আঞ্চলিক

ভুয়া এসআই সেজে থানায় তরুণী কনস্টেবলকে ডাকলেন ‘স্যার’

বোরকার নিচে পুলিশের পোশাক পরে নিজেকে উপ-পরিদর্শক (এসআই) পরিচয় দেন গাজীপুরের এক তরুণী। তবে থানায় এক কনস্টেবলকে ‘স্যার’ সম্বোধন করায় ধরা পড়ে যান। পরে পুলিশ নিশ্চিত হয়, তিনি ভুয়া পুলিশ। তার বাসা থেকেও উদ্ধার হয় পুলিশের ইউনিফর্ম ও সরঞ্জাম।

উদ্দেশ্য ছিল পাওনা টাকা আদায়ে অভিযোগ দায়ের করা। তবে এক কনস্টেবলকে ‘স্যার’ বলে ডেকে বসেন তিনি। এখানেই তৈরি হয় সন্দেহ — এবং সেই সন্দেহই ফাঁস করে দেয় তার আসল পরিচয়। অবশেষে আটক হন ভুয়া পুলিশ পরিচয়দানকারী এই তরুণী।

ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ

ঘটনাটি ঘটে ৪ জুলাই (বৃহস্পতিবার) রাতে গাজীপুরের জয়দেবপুর থানায়। রাত প্রায় ১০টার দিকে বোরকা পরা অবস্থায় থানায় হাজির হন ২৭ বছর বয়সী তানিয়া আক্তার। নিজেকে উপ-পরিদর্শক (এসআই) হিসেবে পরিচয় দেন। কথা বলার সময় তিনি থানার একজন কনস্টেবলকে ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করেন, যা পুলিশের নিয়ম অনুযায়ী সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক।

এই অস্বাভাবিক আচরণেই সন্দেহ জাগে কর্তব্যরত অফিসারের। এরপর এক নারী পুলিশ সদস্যের সহযোগিতায় তল্লাশি চালানো হয় এবং দেখা যায়, বোরকার নিচে তিনি পুলিশ ইউনিফর্ম পরে আছেন। তখনই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে স্বীকার করেন যে তিনি প্রকৃতপক্ষে পুলিশের কেউ নন।

পরিচয় ও উদ্দেশ্য

আটক তরুণীর নাম তানিয়া আক্তার। তিনি গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী (মধ্যপাড়া) এলাকার আবু তালেবের মেয়ে। পুলিশ জানায়, থানায় যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে পাওনা টাকা আদায়ের অভিযোগ দায়ের করা। তবে কেন তিনি পুলিশের পোশাক পরে, এসআই পরিচয়ে থানায় গেলেন — সেটি এখনও রহস্যজনক।

জিজ্ঞাসাবাদে তানিয়া জানান, তিনি আগে থেকেই পুলিশ ইউনিফর্ম পরে এলাকায় ঘোরাঘুরি করতেন। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টও করতেন এসব ছবি ও ভিডিও। এসব পোশাক কোথা থেকে পেয়েছেন এবং উদ্দেশ্য কী ছিল — এসব বিষয় পুলিশ এখন তদন্ত করছে।

বাসায় অভিযান, উদ্ধার আরও সরঞ্জাম

তানিয়ার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার বাসায় অভিযান চালানো হয়। সেখানে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) ইউনিফর্মসহ পুলিশের ব্যবহৃত আরও সরঞ্জাম পাওয়া গেছে। পোশাকগুলো কীভাবে এবং কার কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

পুলিশ জানিয়েছে, শুধু ইউনিফর্মই নয়, রেঙ্ক, ব্যাজ, হ্যান্ডকাফ, বেল্ট ইত্যাদিও উদ্ধার করা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে এবং আরও গভীর তদন্তে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

স্থানীয়দের বক্তব্য ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তৎপরতা

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তানিয়া মাঝে মাঝে পুলিশের পোশাক পরে এলাকায় ঘুরে বেড়াতেন। তাকে দেখে অনেকেই মনে করতেন, তিনি সত্যিই কোনো নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। এছাড়া, তার ফেসবুক আইডিতে পুলিশ ইউনিফর্ম পরা ছবি ও ভিডিও প্রায়শই পোস্ট করতেন।

এ বিষয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে বিভ্রান্তি এবং উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, তিনি বড় কোনো অপরাধমূলক পরিকল্পনার অংশ হতে পারেন।

আইনি ব্যবস্থা ও পরবর্তী পদক্ষেপ

জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদ আহমেদ জানান, “তানিয়া নামের ওই নারী পুলিশের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি ভুয়া পরিচয়ে থানায় প্রবেশ করেছেন, যা একটি গুরুতর অপরাধ। তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে এবং রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।”

এখন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশ খতিয়ে দেখছে, তিনি একা এই কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন, নাকি এর পেছনে অন্য কেউ আছেন। এছাড়া, তার কোনো অপরাধী চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল কি না, তাও তদন্তাধীন।

“তানিয়া পুলিশ নন। তিনি ভুয়া পরিচয়ে থানায় প্রবেশ করে অপরাধ করেছেন। রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”
— ওসি, জয়দেবপুর থানা

বিশ্লেষণ

তানিয়া আক্তারের ঘটনাটি বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দেয়। যদি একজন সাধারণ নাগরিক এত সহজে পুলিশের পোশাক, ব্যাজ ও পরিচয় ব্যবহার করে ঘোরাফেরা করতে পারেন, তাহলে সেটি ভবিষ্যতে বড় কোনো নিরাপত্তা হুমকির কারণ হতে পারে।

পুলিশ এখন যেভাবে তদন্ত করছে, তাতে আশাবাদী হওয়া যায় — পুরো বিষয়টির মূলে পৌঁছাতে সক্ষম হবে। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়: ভবিষ্যতে এমন ভুয়া পরিচয়ের ঘটনা ঠেকাতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে?

এম আর এম – ০১৭৮, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button