সাত জেলায় ঘণ্টায় ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা, ৪ বিভাগে অতিবৃষ্টি

সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঝড়ো হাওয়া ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ সাত জেলায়। পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের শঙ্কাও থাকছে।
ঘটনার বিস্তারিত ও সতর্কতা
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বিকেলে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এক পূর্বাভাস বার্তায় জানিয়েছে, সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে রাত ১টার মধ্যে খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার অঞ্চলের ওপর দিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিমি বেগে অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এই ঝড়ো হাওয়ার সময় বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়ার পরিবর্তন
গত কয়েকদিন ধরেই দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা বাড়ছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে। ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেড়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর এর আগেও জানিয়েছিল, জুলাই মাসের শুরুতে একাধিক লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে যা সময়বিশেষে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। সেই আশঙ্কাই এখন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে।
চার বিভাগে অতিবৃষ্টি ও তার প্রভাব
আবহাওয়ার পৃথক এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তার কারণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে।
বিশেষ করে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকাগুলোতে ভূমিধসের ঝুঁকি রয়েছে। অতিবৃষ্টির ফলে নগরজীবনে দুর্ভোগ দেখা দিতে পারে। ঢাকার কিছু নিম্নাঞ্চল, খুলনা ও চট্টগ্রাম শহরের নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে।
সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংখ্যা ও পরিসংখ্যান: ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস
আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার বিকাল থেকে রাত ১টার মধ্যে ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিমি হতে পারে।
একই সময় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে ৭০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে। ঢাকায় ৪০ থেকে ৫০ মিলিমিটার এবং খুলনায় ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে।
গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা এখন পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ।
বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মত
জলবায়ু বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের মৌসুমি লঘুচাপ জুলাই মাসে হয়ে থাকে, তবে সম্প্রতি এর আচরণ কিছুটা অপ্রত্যাশিত হয়ে উঠেছে।
বুয়েটের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তন গবেষণা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফারহানা ইসলাম জানান,
“সমুদ্রগর্ভে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে লঘুচাপগুলো এখন আগের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠছে, ফলে ঝড় ও অতিবৃষ্টি একইসাথে দেখা দিচ্ছে।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী কয়েকদিন এই আবহাওয়ার প্রভাব থাকতে পারে, এবং জনগণকে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
“চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের জনগণকে সর্তক থাকতে বলা হচ্ছে, কারণ অতিবৃষ্টির ফলে হঠাৎ ভূমিধস বা জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে।” — আবহাওয়া অধিদপ্তরের মুখপাত্র
ভবিষ্যৎ পূর্বাভাস
বর্তমান মৌসুমি বায়ু ও সাগরের অবস্থার কারণে দেশের দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে ঝড়বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। জনগণকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আপডেট নজরে রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বৃষ্টিপাত ও ঝড়ের কারণে যাতায়াতে বিঘ্ন, বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও স্থানীয় দুর্ভোগ দেখা দিতে পারে।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি কীভাবে মোড় নেবে তা নির্ভর করছে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার আবহাওয়ার গতিপথ ও লঘুচাপের শক্তি বৃদ্ধির ওপর।
সারসংক্ষেপ
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সাতটি জেলার ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে চারটি বিভাগে অতি ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনাও রয়েছে। এই অবস্থায় সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এম আর এম – ০২২৫, Signalbd.com