
পাবনার পদ্মা নদীর চরে আবারও সশস্ত্র মহড়া দিয়েছে কুখ্যাত কাকন বাহিনী। সোমবার বিকেলে চরাঞ্চলে অস্ত্র হাতে মহড়া ও ফাঁকা গুলি বর্ষণের ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে গেলেও ততক্ষণে সন্ত্রাসীরা গা ঢাকা দেয়।
কী ঘটেছিল পদ্মার চরে
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার বিকেল ৪টার দিকে ১৫ থেকে ২০ জনের একটি সশস্ত্র দল দ্রুতগতির স্পিডবোটে পদ্মার চরাঞ্চলে প্রবেশ করে। মুখ বাঁধা সন্ত্রাসীরা তীরে নেমে প্রকাশ্যে আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মহড়া শুরু করে এবং এলোপাতাড়ি ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে। মহড়ার পুরো সময় জুড়ে এলাকাবাসী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকে।
চরের কৃষক ও জেলে সম্প্রদায়ের লোকজন গুলির শব্দ শুনে দিকবিদিক ছুটোছুটি শুরু করেন। কেউ কেউ নদীপথে পালিয়ে যান। এই সময় অন্তত ৩০ থেকে ৪০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়া হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা
ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং র্যাব ঘটনাস্থলে যায়। তবে তাদের উপস্থিতির আগেই সশস্ত্র দলটি স্পিডবোটে উঠে পালিয়ে যায়। পরে সেনা সদস্যরা এলাকাটি ঘিরে রেখে তল্লাশি চালায়। যদিও ঘটনাস্থলে কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোমিনুজ্জামান জানান, “চরের ভেতরে একটি সংঘবদ্ধ দল অস্ত্রের মহড়া দিয়েছে—এমন খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। তবে তারা পালিয়ে যায়। এলাকা এখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।”
কাকন বাহিনীর আগের কর্মকাণ্ড
স্থানীয়দের অভিযোগ, পদ্মার এই চরাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরেই আধিপত্য বিস্তারের জন্য কাকন বাহিনী ও প্রতিপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে আসছে। বিশেষ করে পদ্মা নদীর নতুন জেগে ওঠা চরগুলো দখল করে মাছ ধরা ও বালুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করাই এই সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীর মূল লক্ষ্য।
গত কয়েক মাসে একই এলাকায় বেশ কয়েকবার সশস্ত্র প্রদর্শনী ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। গত মাসেই সেনাবাহিনী সেখানে অভিযান চালিয়ে কয়েকটি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করেছিল।
স্থানীয়দের আতঙ্ক ও ক্ষোভ
এলাকার সাধারণ মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তারা বলছেন, পুলিশের উপস্থিতি সত্ত্বেও এই ধরনের সশস্ত্র মহড়া বন্ধ হচ্ছে না। চরের কৃষকরা আশঙ্কা করছেন, এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যাবে। জেলেরা নদীতে নামতে ভয় পাচ্ছেন।
একজন স্থানীয় জেলে বলেন, “বিকেলে হঠাৎ গুলির শব্দ শুনে আমরা নৌকা ছেড়ে দৌড় দিয়ে পালাই। প্রতিদিন এই আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। কেউ নিরাপদ না।”
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, পদ্মা নদীর চরাঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্থায়ী ক্যাম্প না থাকায় এসব গোষ্ঠী সুযোগ নিচ্ছে। তারা বলছেন, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এ অঞ্চলের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা বলেন, “চরের ভিতর এমন জায়গায় এই ধরনের মহড়া হচ্ছে যেখানে পুলিশের বা সেনাবাহিনীর নিয়মিত টহল দেওয়া কঠিন। এই সুযোগটাকেই তারা কাজে লাগাচ্ছে। সরকারের উচিত স্থায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা।”
পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসনের পরিকল্পনা
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, চরাঞ্চলে সেনাবাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি দ্রুতই সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্থায়ী ক্যাম্প বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
সারসংক্ষেপ
পদ্মার চরের এই সন্ত্রাসী মহড়া নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের গোষ্ঠী যদি দমন না করা যায়, তাহলে চরাঞ্চলের সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এখন সবার দৃষ্টি প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপের দিকে।
এম আর এম – ০৫৮৮ , Signalbd.com