৫ বছর ধরে নিজের পোষা সাপের ছোবলে সাপুড়ের মর্মান্তিক মৃত্যু

ভোলার মনপুরায় ঘটেছে হৃদয়বিদারক এই ঘটনা। শাকিল নামের এক তরুণ সাপুড়ে পাঁচ বছর ধরে লালন-পালন করছিলেন একটি গোখরা সাপ। অবশেষে সেই সাপের ছোবলেই প্রাণ গেল তার। পরিবার ও স্থানীয়দের মাঝে শোকের ছায়া।
অপ্রত্যাশিত এক ভোর: প্রিয় সাপের ছোবলে মৃত্যু
ভোলার মনপুরা উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। ২৬ বছর বয়সী শাকিল নামের এক সাপুড়ে নিজের পোষা সাপের ছোবলে মারা গেছেন। গত রবিবার ভোর ৪টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। শাকিল পেশাগতভাবে সাপ খেলা দেখাতেন এবং পাঁচ বছর ধরে একটি গোখরা সাপ লালন-পালন করছিলেন।
কীভাবে ঘটল দুর্ঘটনা
শনিবার (৫ জুলাই) বিকেলে তালতলা বেড়িবাঁধ এলাকায় প্রতিদিনের মতো সাপ খেলা দেখাতে যান শাকিল। হঠাৎই সবার সামনে নিজের পোষা গোখরা সাপটি তার বাম পায়ের রানে ছোবল মারে। ঘটনার পরপরই তিনি বিষ নামানোর চেষ্টা করেন, তবে সফল হননি। দ্রুত স্থানীয় লালু ওঝার কাছে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে বাড়ি পাঠানো হয়।
কিন্তু বাড়ি ফেরার কিছুক্ষণ পরই শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তাকে মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়, যেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর ৪টায় মারা যান তিনি।
প্রিয় সাপই কেড়ে নিল প্রাণ: পরিবারের শোক ও স্থানীয় প্রতিক্রিয়া
শাকিলের পরিবার ও এলাকাবাসী শোকে মুহ্যমান। স্থানীয়দের মতে, তিনি পেশায় একজন দক্ষ সাপুড়ে ছিলেন। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে যে সাপটিকে সন্তানতুল্যভাবে লালন-পালন করছিলেন, সেই সাপই আজ তার জীবনের অবসান ঘটিয়েছে।
স্থানীয় একজন বলেন,
“ওই সাপটা ছাড়া শাকিলের দিন চলতো না। কী যে মায়া ছিল দু’জনের মধ্যে! কে জানত সেদিনই হবে শেষ খেলা।”
চিকিৎসকের বক্তব্য: সময়মতো চিকিৎসা পেলে হয়তো বাঁচানো যেত
মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. মেহেদী হাসান বলেন,
“রোগী যখন হাসপাতালে আসে, ততক্ষণে সাপের বিষ পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা দ্রুত এন্টিভেনম প্রয়োগ করি, কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে।”
চিকিৎসকের মতে, সাপের ছোবলের পর যেকোনো রোগীকে অবিলম্বে চিকিৎসা কেন্দ্রে নেওয়া উচিত। কুসংস্কার বা ঝাড়ফুঁকের উপর নির্ভর না করে আধুনিক চিকিৎসার দিকেই ঝুঁকতে হবে।
কীভাবে শুরু হয়েছিল এই সম্পর্ক
শাকিল প্রায় পাঁচ বছর আগে একদিন জঙ্গলে একটি গোখরা সাপ ধরেন। সেখান থেকেই শুরু হয় তাদের সম্পর্ক। ধীরে ধীরে সাপটিকে প্রশিক্ষিত করে খেলার উপযোগী করেন তিনি। অনেক সময় দেখা যেত, সাপটি শাকিলের কাঁধে উঠে বসে থাকত, খেলা শেষে আবার পাত্রে ফিরে যেত।
এই সম্পর্ক ছিল যেন এক নিরব বন্ধনের প্রতীক। কিন্তু সেই সম্পর্কই আজ মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ালো।
সতর্কবার্তা: অন্য সাপুড়েদের জন্য শিক্ষা
এই মর্মান্তিক ঘটনা শুধু একটি মৃত্যু নয়, বরং একটি সতর্কবার্তা। সাপ যতই পোষ মানুক, তার মৌলিক স্বভাব যে বদলায় না, এই ঘটনাই তা প্রমাণ করলো।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন পেশায় থাকা ব্যক্তিদের সবসময় সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজন হলে প্রতিবার খেলা শুরুর আগেই চিকিৎসার প্রস্তুতি রাখতে হবে, যাতে জরুরি সময় দেরি না হয়।
ভালোবাসার মায়া, কিন্তু বাস্তব ছিল নির্মম
শাকিলের মৃত্যু কেবল একটি দুর্ঘটনা নয়; এটি ভালোবাসা ও মায়ার জালে জড়িয়ে থাকা বাস্তবতার নির্মমতা। দীর্ঘ পাঁচ বছরের বন্ধন এক মুহূর্তেই ছিন্ন হলো।
তবে প্রশ্ন রয়ে যায়—কেউ কি আদৌ একটি বিষধর প্রাণীকে পুরোপুরি পোষ মানাতে পারে? নাকি এটি কেবল একপাক্ষিক সম্পর্কের ভ্রান্তি ছিল?
এম আর এম – ০২০১, Signalbd.com