জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণ) হাসনাত আবদুল্লাহ দলের সাম্প্রতিক ঘোষণাপত্র অনুষ্ঠান বর্জনের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে জানিয়েছেন, এটি ছিল তাঁর একান্ত প্রতিবাদ। তাঁর অভিযোগ, ঘোষণাপত্রটি আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তিদের উপেক্ষা করে প্রস্তুত করা হয়েছে এবং এতে অনেক আহত ও নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়নি।
অনুষ্ঠানে অনুপস্থিতির কারণ ব্যাখ্যা করলেন হাসনাত
দলের কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবে বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “ঘোষণাপত্র প্রণয়নের সময় আন্দোলনের শহীদ পরিবার, আহত এবং নেতৃত্বদানকারীদের উপেক্ষা করা হয়েছে। অনেকেই মতামত প্রদানের সুযোগ পাননি, এমনকি অন্তর্ভুক্তির ন্যূনতম সম্মানটুকুও দেওয়া হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “যেখানে ঐক্যের পরিবর্তে বিভাজন, শহিদ ও আহতদের পরিবর্তে কিছু মুষ্টিমেয় গোষ্ঠীর মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, সেখানে উপস্থিত থাকার কোনো ইচ্ছা বা প্রয়োজন বোধ করিনি।”
কীভাবে শুরু হলো এই বিতর্ক
জাতীয় নাগরিক পার্টির ঘোষণাপত্র প্রকাশের অনুষ্ঠানটি ছিল একটি প্রতীকী মুহূর্ত। কিন্তু ৪ আগস্টের অনুষ্ঠানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং ত্যাগী কর্মীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। হাসনাত দাবি করেন, তিনি আগেই বুঝতে পারেন যে অনুষ্ঠানটি একতাবদ্ধতার পরিবর্তে বিভক্তির বার্তা দিচ্ছে।
ঘোষণাপত্রে সংবিধান সংস্কারের দাবিকে খণ্ডন করে তিনি বলেন, “ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে জনগণ ভবিষ্যৎ নির্বাচিত সরকারের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করবে সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে, যা পুরোপুরি অসত্য। আমরা বরাবরই গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবি জানিয়ে এসেছি।”
প্রতিবাদের একাংশ হিসেবে কক্সবাজার সফর
হাসনাত জানান, ৪ আগস্ট রাতে অনুষ্ঠান থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে কক্সবাজারে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার ভাষ্য, এটি ছিল একান্তভাবে চিন্তা-ভাবনার জন্য নেওয়া সিদ্ধান্ত এবং একই সঙ্গে ঘোষণা অনুষ্ঠান বর্জনের নীরব প্রতিবাদ।
তিনি বলেন, “আমার সফরের উদ্দেশ্য ছিল ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নিয়ে গভীরভাবে ভাবা— গণঅভ্যুত্থান, নাগরিক কমিটি, নাগরিক পার্টির কাঠামো ও ভবিষ্যৎ গণপরিষদের রূপরেখা নিয়ে ভাবনার সুযোগ নেওয়া। এটি কোনো অপরাধ নয়, বরং একজন রাজনৈতিক কর্মীর দায়িত্বেরই অংশ।”
বিতর্কিত গুজব: মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাৎ?
কক্সবাজারে অবস্থানকালে একটি গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, তিনি ও তার সঙ্গীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন। এই বিষয়ে হাসনাত তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, “এই গুজব উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপচেষ্টা মাত্র।”
তিনি দাবি করেন, হোটেল কর্তৃপক্ষও নিশ্চিত করেছে যে সেখানে পিটার হাস নামক কেউ অবস্থান করছিলেন না। এমনকি বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী, পিটার হাস তখন যুক্তরাষ্ট্রেই অবস্থান করছিলেন।
দলে ভেতরের প্রতিক্রিয়া ও হাসনাতের অবস্থান
হাসনাত দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারীর সঙ্গে যোগাযোগ করে ঢাকার বাইরে যাওয়ার বিষয়টি জানান এবং তার সম্মতির ভিত্তিতেই সফরে যান বলে দাবি করেন। সফরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সারজিস আলম ও তাসনিম জারা-খালেদ সাইফুল্লাহ দম্পতিও।
তিনি বলেন, “আমার সফর ছিল সম্পূর্ণ স্বচ্ছ এবং দলীয় নীতিমালার পরিপন্থী নয়। ব্যক্তিগত পর্যায়ে রাজনৈতিক পরিকল্পনা ও চর্চার জন্য সময় নেওয়া আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।”
এই ঘটনা কী বার্তা দিচ্ছে?
এই ঘটনার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয়েছে, দলীয় নেতৃত্বে মতপার্থক্য এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার ঘাটতির ইঙ্গিত রয়েছে কি না তা নিয়ে। হাসনাতের মতো একজন মুখ্য সংগঠকের এমন পদক্ষেপ দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যার আভাস দিচ্ছে বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।
একজন বিশ্লেষকের মতে, “ঘোষণাপত্র যদি সত্যিকার অর্থে ঐক্যের বার্তা না দেয়, তাহলে তা দলের ভবিষ্যতের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হতে পারে।”
সামনের দিনগুলোতে কী হতে পারে?
হাসনাতের এই প্রতিবাদ ও বক্তব্য দলের ভেতরে নতুন আলোচনা সৃষ্টি করেছে। যদিও তিনি দলীয় শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে লিখিত জবাব প্রদান করেছেন, তবে তাঁর কথায় স্পষ্ট যে তিনি দলের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নন।
এখন প্রশ্ন হলো—দলীয় নেতৃত্ব এই বার্তাকে কীভাবে গ্রহণ করবে এবং সামনের দিনে এনসিপির অভ্যন্তরীণ ঐক্য কেমন থাকবে? বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতির মোড় আগামী কয়েক সপ্তাহে পরিষ্কার হবে।
এম আর এম – ০৭৩৭, Signalbd.com



