আঞ্চলিক

চুরি করার পর পুলিশ সদস্যের স্ত্রীকে ধর্ষণ

Advertisement

কক্সবাজারের চকরিয়ায় গভীর রাতে চুরি করতে ঢুকে এক পুলিশ সদস্যের স্ত্রীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার সময় স্বামী কর্মস্থলে ছিলেন, ঘরে ছিল দুই শিশুসন্তান। পুলিশ বলছে, ঘটনার তদন্ত চলছে, অভিযুক্তকে শনাক্তে অভিযান শুরু হয়েছে।

ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার দিবাগত রাত আনুমানিক ৩টার দিকে এক অজ্ঞাতপরিচয় যুবক রান্নাঘরের জানালা দিয়ে বাসার ভেতরে প্রবেশ করে। তার হাতে ছিল একটি ধারালো দা ও একটি টর্চলাইট। ঢুকেই সে ঘুমন্ত নারীকে অস্ত্র দেখিয়ে ভয়ভীতি দেখায় এবং তার কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এরপর তাকে রান্নাঘরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে।

ঘটনার সময় বাসায় ছিলেন ওই নারীর দুটি ছোট সন্তান। ঘটনার পর সন্তানদের কান্নাকাটি শুনে পাশের বাসার ভাড়াটিয়ারা ছুটে আসেন। রাতেই নির্যাতিতার স্বামী কর্মস্থল থেকে এসে থানায় যান। পরদিন সকালে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ, চুরি এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “চুরি করতে এসে এক যুবক পুলিশের স্ত্রীর উপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে। আমরা ঘটনার তদন্ত করছি এবং দ্রুত অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।”

ঘটনার পেছনের প্রেক্ষাপট

ভুক্তভোগী পরিবারটি মাত্র তিন মাস আগে এই ভাড়া বাসায় উঠেছে বলে জানা গেছে। পুলিশ সদস্য স্বামীর কর্মস্থল বাইরে হওয়ায় বাসায় প্রায়ই তিনি অনুপস্থিত থাকেন। ফলে স্ত্রী ও সন্তানরা বাসায় একা থাকতেন। এই সুযোগকেই কাজে লাগায় দুর্বৃত্ত।

স্থানীয়দের মতে, ওই এলাকায় সিসিটিভি কভারেজ খুব সীমিত, যা অপরাধীর শনাক্তকরণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। এর আগেও ওই এলাকায় চুরির ঘটনা ঘটেছে, তবে এতটা ভয়াবহ কিছু ঘটেনি।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ

ঘটনাটি সামনে আসার পর স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ঘটনা নিয়ে চরম প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বিশেষ করে একজন পুলিশ সদস্যের পরিবারের উপর এমন বর্বরতা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

এছাড়া এই ঘটনার ফলে নারীদের নিরাপত্তা ও বাসা ভাড়া নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর দাবি জোরালো হচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, বাসা ভাড়ার সময় ভাড়াটিয়াদের পরিচয় যাচাই এবং ভবনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা দরকার।

পুলিশের তদন্ত ও অগ্রগতি

চকরিয়া থানার ওসি জানিয়েছেন, তারা মামলাটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখছেন। পুলিশ ইতিমধ্যেই আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ শুরু করেছে এবং প্রযুক্তিগত সহায়তায় দুর্বৃত্তকে শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

তিনি আরও বলেন, “আসামিকে ধরতে পুলিশের একাধিক ইউনিট কাজ করছে। যেহেতু ঘটনাটি গভীর রাতে ঘটেছে, তাই অপরাধীর গতিবিধি শনাক্তে সময় লাগছে।”

নিরাপত্তা ঝুঁকি ও করণীয়

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধুমাত্র পুলিশের উপর ভরসা করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। নাগরিকদেরও সচেতনতা বাড়াতে হবে। বাসায় নিরাপত্তা ক্যামেরা স্থাপন, জানালা-দরজায় নিরাপত্তা লক ব্যবহার এবং অপরিচিত কাউকে সন্দেহজনক দেখলে দ্রুত পুলিশকে জানানো উচিত।

এছাড়া গৃহবধূদের জন্য ‘সেল্ফ ডিফেন্স’ প্রশিক্ষণ এবং বাসাবাড়িতে উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় নারী অধিকার কর্মীরা।

“চুরি করতে এসে এমন পাশবিকতা, এটা শুধু অপরাধ নয় — এটি মানবতাবিরোধী কাজ। অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা উচিত”—স্থানীয় এক অধিকারকর্মী।

ঘটনাটির সংক্ষিপ্ত বিবরণ

কক্সবাজার জেলার চকরিয়া পৌরসভার একটি ভাড়া বাসায় চুরির পর এক ভয়ংকর ও লজ্জাজনক ঘটনার জন্ম দিয়েছে এক দুর্বৃত্ত। সোমবার গভীর রাতে পুলিশ সদস্যের অনুপস্থিতিতে তার স্ত্রীকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করা হয়। ঘটনায় চকরিয়া থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, তারা মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে এবং অভিযুক্তকে শনাক্তে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

চকরিয়ায় পুলিশের স্ত্রীর উপর ঘটে যাওয়া এই ধর্ষণের ঘটনা আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং সমাজে নৈতিক অবক্ষয়ের চিত্র স্পষ্ট করে দিয়েছে। প্রশাসনের তৎপরতা প্রশংসনীয় হলেও, সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি হয়ে উঠেছে।

তবে প্রশ্ন থেকে যায়, অপরাধীদের এমন সাহস কোথা থেকে আসে — এবং আমরা কি পারবো ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে?

এম আর এম – ০৩৭৮, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button