ওপার থেকে আর একটি গুলি চললে সীমান্ত অভিমুখে লংমার্চ: নাহিদ

চাঁপাইনবাবগঞ্জের পথসভায় বক্তব্য দিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন—ভারতীয় বিএসএফের সীমান্তে আগ্রাসন আর মেনে নেওয়া হবে না। আর একটি গুলি ছোড়া হলে সীমান্ত অভিমুখে লংমার্চ ঘোষণা করা হবে। দেশের প্রতি ইঞ্চি ভূমি রক্ষায় প্রস্তুত রয়েছে জনগণ।
ঘটনার সারসংক্ষেপ:
আজ রোববার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের সামনে অনুষ্ঠিত পথসভায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “সীমান্তে আর একটি গুলি ছোড়া হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সীমান্ত অভিমুখে লংমার্চ ঘোষণা করা হবে।” ভারতীয় বিএসএফের সীমান্তে হামলা, গ্রেনেড ছোড়া, বোমার বিস্ফোরণ—এসবকে ‘আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন।
ঘটনার বিস্তারিত:
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শান্তিমোড় থেকে শুরু হয়ে বড়ইন্দারা মোড়, নিমতলা হয়ে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের সামনে গিয়ে শেষ হয় ‘জুলাই পদযাত্রা’। এরপর কলেজ চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় একটি পথসভা, যেখানে বক্তব্য দেন নাহিদ ইসলামসহ এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
নাহিদ ইসলাম বলেন,
“সীমান্তে অনেক বাহাদুরি হয়ে গেছে দাদাদের। এবার যদি আর একটি গুলি ছোড়া হয়, আমাদের ভাইদের হত্যার চেষ্টা চালানো হয়—তাহলে আমরা আর বসে থাকবো না। আমরা ঘোষণা করবো সীমান্ত অভিমুখে লংমার্চ। আমাদের সীমান্ত আমরাই রক্ষা করবো।”
তিনি আরও বলেন, “দেশকে নতুনভাবে গড়ার জন্য আমরা ৬৪ জেলায় পদযাত্রা করছি। দেশ পুনর্গঠন, মৌলিক সংস্কার এবং ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা একত্রিত হয়েছি।”
জুলাই অভ্যুত্থান’ প্রসঙ্গ:
এনসিপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত তথাকথিত ‘জুলাই অভ্যুত্থান’-এর স্মরণে এই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। তাদের দাবি, ওই ঘটনার মাধ্যমে দেশের জনগণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। সেই আত্মত্যাগকে স্মরণ করে দেশের জন্য নতুন বন্দোবস্ত ও দিকনির্দেশনার প্রয়োজন রয়েছে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “নতুন বন্দোবস্তের মাধ্যমে আমরা চাই, শহীদদের আত্মত্যাগের মর্যাদা যেন নিশ্চিত হয়। সেই সাথে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদ বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।”
সীমান্ত পরিস্থিতি ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রতীকী গুরুত্ব:
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা দীর্ঘদিন ধরেই সীমান্ত পরিস্থিতি ও বিএসএফের আগ্রাসনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। এই জেলা প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন,
“চাঁপাইনবাবগঞ্জ মানে সীমান্তে কাস্তে হাতে বসে থাকা কৃষক। আমরা সেই কৃষকের সন্তান। বুক চিতিয়ে আমরা দাঁড়িয়েছি, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। এখন সময় এসেছে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিবাদ জানাবার।”
তিনি আরও বলেন, “চাঁপাইনবাবগঞ্জ আমের রাজধানী। অথচ কোনো সরকার এটিকে শিল্পের পর্যায়ে উন্নীত করতে চায়নি। রেশমশিল্প ছিল, সেটাও আজ বিলুপ্তির পথে।”
জনগণের প্রতি আহ্বান ও জাতীয় শিল্প প্রসঙ্গ:
পথসভায় নাহিদ ইসলাম বলেন, দেশের অর্থনীতিতে কৃষি ও কুটিরশিল্পের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। অথচ যুগের পর যুগ সেগুলোকে অবহেলা করা হয়েছে।
“আমরা চাই, জাতীয় শিল্প ও কৃষিকে রক্ষা করা হোক। আমাদের কুটির শিল্পকে আবার পুনর্জীবিত করতে হবে।” —এই আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আন্তঃনগর ট্রেনের দাবি সমর্থন করে বলেন, “চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ deserves উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, যা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।”
সভায় উপস্থিত নেতা ও কর্মসূচির পরবর্তী ধাপ:
এই কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন এবং তাসনীম জারা।
পথসভা শেষে দলীয় গাড়িবহর রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়। আগামী দিনগুলোতেও অন্যান্য জেলাগুলোতে এই পদযাত্রা চলবে বলে জানানো হয়।
“আর একটি গুলিও যদি সীমান্তে চলে, আমরা আর বসে থাকবো না—আমরা লংমার্চে যাব।” —নাহিদ ইসলাম, আহ্বায়ক, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)
ভবিষ্যতের ইঙ্গিত
জাতীয় নাগরিক পার্টির এই হুঁশিয়ারি কতটা কার্যকর হবে, সেটি নির্ভর করছে আগামি সময়ের রাজনৈতিক ও সীমান্ত পরিস্থিতির ওপর। তবে সীমান্তে যেকোনো নতুন উত্তেজনা সত্যিই এ অঞ্চলে একটি বড় ধরণের গণপ্রতিরোধের সূচনা করতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মতো স্পর্শকাতর সীমান্ত জেলা থেকে এ ধরনের বার্তা সরকার ও প্রশাসনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্ক সংকেত হয়ে উঠতে পারে।
এম আর এম – ০১৮৭, Signalbd.com