ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নে ঘটেছে এক ব্যতিক্রমী ঘটনা। সাধারণত প্রত্যয়নপত্রে ব্যক্তির সুনামের কথা লেখা হয়। কিন্তু এবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছাইদুল ইসলাম বাবুল এমন এক প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন, যেখানে সরাসরি একজন যুবককে ধর্ষক, দুষ্কৃতকারী এবং দুশ্চরিত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এই ঘটনায় স্থানীয়ভাবে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে।
ইউপি চেয়ারম্যানের দেওয়া ব্যতিক্রমী প্রত্যয়নপত্র
চেয়ারম্যানের দেওয়া প্রত্যয়নপত্রে লেখা হয়েছে, স্থানীয় ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. আব্দুল বারেকের ছেলে শরিফ মিয়া (২২) পূর্বে এক কিশোরীকে ধর্ষণের চেষ্টা করতে না পেরে বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেন। পরবর্তীতে সম্প্রতি চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন।
চেয়ারম্যান তার মন্তব্যে লিখেছেন, “তিনি একজন দুষ্কৃতকারী ও দুশ্চরিত্রের। সামাজিক বা আইনের কোনো তোয়াক্কা করেন না। আমি তাকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।”
মামলা
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৩ জুন বিকেলে শরিফ মিয়া এলাকার একটি বাড়িতে একা থাকা চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। শিশুটি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় শিশুটির পরিবার থানায় মামলা দায়ের করে।
মামলার পর থেকেই শরিফ মিয়া পলাতক ছিলেন। অবশেষে গত শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে র্যাব অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে থানায় সোপর্দ করে।
প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার কারণ সম্পর্কে চেয়ারম্যানের ব্যাখ্যা
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ছাইদুল ইসলাম বাবুল গণমাধ্যমকে বলেন, “প্রত্যয়নপত্র সাধারণত মানুষকে ভালো পরিচয় দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়। কিন্তু যারা অপরাধে জড়িত, তারাও ভালো প্রত্যয়নপত্র নিয়ে সমাজে সুবিধা নেয়। তাই আমি বাস্তব ঘটনা উল্লেখ করেছি, যাতে সমাজে একটা দৃষ্টান্ত তৈরি হয় এবং অপরাধীরা ভয় পায়।”
সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও আলোচনা
এই প্রত্যয়নপত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। স্থানীয়দের মধ্যে কেউ কেউ এই পদক্ষেপের প্রশংসা করছেন। অনেকেই মনে করছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ সমাজে অপরাধ প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।
অন্যদিকে কিছু মানুষ প্রশ্ন তুলছেন, আইনের হাতে সোপর্দ করার আগে প্রকাশ্যে কাউকে অভিযুক্ত করা কতটা সঠিক। তবে অধিকাংশের মতে, অপরাধীর অপরাধ গোপন না করে জনসমক্ষে তুলে ধরা উচিত।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতামত
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রত্যয়নপত্রে এ ধরনের মন্তব্য সচরাচর দেখা যায় না। তবে যদি চেয়ারম্যানের দেওয়া তথ্য প্রমাণিত হয়, তাহলে এটি আইনগতভাবে সমস্যার কারণ হবে না। বরং এটি সামাজিক দায়িত্ববোধের উদাহরণ হিসেবে দেখা যেতে পারে। তবে এ ধরনের নথি তৈরির ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
এই ঘটনার গুরুত্ব
বাংলাদেশে সচরাচর দেখা যায় না যে কোনো জনপ্রতিনিধি সরাসরি অপরাধীর নাম উল্লেখ করে তার অপরাধের কথা লিখবেন। এই ঘটনাটি ভবিষ্যতে প্রত্যয়নপত্র প্রদানের ধরনে পরিবর্তন আনতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, এ ধরনের প্রকাশ্য পদক্ষেপ অপরাধীদের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে। তবে আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা এবং অভিযুক্তদের দ্রুত বিচার করাও সমানভাবে জরুরি।
ভবিষ্যতের প্রশ্ন
এই ঘটনার পর সমাজে প্রশ্ন উঠেছে: অপরাধীদের জন্য কি এবার থেকে সব জনপ্রতিনিধি একইভাবে কঠোর হবেন? নাকি এটি শুধু একটি ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত হয়েই থেকে যাবে?
স্থানীয়দের দাবি, শুধু প্রত্যয়নপত্র নয়, অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের অপরাধ করার সাহস না পায়।
সারসংক্ষেপ
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে নজিরবিহীন ঘটনা। ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে অভিযুক্ত শরিফ মিয়ার নামে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমন এক প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন, যেখানে অপরাধীর অপকর্ম স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
এম আর এম – ০৬৪৪, Signalbd.com



