আঞ্চলিক

সিলেট রোডে এনা-ইউনিক বাস সংঘর্ষে নিহত ১, আহত

আজ ভোরবেলায় সিলেটগামী মহাসড়কে ঘটে গেল এক প্রাণঘাতী সড়ক দুর্ঘটনা, যেখানে এনা পরিবহন ও ইউনিক পরিবহনের দুটি যাত্রীবাহী বাস মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এই মর্মান্তিক ঘটনার ফলে ইউনিক পরিবহনের একজন হেল্পার ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন, আর আরও অনেক যাত্রী গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অনেকে এখনও আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

দুর্ঘটনার বিস্তারিত পরিস্থিতি

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ ভোরের দিকে কুলাউড়া উপজেলার সিলেট রোডের একটি বাঁক এলাকায় দ্রুতগামী দুটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পরস্পরের মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। বাস দুটি এনা ও ইউনিক পরিবহনের হওয়ায় যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে ইউনিক পরিবহনের হেল্পার ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। অন্যান্য আহতদের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদেরকে দ্রুত সিলেটের প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।

উদ্ধার ও সড়ক পরিস্থিতি

পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার কাজ শুরু করে। তারা আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোসহ, সড়কটিকে দ্রুত যান চলাচলের উপযোগী করার চেষ্টা করে। দুর্ঘটনার কারণে সিলেট রোডে দীর্ঘক্ষণ যানজট সৃষ্টি হয়। স্থানীয় প্রশাসন যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে।

দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান শুরু

পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ তদন্তের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে গতি নিয়ন্ত্রণহীনতা এবং বাসচালকদের অমনোযোগিতা এই দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে শেষ পর্যালোচনা রিপোর্টে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে।

দেশের সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন প্রশ্ন

এই দুর্ঘটনা আবারও দেশের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার নিরাপত্তা ও গতি নিয়ন্ত্রণের অভাবের ওপর জোরালো প্রশ্ন তোলে। বিশেষ করে পরিবহন খাতে কর্মরত বাসচালক ও সহকারী স্টাফদের প্রশিক্ষণ, যানবাহনের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, এবং সড়ক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার তত্ত্বাবধানের উপর এখনো যথাযথ নজরদারি নেই বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সড়ক দুর্ঘটনা: বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান সমস্যা

বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে তিনশো জনের বেশি মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। আর আহত হন হাজার হাজার। বিশেষ করে মহাসড়কগুলোতে যানবাহনের অতিরিক্ত গতি ও ট্রাফিক আইন অমান্য প্রধান কারণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। নিরাপত্তা বিধি মানা ও সঠিক আইন প্রয়োগের অভাব দেশে সড়ক দুর্ঘটনার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে।

নিরাপদ সড়ক ও সজাগ পরিবহন ব্যবস্থার অপরিহার্যতা

সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বাসচালকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান, গাড়ির নিয়মিত সেবা-রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা, এবং সড়ক নিরাপত্তার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং জনসাধারণের অংশগ্রহণও অপরিহার্য।

জনমত ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতির আহ্বান

সাধারণ মানুষ ও পরিবহন শ্রমিকরা সড়ক দুর্ঘটনার মাত্রা কমানোর জন্য সরকারের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। নিরাপদ সড়ক পরিবহন নিশ্চিত করতে ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহারের আহ্বান উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধু আইন প্রয়োগ নয়, মানুষকে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়ে শিক্ষিত করাও অপরিহার্য।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button