ঘরের মেঝেতে স্ত্রীর আর রাস্তার পাশে স্বামীর মরদেহ, নির্বাক ৮ বছরের ছেলে

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ফুলতলা চা বাগানে ঘটেছে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। ঘরের মেঝেতে পাওয়া গেল স্ত্রী সারি বুনার্জীর নিথর দেহ, আর ঘরের সামনের রাস্তায় পড়ে ছিল স্বামী দীলিপ বুনার্জীর মরদেহ। আট বছরের ছেলে লিটনের চোখের সামনে চিরতরে নিভে গেল তার বাবা-মা।
স্বামী দীলিপ বুনার্জী ও স্ত্রী সারি বুনার্জীর মরদেহ তাদের বাড়ির ভেতর ও সামনে থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। আট বছরের ছেলে লিটনের চোখে-মুখে তখন শুধুই শোক ও প্রশ্ন—কেন এমন হলো?
ঘটনা বিস্তারিত
জানা গেছে, শুক্রবার রাতের খাবার শেষে স্বামী-স্ত্রী ও তাদের একমাত্র ছেলে লিটন ঘুমিয়ে পড়েন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঘুম ভাঙার পর লিটন তার মাকে ঘরের মেঝেতে নিথর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। মাকে ডাকার পরও কোনো সাড়া না পেয়ে সে চারদিকে খোঁজাখুঁজি করে। এরপর ঘরের সামনের রাস্তায় গিয়ে দেখে, তার বাবা দীলিপ বুনার্জীর দেহও নিথরভাবে পড়ে আছে।
প্রতিবেশীদের জানালে তারা তৎক্ষণাৎ থানায় খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুইটি মরদেহ উদ্ধার করে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে পাঠায় ময়নাতদন্তের জন্য।
প্রাথমিক তদন্ত ও পুলিশের বক্তব্য
জুড়ী থানার ওসি মার্শেদুল আলম ভূইয়া জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, স্বামী-স্ত্রী বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। তাদের মুখ থেকে বিষের গন্ধ পাওয়া গেছে। তবে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঘরে কোনো ধরনের রক্তের দাগ বা সংঘর্ষের আলামত পাওয়া যায়নি। কোনো আত্মীয়ের সঙ্গে শত্রুতা বা সামাজিক বিরোধের তথ্য এখনো মেলেনি।
পরিবারের অবস্থা ও প্রতিবেশীদের প্রতিক্রিয়া
ঘটনাটি গোটা চা বাগান এলাকায় চরম শোকের ছায়া ফেলেছে। প্রতিবেশীরা জানান, দীলিপ ও সারি শান্ত ও নিরীহ স্বভাবের দম্পতি ছিলেন। তাদের মধ্যে কোনো ঝগড়া-বিবাদের ঘটনা কেউ কখনও দেখেনি। লিটনের মুখেও একই কথা—সে জানায়, বাবা-মার মধ্যে কোনো সময় ঝগড়া হয়নি।
শিশুটির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ
মাত্র ৮ বছরের লিটনের জীবনে এক রাতেই নেমে এলো অন্ধকার। মা-বাবা দুজনকেই হারিয়ে এখন সে সম্পূর্ণ একা। সমাজসেবীরা বলছেন, শিশুটির মানসিক স্বাস্থ্য এবং নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
পারিবারিক অবস্থা
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি দীলিপ বুনার্জীর কাজের ক্ষেত্রেও কিছু সমস্যা চলছিল। তাতে হয়তো মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়েছিল। তবে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। প্রতিবেশীদের কেউ কেউ বলছেন, দম্পতির মাঝে ভেতরে ভেতরে কোনো অজানা বিষণ্নতা কাজ করছিল কিনা—তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠছে।
“স্বামী-স্ত্রীর মুখে বিষের গন্ধ ছিল। তবে আত্মহত্যা না কি অন্য কিছু, তা ময়নাতদন্তের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।” — মার্শেদুল আলম ভূইয়া, ওসি, জুড়ী থানা
সারসংক্ষেপ
এখন পর্যন্ত এই রহস্যজনক মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা না গেলেও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে। তবে আট বছরের শিশু লিটনের চোখে দেখা এই ভয়াবহ দৃশ্য সারাজীবনের জন্য দাগ কেটে গেল। প্রশ্ন উঠছে—একটি পরিবার কীভাবে এক রাতেই ধ্বংস হয়ে গেল? সমাজ ও প্রশাসনের যৌথভাবে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে আরও সচেতন হতে হবে।
এম আর এম – ০১৮২, Signalbd.com