইডুর ছেলে। তাঁরা ওই এলাকা থেকে মোটরসাইকেলে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন।
বিজিবির আন্তঃসংযোগে দেশে ফেরত
বিজিবির তথ্য মতে, ওই দুই কিশোরকে আটক করার খবর পেয়ে বিজিবি কর্তৃপক্ষ বিএসএফের সাথে যোগাযোগ করে। রাত ১১টার দিকে দুই কিশোরকে বিএসএফ নিজ হেফাজত থেকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। হস্তান্তরের সময় তাঁদের স্বজনরাও উপস্থিত ছিলেন। পরে তাদের কুলাউড়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
আটককৃতদের বক্তব্য
ফেরত আসার পর দুই কিশোর জানান, তারা অনিচ্ছাকৃতভাবে সীমান্ত অতিক্রম করেন। আটক অবস্থায় বিএসএফ তাদের কোনো ধরনের নির্যাতন করেনি বলে জানান তারা। এই ঘটনার জন্য তারা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন।
পুলিশের ব্যবস্থা ও মামলা
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক জানিয়েছেন, অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুই কিশোরকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
সীমান্ত সেলফি: নতুন প্রজন্মের ঝুঁকি ও সচেতনতা প্রয়োজন
সীমান্ত এলাকা যেমন থাকে অত্যন্ত সংবেদনশীল, তেমনি সেখানকার নিয়মকানুনও কঠোর। কিন্তু মোবাইল ক্যামেরার যুগে বিশেষ করে কিশোর ও যুবকদের মধ্যে সেলফি তোলার প্রবণতা অনেক বেশি। অনেক সময় অজান্তেই সীমান্ত পেরিয়ে গিয়ে বিপদে পড়া বা আইনগত সমস্যায় জড়ানোয় সীমান্ত রক্ষীদের কড়া সতর্কতা ও পদক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়ে।
কিশোরদের সীমান্ত সচেতনতা বৃদ্ধি কেন জরুরি?
সীমান্ত এলাকায় অনিচ্ছাকৃত অনুপ্রবেশ কেবল ব্যক্তিগত ক্ষতির কারণ হয় না, এর ফলে দেশের নিরাপত্তায়ও ঝুঁকি তৈরি হয়। কিশোরদের মাঝে সীমান্ত সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য স্থানীয় প্রশাসন, বিজিবি, স্কুল-কলেজগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে।
সীমান্তে ছবি তোলার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ
সীমান্ত এলাকা ফটো তোলার ক্ষেত্রে বিশেষ অনুমতি ও নিরাপত্তা মানদণ্ড রয়েছে। অজ্ঞাতসারে বা অনুমতি ছাড়া সীমান্ত এলাকায় ছবি তোলা নিষিদ্ধ। এই বিধি মানা না হলে আইনগত জটিলতার পাশাপাশি দেশের নিরাপত্তা বিষয়ক ঝুঁকিও বাড়ে।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত: সংবেদনশীলতা ও শান্তি রক্ষায় যৌথ উদ্যোগ
বাংলাদেশ-ভারতের দীর্ঘ সাড়ে ৪ হাজার কিলোমিটার সীমান্ত অনেক ক্ষেত্রেই শান্তিপূর্ণ থাকলেও মাঝে মাঝে সেখানকার ছোটখাটো ঘটনা দুই দেশের মাঝে উত্তেজনার সৃষ্টি করতে পারে। তাই সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় স্থানীয়দের সতর্ক থাকা এবং সীমান্ত রক্ষীদের সাথে সমন্বয় বৃদ্ধি করা খুবই প্রয়োজন।
বিজিবি ও বিএসএফ-এর পারস্পরিক সহযোগিতা
এই ঘটনার ক্ষেত্রে যেমন বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যকার যোগাযোগ দ্রুত হয়েছে, তেমনি এটি প্রমাণ করে দুই দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী কীভাবে পরস্পরের সহযোগিতায় শান্তি রক্ষা করছে। এমন সম্পর্ক ভবিষ্যতে সীমান্ত সংলগ্ন ঘটনার দ্রুত সমাধানে সহায়ক হবে।
সীমান্ত পেরোনো কি দণ্ডনীয় অপরাধ?
বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত আইন অনুযায়ী, অননুমোদিতভাবে সীমান্ত অতিক্রম করা একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। বিশেষত যখন এটি অপরিচিত বা অনুজ্ঞাপ্রাপ্ত ব্যক্তি দ্বারা সংঘটিত হয়।
- বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী: অনুপ্রবেশের দায়ে মামলা হয়, যার সাজা হতে পারে জরিমানা অথবা কারাদণ্ড।
- ভারতের আইন অনুযায়ী: বিএসএফ সীমান্তে প্রবেশকারীদের আটক করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে।
সুতরাং সীমান্ত এলাকা পার হওয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
সর্বশেষ সীমান্ত পরিস্থিতি ও বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক
গত বছরগুলোতে সীমান্তে বিভিন্ন নিরাপত্তা সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী মাঝে মাঝে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে সীমান্তে শান্তি বজায় রাখতে উভয়পক্ষের প্রতিশ্রুতি অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তে চলমান শান্তি এবং নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় জনগণ ও কর্তৃপক্ষের সচেতনতা অপরিহার্য। শিক্ষামূলক ক্যাম্পেইন, সচেতনতামূলক কর্মসূচি এবং সঠিক সীমান্ত আইন মেনে চলা এই শান্তি রক্ষায় মূল ভিত্তি।
সেলফি তুলতে গিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করায় দুই কিশোরের আটক হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত, যা প্রমাণ করে সীমান্ত সচেতনতার অভাব কতটা বিপজ্জনক হতে পারে। এই ধরনের ঘটনা এড়াতে সবার উচিত সীমান্তের গুরুত্ব বুঝে সঠিক নিয়মকানুন মেনে চলা এবং স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা পালন করা।
বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে এবং সীমান্তে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ এবং দুই দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সহযোগিতা অতীব জরুরি।
MAH – 12111 , Signalbd.com



