কোরআনে নারীর যেসব গুণের কথা এসেছে

নারী জাতি ইসলাম ধর্মে সম্মানিত, মর্যাদাপূর্ণ এবং অপরিহার্য এক অস্তিত্ব। পবিত্র কোরআনে নারীকে দেওয়া হয়েছে বিশেষ সম্মান, শিক্ষা এবং নির্দেশনা। আল্লাহতায়ালা নারীদের বিভিন্ন গুণাবলি তুলে ধরে তাদের সমাজ, পরিবার ও দ্বীনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এমনকি পবিত্র কোরআনে নারীর নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সুরা — সুরা আন-নিসা — নাজিল করা হয়েছে। এটি নারী জাতির মর্যাদার একটি বড় প্রমাণ।
এই প্রতিবেদনে আমরা আলোচনা করব, কোরআনে উল্লেখিত নারীদের গুণাবলি, যেগুলোর অনুসরণ নারীকে নেককার ও সম্মানিত করে তোলে দুনিয়া ও আখেরাতে।
১. চারিত্রিক পবিত্রতা ও শালীনতা
নারীর চারিত্রিক পবিত্রতা ইসলামে বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন:
“মুমিন নারীকে বলুন, তারা যেন দৃষ্টি অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থান হেফাজত করে।”
(সুরা নুর, আয়াত: ৩১)
নারী যেন সমাজে এমনভাবে চলাফেরা করে যা তার ব্যক্তিত্ব ও ঈমানের পরিচায়ক হয়। লজ্জা, পর্দা এবং শালীনতার মাধ্যমে একজন নারী যেমন নিজেকে রক্ষা করে, তেমনি সমাজের জন্য হয়ে ওঠে আদর্শ।
২. লজ্জা ও নম্রতা
লজ্জা নারীর অলংকার। মহান আল্লাহ এক নারীর আচরণকে প্রশংসা করে বলেন:
“তখন নারীদ্বয়ের একজন লজ্জাজড়িত পায়ে তার কাছে এলো।”
(সুরা কাসাস, আয়াত: ২৫)
এই আয়াতে নারীর আত্মসম্মান ও নম্রতাপূর্ণ আচরণের প্রশংসা করা হয়েছে। ইসলাম নারীর অহংকারমুক্ত, ভদ্র ও নম্র আচরণকে উৎসাহিত করে।
৩. স্বামীর আনুগত্য ও সহচরিতা
ইসলামী পারিবারিক কাঠামোতে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক দয়াপূর্ণ ও শ্রদ্ধানির্ভর। স্ত্রী যদি দ্বীনের সীমার মধ্যে থেকে স্বামীর সহযোগী হয়, তা পরিবারে শান্তি বয়ে আনে। আল্লাহতায়ালা বলেন:
“আমি আইয়ুব (আ.)-কে তার পরিবার ফিরিয়ে দিয়েছি এবং আরও দান করেছি, যাতে তা আমার অনুগ্রহ ও জ্ঞানবানদের জন্য উপদেশ হয়।”
(সুরা সাদ, আয়াত: ৪৩)
এই আয়াতের পটভূমিতে দেখা যায়, আইয়ুব (আ.)-এর স্ত্রী দুঃসময়ে তাঁর পাশে থেকেছেন নিঃস্বার্থভাবে। এটি নারীর আত্মত্যাগ ও পারিবারিক সহযোগিতার নিদর্শন।
৪. মার্জিত ও সংযত ভাষা
নারীর ভাষা তার ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক। পবিত্র কোরআন নির্দেশ দেয়—
“তোমরা ন্যায়সংগতভাবে কথা বলো।”
(সুরা আহজাব, আয়াত: ৩২)
নারীদের উদ্দেশে আরও বলা হয়েছে, তারা যেন কোমলতা ও মোহনীয়তার সঙ্গে কথা না বলে যাতে দুর্বল ঈমানের কেউ প্রলুব্ধ হয়।
৫. দ্বীনদারতা ও আল্লাহভীতি
কোরআনে নারীদের ‘সালিহাত’ তথা নেককার, দ্বীনদার এবং পরহেযগার নারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত মারইয়াম (আ.)-কে পবিত্র নারী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে যিনি তাঁর লজ্জাস্থান হেফাজত করেছিলেন।
“আর মারইয়াম, যিনি তাঁর লজ্জাস্থান হেফাজত করেছিলেন…”
(সুরা তাহরিম, আয়াত: ১২)
নারী যদি দ্বীনদার হয়, সে হয় পরিবার ও সমাজের জন্য আলোকবর্তিকা।
৬. দীন পালনে পুরুষের সহযোগী
ইসলামে নারী ও পুরুষ পরস্পরের সহায়ক — একে অপরকে সৎকাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করবে। আল্লাহতায়ালা বলেন:
“মুমিন পুরুষ ও নারী পরস্পরের বন্ধু। তারা সৎকাজে আদেশ করে, অসৎ কাজে নিষেধ করে, নামাজ কায়েম করে, জাকাত দেয়।”
(সুরা তওবা, আয়াত: ৭১)
এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, ইসলামে নারীর দায়িত্ব শুধু ঘরকেন্দ্রিক নয় — বরং দ্বীন প্রচার ও সমাজ গঠনের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারও।
৭. পারস্পরিক ভালোবাসা ও মানসিক আশ্রয়
আল্লাহ নারী ও পুরুষের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা সৃষ্টি করেছেন যেন তারা একে অপরের মানসিক আশ্রয় হয়। কোরআনে বলা হয়েছে:
“তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের ভেতর থেকে সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও।”
(সুরা রূম, আয়াত: ২১)
এতে বোঝা যায়, একজন নারী শুধু স্ত্রী নন — বরং একজন পুরুষের মানসিক প্রশান্তির উৎস।
৮. ঈর্ষা ও আত্মসংযম
মানবীয় দুর্বলতা হিসেবে নারী-পুরুষ সবার মাঝে ঈর্ষা থাকতে পারে। কিন্তু ইসলাম নারীকে এসব থেকে বিরত থাকার শিক্ষা দিয়েছে। কোরআনে বলা হয়েছে:
“কোনো নারী যেন অপর নারীকে উপহাস না করে। হয়তো উপহাসকৃত নারী তার চেয়ে উত্তম।”
(সুরা হুজরাত, আয়াত: ১১)
এ আয়াতে নারীদের জিহ্বার অপব্যবহার, অহংকার ও আত্মপ্রশংসার বিপরীতে সতর্ক করা হয়েছে।
উপসংহার
পবিত্র কোরআনে নারীর গুণাবলি শুধু কিছু নিয়ম বা বিধিনিষেধ নয় — বরং এগুলো একজন নারীর মর্যাদা, আদর্শ এবং তার সামগ্রিক ব্যক্তিত্বকে তুলে ধরার নির্দেশনা। একজন নারী যদি এসব গুণাবলি নিজের জীবনে ধারণ করেন, তিনি শুধু একজন ভালো মুমিনাই হবেন না, বরং সমাজ, পরিবার ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে অসামান্য ভূমিকা রাখতে পারবেন।
নারীদের উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহর এই উপদেশগুলো মানবতার জন্য পথনির্দেশক — যা অনুসরণ করলে সমাজে ফিরে আসবে শান্তি, সৌহার্দ্য এবং মূল্যবোধ।
এম আর এম – ০১৬৬, Signalbd.com