আঞ্চলিক

গোপালগঞ্জে সাধারণ জনগণ কেউ ঘর থেকে বের হবেন না: আসিফ

Advertisement

গোপালগঞ্জে ক্রমবর্ধমান অশান্তি ও সহিংসতার মধ্যেই স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া মঙ্গলবার গোপালগঞ্জবাসীর প্রতি বিশেষ আহ্বান জানিয়েছেন, ‘জীবন-মৃত্যুর পরিস্থিতি না হলে কেউ যেন ঘর থেকে বের না হয়’। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাত ৮টা থেকে পরদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।

গোপালগঞ্জে কারফিউয়ের ঘোষণা ও পরিস্থিতির বিস্তারিত

গোপালগঞ্জে নিরাপত্তা পরিস্থিতি দিন দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। চলতি মাসের শুরু থেকেই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কর্মসূচি নিয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। গত বুধবার রাতে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে সবাইকে অবিলম্বে নিরাপদে থাকতে এবং জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে গোপালগঞ্জে রাত ৮টা থেকে পরদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “জীবন-মৃত্যুর পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলে কেউ যেন বাহিরে না আসে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে, এবং নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধানরা নিয়মিত মনিটরিং ও নির্দেশনা দিচ্ছেন।

ঘটনার পটভূমি: এনসিপি সমাবেশ ও সহিংসতা

গোপালগঞ্জে এই অস্থিরতার পেছনে রয়েছে এনসিপি কর্মসূচির সাথে সংশ্লিষ্ট সহিংস ঘটনা। জুলাই মাসের শুরু থেকেই ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে এনসিপির পক্ষ থেকে বিভিন্ন সমাবেশ ও পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। গত বুধবার এনসিপির একটি সমাবেশস্থলে ২০০-৩০০ জন লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রবেশ করে হামলা চালায় স্থানীয় কিছু গোষ্ঠী, যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে রূপ নেয়।

ঘটনাস্থলে জেলা পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমানসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উপস্থিত ছিলেন। হামলাকারীরা মঞ্চের চেয়ার ভাঙচুর, ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা এবং নেতাকর্মীদের উপর আক্রমণ চালায়। পরবর্তীতে পুলিশ ও নেতাকর্মীদের যৌথ ধাওয়া পালানোর ফলে হামলাকারীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এমন সহিংসতার কারণে প্রশাসন বাধ্য হয়ে ১৪৪ ধারা জারি করে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারফিউ ঘোষণা দেয়।

সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও প্রশাসনের পদক্ষেপ

এই অশান্তিকর পরিস্থিতিতে গোপালগঞ্জের সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে। পুলিশ ও র‌্যাবের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে, বিশেষ মনিটরিং ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ জানান, “আমরা চাই জনগণ নিরাপদ থাকুক। কোনোভাবেই সহিংসতা যাতে বাড়তে না পারে সে জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। নিষিদ্ধ সংগঠনের সক্রিয় সদস্যদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্যান্য উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিয়মিত পরিস্থিতি মূল্যায়ন করছেন এবং প্রয়োজনে আরও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক

এনসিপি এই সহিংসতা নিয়ে অভিযোগ করেছে যে, হামলার পেছনে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকরা রয়েছেন। তারা বলছে, তাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করার জন্য এই হামলা সংগঠিত হয়েছে, যা গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘনের সমতুল্য।

অন্যদিকে, প্রশাসন ও সরকার এ ধরনের সহিংসতাকে কখনোই গ্রহণযোগ্য মনে করেন না। তারা বলছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে এবং দোষীদের দ্রুত বিচার করা হবে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, গোপালগঞ্জের এই পরিস্থিতি দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক অস্থিরতার একটি অংশ। যারা শান্তি বিনষ্ট করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

ভবিষ্যৎ ভাবনা ও পরিস্থিতির সম্ভাব্য মোড়

গোপালগঞ্জে কারফিউ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকায় সাময়িক শান্তি ফেরায় আশার আলো দেখা দিয়েছে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই অস্থিরতার পেছনে রাজনৈতিক ও সামাজিক গভীর সমস্যা বিদ্যমান। শান্তি স্থাপনের জন্য শুধু নিরাপত্তা জোরদার করাই যথেষ্ট নয়; সামাজিক সংহতি ও সমঝোতার বিকল্প নেই।

স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতারা এবং সাধারণ মানুষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে যেন গোপালগঞ্জ আবারও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে পায়। নতুবা, পুনরায় সংঘর্ষ ও সহিংসতা দেখা দিতে পারে যা জনজীবন ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
এম আর এম – ০৩৭৫, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button