আঞ্চলিক

বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান: নারী-শিশুসহ ৩ জনের ওপর ‘অ্যাসিড’ নিক্ষেপ

যশোরের ঝিকরগাছায় ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক এ ঘটনায় দগ্ধ হয়েছেন মা, মেয়ে ও শিশু সন্তান। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের প্রতিশোধ নিতেই জানালা দিয়ে ছোড়া হয় অ্যাসিড। অভিযুক্ত ব্যক্তি পলাতক, তদন্তে নেমেছে পুলিশ।

কী ঘটেছিল সেদিন রাতে

যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী এলাকায় বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঘটে ভয়াবহ অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা। জানা যায়, ওই এলাকার জামাত হোসেনের স্ত্রী রাহেলা বেগম (৪৮), মেয়ে রিপা খাতুন (২৬) ও ছেলে ইয়ানূর (৮) একসঙ্গে ঘরে বসে ছিলেন। ঠিক সেই মুহূর্তেই জানালার ফাঁক দিয়ে একজন দুর্বৃত্ত অ্যাসিড ছুড়ে মারে।

এতে তিনজনই দগ্ধ হন। তাদের সঙ্গে সঙ্গে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জানা যায়, ছোট ছেলে ইয়ানূরের পা, হাত ও বুকের বেশ কয়েকটি অংশে দগ্ধ হয়েছে, যা আশঙ্কাজনক।

প্রত্যাখ্যান থেকেই প্রতিহিংসা: অভিযুক্ত কে?

ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীদের বরাতে জানা যায়, এই নৃশংস ঘটনার পেছনে রয়েছে মঠবাড়ি গ্রামের ফজলুর রহমানের গৃহপরিচারক জসিম উদ্দিন (৩৫)। দীর্ঘদিন ধরে তিনি রিপা খাতুনকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। রিপা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন জসিম।

বলা হচ্ছে, ঘটনার দিন রাতে, এশার আজানের কিছু আগে, জসিম গোপনে জানালার পাশে এসে দাঁড়ান এবং অ্যাসিড ছুড়ে মারেন। রিপা নিজেই জানিয়েছেন, ঘটনার পরে মোবাইল ফোনের আলোতে তিনি দেখতে পান জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা জসিমের হাতে একটি অ্যাসিডের বোতল।

পরিবার ও প্রতিবেশীদের প্রতিক্রিয়া

ভুক্তভোগীদের এক আত্মীয় আব্দুর রহমান বলেন, “রিপা চার বছর ধরে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে বাবার বাড়িতে থাকছে। ছেলে ইয়ানূরকে নিয়ে সে একটি শান্তিপূর্ণ জীবন কাটাচ্ছিল। কিন্তু জসিমের পক্ষ থেকে অব্যাহতভাবে বিরক্ত করা হচ্ছিল। অনেকবার নিষেধ করার পরও থামেনি। অবশেষে এই ভয়ঙ্কর হামলা চালায় সে।”

তিনি আরও জানান, “এটা কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। একটি গোটা পরিবারের জীবন হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে একতরফা প্রতিহিংসা।”

চিকিৎসার অগ্রগতি ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য

যশোর জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. জুবায়ের আহমেদ জানান, “সবচেয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে ছোট ইয়ানূর। তার শরীরের অনেক অংশে দগ্ধ হয়েছে। মা ও বোনের শরীরেও আংশিক দগ্ধতা রয়েছে। এখনো বলা যাচ্ছে না এটি শুধুই অ্যাসিড, নাকি কোনো দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ।”

তিনজনকেই নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

পুলিশের তদন্ত ও আইনগত অগ্রগতি

ঝিকরগাছা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু সাঈদ জানিয়েছেন, “ঘটনাটি জানার পরপরই আমরা ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। অভিযুক্ত ব্যক্তি পলাতক রয়েছে। তবে তাকে আটকের জন্য অভিযান চলছে।”

তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের নৃশংস ঘটনার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনের মাধ্যমে অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।”

দেশে অ্যাসিড হামলার পুনরাবৃত্তি: একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা

বাংলাদেশে অ্যাসিড সন্ত্রাস নতুন নয়। অতীতে প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, পারিবারিক বিরোধ বা জমি সংক্রান্ত বিষয়েও এমন হামলার ঘটনা ঘটেছে। যদিও অ্যাসিড সন্ত্রাস দমন আইন ও অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ আইন রয়েছে, তবুও বাস্তবে বহু ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ দুর্বল।

মানবাধিকারকর্মীদের মতে, প্রতিটি ঘটনায় দ্রুত তদন্ত ও বিচার কার্যক্রম শুরু না হলে এই অপরাধ আরও বাড়বে।

কে দেবে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা?

একজন নারীর ‘না’ বলার অধিকারকে সম্মান না করে তার পুরো পরিবারকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেওয়া একটি সমাজেরই ব্যর্থতা। এই ঘটনায় দোষীকে দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা না হলে এমন সন্ত্রাস থামবে না।

তবে প্রশ্ন থেকে যায়—নারী ও শিশুর নিরাপত্তার দায়িত্ব আসলে কে নেবে?

এম আর এম – ০১৬৫, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button