কুষ্টিয়ার কুখ্যাত ৭ বিয়ে করা রবিজুল ইসলামকে (৪২) আর্থিক প্রতারণা এবং মানবপাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) থানার একটি বিশেষ অভিযান শেষে রবিজুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া ও আশেপাশের এলাকা থেকে একাধিক মামলা রয়েছে।
ঘটনার বিস্তারিত
রবিজুল ইসলাম কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ি ইউনিয়নের মিয়াপাড়ার আয়নাল মণ্ডলের ছেলে। দীর্ঘ ১৫ বছর লিবিয়ায় অবস্থান করার পর দেশে ফিরে ৭ নারীকে বিয়ে করে আলোচনার কেন্দ্রে আসে। কিন্তু বিয়ে ও সংসারের বাইরে, সে মানবপাচার ও আর্থিক প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আসলেই বিপদে পড়ে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রবিজুল বিদেশে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভনে সাধারণ মানুষকে লোভ দেখিয়ে লিবিয়ায় পাঠাতো। কিন্তু সেখানে তাদের মাফিয়া চক্রের কাছে বিক্রি করে দেয়া হতো এবং মুক্তিপণের জন্য পরিবার থেকে বিপুল অর্থ আদায় করা হতো।
কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহসহ বিভিন্ন জেলায় এ ধরণের প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তানজির শেখ নামের এক যুবক লিবিয়ায় পাঠানোর পর ৯ মাস মানবপাচার চক্রের বন্দীশালায় রাখা হয়, সেখানে তাকে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। অবশেষে মুক্তিপণের বিনিময়ে দেশে ফিরতে পেরেছেন তানজির।
পূর্বপটভূমি
রবিজুল ইসলাম পেশায় মাইক্রোবাস চালক ছিলেন, পরবর্তীতে লিবিয়া গিয়ে মানবপাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত হন। দেশে ফেরার পর সাতবার বিয়ে করে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেন। এরপরেই তার বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণা ও মানবপাচারের অভিযোগ জমা পড়তে থাকে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, রবিজুল তাদের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে বিদেশে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে প্রায়শই তারা বিদেশে পৌঁছাতে পারেনি বা মানবপাচার চক্রের হাতে বিক্রি হয়ে গেছেন। পরিবারগুলো তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছে এবং পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
প্রতিক্রিয়া ও প্রশাসনের পদক্ষেপ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ওসি মেহেদী হাসান বলেন, “রবিজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণা ও মানবপাচারের মামলা রয়েছে। আমরা সব অভিযোগের তদন্ত করছিই এবং দ্রুত তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ভুক্তভোগী পরিবারগুলো রবিজুলের কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন এবং নিজেদের হারানো টাকা ফেরত পেতে চেয়েছেন। পুলিশের পাশাপাশি সামাজিক সংস্থা এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এই বিষয়ে তৎপর রয়েছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও আশঙ্কা
বাংলাদেশে মানবপাচার ও অর্থনৈতিক প্রতারণা একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা। রবিজুলের মতো অপরাধীদের বিরুদ্ধে কড়া আইন প্রয়োগ না হলে সাধারণ মানুষ প্রতারণার শিকার হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের চক্রের মূল কারণ হলো দরিদ্রতা ও সচেতনতার অভাব।
এছাড়াও, দেশ থেকে বিদেশে যাত্রার ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ন্ত্রণ ও যাচাই-বাছাইয়ের অভাব মানবপাচার বৃদ্ধিতে সাহায্য করছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ ও জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি অপরিহার্য বলে মনে করছেন তারা।
বিশ্লেষণ
রবিজুলের গ্রেপ্তার দেশের মানবপাচার ও অর্থনৈতিক প্রতারণার বিরুদ্ধে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে এটি একক ঘটনা নয়, বরং বড় একটি চক্রের অংশ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের অপরাধ মোকাবিলায় শুধু আইনি ব্যবস্থা নয়, শিক্ষার মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি, আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ এবং স্থানীয় পর্যায়ে নজরদারির প্রয়োজন।
এছাড়া ভুক্তভোগীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা ও মনোরোগ পরামর্শের সুযোগ দেওয়াও জরুরি। এতে তারা দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন।
সংক্ষিপ্ত
কুষ্টিয়ার কুখ্যাত ৭ বিয়ে করা রবিজুল ইসলামকে মানবপাচার ও আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা থাকায় পুলিশ কঠোর তদন্ত চালাচ্ছে। এ ঘটনা দেশের মানবপাচার প্রতিরোধে গুরুত্ব বহন করে, তবে এটি একটি বড় সমস্যার মাত্র একাংশ। সরকারের পাশাপাশি জনগণের সচেতনতা ও সামাজিক সংস্থার ভূমিকা এখন আরও প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনা সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে। তবে এর স্থায়ী সমাধান পেতে হলে বহুমুখী উদ্যোগ নিতে হবে।
এম আর এম – ০৪৪০, Signalbd.com



