আবহাওয়া

ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র গরম, অনুভূত হচ্ছে ৪১° তাপমাত্রা

Advertisement

দেশজুড়ে চলমান গরমের তীব্রতা অনেকের জন্য এক বড় অসুবিধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলমান পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, তাপমাত্রা যদিও আনুমানিক ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, তবুও অনেক এলাকায় মানুষ গরমকে ৪১ ডিগ্রির সমতুল্য অনুভব করছেন। বিশেষত রাজধানী ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল ও কিছু উত্তরাঞ্চলে গরমের প্রভাব সবচেয়ে বেশি।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ ড. মো. ওমর ফারুক এই পরিস্থিতি নিয়ে জানান, “বর্তমান সময়ে আবহাওয়ার অবস্থা এমন যে, দিন-রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য খুব কম। বর্ষার শেষের সময় এই ধরনের তীব্র গরম স্বাভাবিক হলেও, বাতাসে আর্দ্রতা ও জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি আরও সহনীয় নয়। রাতেও তাপমাত্রা অনেক স্থানে ২৭ ডিগ্রির উপরে অবস্থান করছে। যেমন, গতকাল রাতের তাপমাত্রা ছিল ২৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে রাতেও গরমের অনুভূতি বেশি।”

কেন ৩১ ডিগ্রির তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রির মতো অনুভূত হচ্ছে?

ড. ওমর ফারুকের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, মূলত তিনটি কারণের জন্য তাপমাত্রা বেশি অনুভূত হচ্ছে—

১. বৃষ্টির অনিয়মিত চলাচল: টানা বৃষ্টি নেই, কিছু সময় হালকা বৃষ্টি হওয়ার পর রোদ দেখা দেয়। ফলে মাটিতে তাপ তৈরি হয় এবং বাতাসকে আরও উষ্ণ করে।
২. বাতাসে আর্দ্রতা বৃদ্ধি: আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকলে আমাদের শরীরের তাপমিতি নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। ফলে আমরা গরম বেশি অনুভব করি।
৩. জলীয়বাষ্পের প্রভাব: বাতাসে পানি ও বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় শরীরের পায়ে ঘাম শুকিয়ে ওঠে না। এটি তাপের অনুভূতিকে বাড়িয়ে দেয়।

অতএব, ৩১ ডিগ্রির তাপমাত্রা অনেকের জন্য ৪১ ডিগ্রির সমতুল্য মনে হচ্ছে।

দেশজুড়ে গরমের পরিস্থিতি

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গরমের বর্তমান চিত্রটি এমন—

  • ঢাকা: ৩১ ডিগ্রি তাপমাত্রা, অনুভূত ৪১ ডিগ্রি
  • চট্টগ্রাম: ৩২ ডিগ্রি তাপমাত্রা, অনুভূত ৪২ ডিগ্রি
  • রাজশাহী: ৩৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা, অনুভূত ৪৩ ডিগ্রি
  • বরিশাল: ৩১ ডিগ্রি তাপমাত্রা, অনুভূত ৪০ ডিগ্রি
  • সিলেট: ৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রা, অনুভূত ৩৮ ডিগ্রি

এটি স্পষ্ট যে, দেশের অভ্যন্তরে তাপমাত্রার পার্থক্য অনেক বেশি নয়, তবে আর্দ্রতার কারণে গরম অনুভূত হচ্ছে সাধারণের তুলনায় অনেক বেশি।

স্বাস্থ্য সতর্কতা ও পরামর্শ

গরমের এই তীব্রতায় বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও গর্ভবতী মহিলাদের জন্য সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:

  • প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
  • রোদ থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে টুপি বা হালকা কাপড় ব্যবহার করুন।
  • দুপুরের সময় সরাসরি রোদ এড়িয়ে চলুন।
  • বাইরে গেলে হালকা এবং শ্বাসপ্রশ্বাস সহজে করা যায় এমন কাপড় ব্যবহার করুন।
  • ঘরে থাকা অবস্থায় ভ্যান বা ফ্যান ব্যবহার করুন।
  • গরমের কারণে মাথা ব্যথা, ঘাম বেশি হওয়া, বমি বা দুর্বলতার মতো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী ৩-৪ দিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রা প্রায় একই থাকবে। মাঝে মাঝে হালকা বৃষ্টি হতে পারে, তবে গরম কমবে না। বিশেষত ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা অঞ্চলে তাপমাত্রা ৩১-৩৩ ডিগ্রির মধ্যে থাকবে, অনুভূত তাপমাত্রা ৪০-৪৩ ডিগ্রি পর্যন্ত পৌঁছতে পারে।

ড. মো. ওমর ফারুক জানান, “বর্তমান সময়ে টানা বৃষ্টি না হওয়ায় এবং আর্দ্রতা বেশি থাকার কারণে গরম অনেকের জন্য সহনীয় নয়। বাতাসে আর্দ্রতা ও জলীয়বাষ্পের পরিমাণ কমালে গরম কম অনুভূত হবে। তবে এটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার অংশ, তাই আমরা সবাই সতর্ক থাকা ছাড়া কিছুই করতে পারি না।”

গরমের প্রভাব

গরমের এই তীব্রতায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব দেখা যাচ্ছে—

  1. জনস্বাস্থ্য: গরমে ডিহাইড্রেশন ও হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  2. কৃষি: ফসলের বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে, বিশেষত ধান ও শাকসবজি।
  3. পরিবহন: রাস্তাঘাটে ধূলা ও তাপের কারণে যানবাহনের যাত্রা অসুবিধাজনক হয়।
  4. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: গরমের কারণে স্কুল ও কলেজে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা অসুবিধায় পড়তে পারেন।

দেশের অন্য অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত তথ্য

  • চট্টগ্রাম: শহরের বিভিন্ন এলাকায় মানুষ ফ্যান ও এসি ব্যবহার করে গরম সামলাচ্ছে।
  • রাজশাহী: দুপুরে রাস্তায় মানুষ কম বের হচ্ছেন, গরমের কারণে বহিরঙ্গন কার্যক্রম সীমিত।
  • সিলেট: পাহাড়ি এলাকায় তুলনামূলক ঠান্ডা থাকলেও, শহরাঞ্চলে আর্দ্রতার কারণে গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে।

গরমে সাধারণ মানুষের কাহিনী

ঢাকা শহরের বাসিন্দা সাবিনা আক্তার জানান, “আজ সকাল থেকে গরমের তীব্রতা বেড়েছে। বাইরে বের হওয়া খুব কষ্টকর। ফ্যানের বাতাসও সহনীয় মনে হয় না। পানি বেশি খেতে হচ্ছে।”

চট্টগ্রামের এক রিকশাচালক বলেন, “দুপুরে রোদে থাকলে ঘাম থামছে না। গরমে কাজ করাও কঠিন হয়ে গেছে।”

সমাধান ও সতর্কতা

গরম কমানোর জন্য আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ব্যক্তি পর্যায়ে সতর্কতা নেওয়া জরুরি। ঘরে শীতল পরিবেশ তৈরি করতে, জলীয়বাষ্প নিয়ন্ত্রণ ও সঠিক হাইড্রেশন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সরকারি পর্যায়ে, বিশেষ করে শহুরে এলাকায় হালকা ছাউনির ব্যবস্থা ও সবুজায়ন বৃদ্ধি করা যেতে পারে।

বর্তমান সময়ে গরমের তীব্রতা খুব বেশি। ৩১ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকলেও আমাদের অনুভূত তাপ ৪১ ডিগ্রির সমতুল্য। বর্ষার শেষ পর্যায়, আর্দ্রতা ও জলীয়বাষ্পের বেশি পরিমাণই এই পরিস্থিতির মূল কারণ। স্বাস্থ্য সচেতনতা, হাইড্রেশন এবং রোদ থেকে সুরক্ষা নেওয়াই এখন সবচেয়ে জরুরি। আগামী কয়েকদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একই ধরনের গরম থাকতে পারে।

MAH – 12700,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button