বিয়ের গাড়ি ধাক্কা দিলো কলেজের দেয়ালে, বরসহ নিহত ৮

উত্তরপ্রদেশের সম্বলে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় বরের স্বপ্নময় দিন মুহূর্তেই পরিণত হলো ট্র্যাজেডিতে। গাড়ি উল্টে প্রাণ হারালেন একই পরিবারের আটজন। আহত আরও দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ভারতের উত্তরপ্রদেশের সম্বল জেলায় একটি বিয়ের গাড়ি কলেজের দেয়ালে ধাক্কা দিলে বরসহ একই পরিবারের আটজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সকালে ঘটে যাওয়া এ দুর্ঘটনা গোটা এলাকায় শোকের ছায়া ফেলে দিয়েছে।
ঘটনার বিস্তারিত
ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার সকালে, যখন বরযাত্রীবাহী একটি বোলেরো এসইউভি গাড়ি সম্বলের হর গোবিন্দপুর গ্রাম থেকে বিয়ের জন্য যাচ্ছিল পাশের সিরতৌল গ্রামে। সকাল আনুমানিক সাড়ে ৬টার দিকে গাড়িটি জনতা ইন্টার কলেজের সামনে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সজোরে দেয়ালে ধাক্কা খায় এবং উল্টে যায়।
গাড়িটিতে মোট ১০ জন যাত্রী ছিলেন, যাদের সবাই একই পরিবারের সদস্য। বরের নাম সুরুজ (২৪)। তার সঙ্গে ছিলেন ভাবি আশা (২৬), আশার মেয়ে ঐশ্বর্য (২), ভাইয়ের ছেলে বিষ্ণু (৬), এক চাচি এবং আরও তিন শিশু।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গাড়িটি উচ্চগতিতে চলছিল এবং চালক হয়তো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। হঠাৎ করে গাড়িটি কলেজের সীমানা দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে উল্টে যায়।
স্থানীয় প্রতিক্রিয়া ও উদ্ধার অভিযান
দুর্ঘটনার বিকট শব্দে আশপাশের লোকজন দৌঁড়ে এসে আহতদের উদ্ধার করে জেবনাই কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখানে পাঁচজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরও তিনজন।
দুইজন এখনো গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। তাদের আলিগড়ের একটি উন্নত হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
ঘটনার পরপরই পুলিশ ও চিকিৎসা টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) অনুকৃতি শর্মা বলেন, “গাড়ির অবস্থা দেখে বোঝা যাচ্ছে কতটা ভয়ংকর ছিল সংঘর্ষ। তদন্ত চলছে।”
পরিসংখ্যান ও দুর্ঘটনার গভীরতা
- নিহত: ৮ জন
- আহত: ২ জন (গুরুতর)
- গাড়ির আরোহী: ১০ জন
- বিয়ের গাড়ি: বোলেরো এসইউভি
- দুর্ঘটনার স্থান: জনতা ইন্টার কলেজ, জেবনাই, সম্বল, উত্তরপ্রদেশ
- সময়: সকাল ৬:৩০ (প্রায়)
গাড়িটি ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী বহন করছিল কিনা তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। দুর্ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান সংগ্রহ করছে পুলিশ।
সমাজে প্রতিক্রিয়া ও শোকের ছায়া
দুর্ঘটনার পর দুই গ্রামেই—বরের গ্রামের হর গোবিন্দপুর এবং কনের গ্রামের সিরতৌলে—শোকের ছায়া নেমে আসে। বিয়ের সাজে প্রস্তুত পরিবারটি এখন কফিনের পাশে কাঁদছে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “এই বিয়েটা ঘিরে অনেক স্বপ্ন ছিল। কে জানত এই যাত্রাই শেষ যাত্রা হবে!”
অনেকেই দুর্ঘটনার বিভীষিকাময় দৃশ্য দেখে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
“একটি স্বপ্নের দিন এভাবে মৃত্যু ও কান্নার দিন হয়ে উঠবে, তা কেউ ভাবেনি”—স্থানীয় বাসিন্দা
সাবধানবার্তা
এই দুর্ঘটনা আবারও প্রমাণ করল—উচ্চগতিতে গাড়ি চালানো এবং ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী তোলা কতটা বিপজ্জনক হতে পারে।
বিশেষ করে বিয়ের দিনে অতিরিক্ত উত্তেজনা, সময়মতো পৌঁছানোর তাড়া ও গাড়ির উপর অতিরিক্ত চাপ এমন ঘটনা ডেকে আনতে পারে।
স্থানীয় ট্রাফিক বিভাগ মনে করছে, সচেতনতা ছাড়া এমন দুর্ঘটনা ভবিষ্যতেও ঘটতে পারে।
একটি বিয়ের আনন্দ যেন মুহূর্তেই রূপ নেয় এক নিঃসঙ্গ বিদায়ে। এই দুর্ঘটনা শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো সমাজের জন্যই এক চরম দুঃখজনক শিক্ষা।
আশা করা যায়, এমন ট্র্যাজেডি যেন আর না ঘটে। তবে প্রশ্ন রয়ে যায়—দুর্ঘটনার পর সচেতনতা আদৌ বাড়বে তো?
এম আর এম – ০১৭০, Signalbd.com