গাজার ক্ষুধার্ত শিশুদের নিয়ে আবেগঘন পোস্টে যা বললেন আহমাদুল্লাহ

গাজায় মানবিক বিপর্যয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন দেশের জনপ্রিয় ইসলামিক স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ। ফিলিস্তিনের নিরীহ শিশুদের অনাহারে মৃত্যুর মর্মস্পর্শী বর্ণনা দিয়ে তিনি বিশ্ববাসীর বিবেককে জাগ্রত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
গাজায় খাদ্যসংকটে শিশুদের মৃত্যুর হৃদয়বিদারক চিত্র
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষ এখন চরম আকার ধারণ করেছে। দীর্ঘদিনের অবরোধ এবং যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে লাখো মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। বিশেষ করে অসহায় শিশুরা প্রতিদিন না খেয়ে দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং অনেকেই মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছে। এই মর্মান্তিক বাস্তবতা বিশ্বজুড়ে সাধারণ মানুষের হৃদয়কে নাড়িয়ে দিচ্ছে।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের জনপ্রিয় ইসলামিক স্কলার এবং আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সোমবার এক আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন।
ফেসবুক পোস্টে কী লিখেছেন আহমাদুল্লাহ
তার পোস্টে আহমাদুল্লাহ লিখেছেন, “আমাদের সন্তানদের একবেলার ক্ষুধার কষ্ট দেখেই আমরা দিশেহারা হয়ে যাই। অথচ গাজার লক্ষ লক্ষ শিশু দিনের পর দিন না খেতে পেয়ে তিল তিল করে মারা যাচ্ছে। মানবতার ধ্বজাধারীরা একদিকে তাদের ওপর বোমা ফেলছে, আর যারা বোমা থেকে বেঁচে যাচ্ছে, তাদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে খাবারের অভাবে।”
তিনি আরও লিখেছেন, “এই পৃথিবীতে যেখানে খাদ্য উৎপাদনের প্রাচুর্য রয়েছে, সেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে একটি পুরো শহরকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করা হচ্ছে। লাখ লাখ মানুষ ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে, অথচ আমরা সবাই চোখ বুজে আছি।”
পোস্টের শেষে তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করে বলেন, “হে আল্লাহ, যাদের কারণে গাজার শিশুরা অনাহারে মরছে, তাদের জন্য তুমি দ্বিগুণ শাস্তির ব্যবস্থা করো।”
মানবিক দায়িত্বে বিশ্ববাসীর নীরবতা নিয়ে ক্ষোভ
আহমাদুল্লাহ তার পোস্টে বিশ্ব নেতৃত্ব এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থা, আরববিশ্ব কিংবা বিশ্বনেতারা কেউই গাজার মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে না। আমরা ৮০০ কোটি মানুষ এই ইতিহাসের দায় কীভাবে মেটাবো?”
এই বক্তব্য বিশ্বব্যাপী মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। তার পোস্টের নিচে হাজার হাজার মানুষ মন্তব্য করে গাজার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে এবং শিশুদের জন্য মানবিক সহায়তার দাবি তুলেছে।
গাজায় দুর্ভিক্ষের পেছনের কারণ
বিশ্লেষকদের মতে, গাজায় দীর্ঘদিনের অবরোধ এবং ধারাবাহিক বোমাবর্ষণের কারণে খাদ্য সরবরাহ সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। আন্তর্জাতিক সাহায্য পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এর ফলে বিশেষ করে শিশুরা সবচেয়ে বেশি ভুগছে। গাজার বাজারে খাবার থাকলেও দাম এত বেশি যে সাধারণ মানুষ তা কিনতে পারছে না।
জাতিসংঘের সাম্প্রতিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, গাজায় ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের একটি বড় অংশ মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, দ্রুত মানবিক সহায়তা না পৌঁছালে এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে।
মুসলিম বিশ্বের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
শুধু আন্তর্জাতিক সংস্থাই নয়, মুসলিম বিশ্বের নিরবতাও সমালোচনার মুখে পড়েছে। অনেকেই মনে করছেন, মুসলিম দেশগুলো যদি ঐক্যবদ্ধভাবে পদক্ষেপ নিত, তবে গাজার শিশুদের এভাবে অনাহারে মরতে হতো না।
আহমাদুল্লাহর পোস্টে তিনি স্পষ্ট করে লিখেছেন, “আরববিশ্ব যদি একসঙ্গে দাঁড়াত, তবে গাজার মানুষ অন্তত খাবারের জন্য মরতো না। এই নীরবতা ইতিহাস ক্ষমা করবে না।”
বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আহমাদুল্লাহর পোস্ট ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে। সাধারণ মানুষ গাজার অসহায় শিশুদের জন্য দোয়া করেছেন। অনেকেই গাজায় সহায়তা পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এছাড়া দেশীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলোও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্রুত মানবিক সাহায্য পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছে।
শেষ কথা
গাজার শিশুদের মৃত্যু নিয়ে আহমাদুল্লাহর এই পোস্ট আবারও মনে করিয়ে দিয়েছে, মানবিকতা আজ বড় সংকটে। বিশ্বব্যাপী মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া জানালেও বাস্তবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া খুবই সীমিত।
প্রশ্ন থেকেই যায় — গাজার নিষ্পাপ শিশুরা কি একদিন শান্তির পৃথিবীতে বড় হতে পারবে? নাকি যুদ্ধ এবং ক্ষুধার এই নির্মম ছায়া তাদের জীবন থেকে আলো কেড়ে নেবে?
এম আর এম – ০৫৮৬ , Signalbd.com