হাতিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাত ৯টার দিকে আড্ডায় মগ্ন চার কিশোরকে দেখে ডেকে নেন উপজেলা ভবনের কক্ষে। পরে খাতা-কলম দিয়ে বসিয়ে দেন পড়তে। ছবি তুলে পোস্ট করার পর বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে প্রশংসিত হয়।
চার কিশোরকে মোবাইলে গেম খেলতে দেখে দাড়ালেন ইউএনও
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আলাউদ্দিন শুক্রবার রাত ৯টার দিকে উপজেলা পরিষদ ভবনের পুকুরপাড়ে হাঁটছিলেন। হঠাৎ নজরে আসে চারজন কিশোর বসে আছে সিঁড়ির ধারে।
কাছে যেতেই দেখা গেল, সবাই ব্যস্ত মোবাইলে গেম খেলা নিয়ে। কারও হাতে বই নেই, আলোচনা পড়াশোনা নিয়েও নয়। ইউএনও তখন তাদের বয়স ও পরিচয় জানতে চান। জানা যায়, তারা সবাই সদ্য এসএসসি পাস করা ছাত্র, বয়স আনুমানিক ১৫–১৬ বছর।
ইউএনওর ব্যতিক্রমী উদ্যোগ: আড্ডার বদলে পড়াশোনা
ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলার পর ইউএনও আলাউদ্দিন সবাইকে ডেকে নিয়ে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আবাসিক ভবনের সামনে একটি কক্ষে। সেখানে রাখা হয় খাতা-কলম। বলা হয়, পড়তে বসতে হবে এবং একটি বিষয় মুখস্থ করে লিখে দেখাতে হবে।
ছাত্ররা প্রথমে একটু দ্বিধায় থাকলেও পরে তারা পড়াশোনায় মনোযোগ দেয়। বিষয়টি শুধু শাসন নয়, শিক্ষণীয়ও ছিল। এমন একটি ঘটনার মাধ্যমে রাতের সময়টিকে মূল্যবানভাবে কাজে লাগানোর একটি বার্তাও ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
ছাত্রদের সঙ্গে মানবিক আচরণ: শাস্তি নয়, উৎসাহ
ঘটনার সময় ইউএনও তাদের অভিভাবকদের খবর দেননি, কোনো শাস্তিও দেননি। বরং তিনি বুঝিয়ে দেন—তারা ছাত্র, তাদের দায়িত্ব পড়াশোনা করা।
তিনি বলেন, “তাদের অন্যভাবে শাস্তি দেওয়া যেত। কিন্তু আমি চেয়েছি, তারা উপলব্ধি করুক—এই বয়সে সময় নষ্ট না করে শিক্ষার দিকে মনোযোগী হওয়া কতটা জরুরি।”
রাত প্রায় ১০টার দিকে একজন ছাত্রের অভিভাবক এসে সবাইকে নিয়ে যান। ইউএনও তখন তাদের আরও ভালোভাবে পড়াশোনা করার পরামর্শ দেন।
সামাজিক মাধ্যমে প্রশংসার ঝড়
এই ব্যতিক্রমী ঘটনার একটি ছবি তুলে পোস্ট করা হয় উপজেলা প্রশাসনের অফিসিয়াল আইডিতে। দেখা যায়, চারজন ছাত্র টেবিলে বসে খাতা-কলম নিয়ে পড়ছে, পাশে ইউএনও দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
পোস্টটি মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই ইউএনওর এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান। কেউ লেখেন, “এইভাবে যদি সবাই ছাত্রদের সময় সচেতন করতো, তাহলে অনেকেই বদলে যেত।”
অন্য কেউ মন্তব্য করেন, “এটা শাস্তি নয়, এটা শিক্ষা। এমন উদ্যোগে সমাজে
শিক্ষার প্রতি সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ
ইউএনও আলাউদ্দিনের এই কর্মকাণ্ড শুধু একটি ঘটনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি এক ধরনের বার্তা—ছাত্রদের সময় সচেতনতা শেখানো। স্থানীয় অনেক অভিভাবক মনে করেন, আজকের কিশোরদের মাঝে সময় ব্যবস্থাপনার অভাব রয়েছে।
এ বিষয়ে এক স্থানীয় শিক্ষক বলেন, “ছাত্ররা মোবাইল গেমে আসক্ত হচ্ছে। সন্ধ্যার পর তারা বাইরে ঘোরাফেরা করে, যা তাদের পড়াশোনায় প্রভাব ফেলছে। ইউএনও সাহেবের এই পদক্ষেপ অন্য অভিভাবকদেরও সচেতন করবে।”
সন্ধ্যার পর আড্ডা নয়, পড়ার সময়
ইউএনও আলাউদ্দিন স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, “উপজেলা পরিষদের এলাকায় সন্ধ্যার পর কোনো ছাত্র আড্ডায় বসলে তার বিরুদ্ধে একই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তারা ছাত্র, এটাই ভেবে আজ শাসন নয়, শিক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আজ চারজনকে পড়তে বসানো হয়েছে। আমি চাই, সবাই যেন বোঝে—সন্ধ্যার পর আড্ডা নয়, বই-খাতা নিয়ে বসা দরকার।”
এই সিদ্ধান্তে এলাকাবাসী সন্তুষ্ট। অনেকেই মনে করছেন, এমন প্রয়াস আগামী প্রজন্মকে আরও দায়িত্ববান করে তুলবে।
পূর্বেও এমন দৃষ্টান্ত রেখেছেন ইউএনও
এটি প্রথম ঘটনা নয় যেখানে ইউএনও আলাউদ্দিন ব্যতিক্রমী ও মানবিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর আগেও স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সময় কাটানো, বই বিতরণ ও সচেতনতামূলক আলোচনা পরিচালনা করেছেন তিনি।
এ ধরনের কর্মকাণ্ড তার প্রশাসনিক দিক ছাড়াও একজন সমাজ সচেতন ব্যক্তির প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে।
হাতিয়ার স্থানীয় প্রশাসনের অনেকেই বলছেন, “সাধারণত এমন সময় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিস শেষ করে বিশ্রামে থাকেন। কিন্তু ইউএনও সাহেব রাতেও নজরদারি করছেন—এটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।”
উদাহরণ হয়ে থাকবেন ইউএনও
ছাত্রদের সময় সচেতন করে পড়তে বসানো, শুধু এক রাতের ঘটনা নয়—এটি সামাজিক দায়বদ্ধতার একটি অনন্য নজির। সমাজে এমন ইতিবাচক পদক্ষেপের প্রয়োজন ছিল, যা কিশোরদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনবে।
প্রশাসনের কর্মকর্তারা যদি এভাবে মাঠে সক্রিয় থাকেন, তাহলে সমাজ থেকে কিশোর অপরাধ, সময় অপচয় ও পড়াশোনার অনীহা অনেকাংশেই কমে আসবে।
তবে প্রশ্ন রয়ে যায়—দেশের অন্যান্য উপজেলার কর্মকর্তারা কি এমন মানবিক ও সচেতন উদ্যোগ নিতে প্রস্তুত?
এম আর এম – ০৪০৯, Signalbd.com



