আঞ্চলিক

সকালে পরীক্ষা দিতে বেরিয়ে নিখোঁজ, দুপুরে মিলল মাদ্রাসাছাত্রীর মরদেহ

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে সকালবেলা পরীক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হওয়া এক মাদ্রাসাছাত্রী দুপুরে রাস্তার পাশে ধানক্ষেতে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। বিষয়টি ঘিরে এলাকাজুড়ে শোক ও উদ্বেগের ছায়া। দাখিল পরীক্ষার্থী আমেনা আক্তার (১৫) বৃহস্পতিবার সকালে পরীক্ষা দিতে বের হয়ে নিখোঁজ হন। পরে দুপুরে স্থানীয় একটি ধানক্ষেত থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

ঘটনা বিস্তারিত 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আমেনা আক্তার ভেদরগঞ্জ উপজেলার দারুল ফায়েজ ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে সে পরীক্ষা দিতে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। পরিবারের সদস্যরা তাকে খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান পাননি।

বিকেল ৩টার দিকে চর কোড়ালতলী এলাকার একটি ধানক্ষেতে স্থানীয়রা এক অচেতন দেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহটি শনাক্ত করে এবং তা উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।

ভেদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ আহমেদ সেলিম জানান, “আমেনা আক্তারের মরদেহ পাকা রাস্তার পাশে ধানক্ষেত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এটি একটি রহস্যজনক মৃত্যু বলে মনে হচ্ছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।”

পরিবার ও প্রতিবেশীদের প্রতিক্রিয়া 

আমেনার পরিবারের সদস্যরা এ ঘটনায় শোকাহত। তার বাবা মান্নান ঢালী বলেন, “আমার মেয়ে সকালবেলা পরীক্ষা দিতে বের হয়েছিল। কীভাবে এমন হলো, কিছুই বুঝতে পারছি না। ও কারও কোনো ক্ষতি করত না।”

এলাকাবাসী জানান, আমেনা ছিল ভদ্র, নম্র এবং পড়ালেখায় আগ্রহী। এমন একটি মৃত্যু এলাকায় সবাইকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

“আমার মেয়ে পরীক্ষা দিতে বের হয়েছিল। আর কোনোদিন ফিরে আসবে না—এটাই যেন বিশ্বাস হচ্ছে না”—আমেনার বাবা মান্নান ঢালী

এলাকার কিছু বাসিন্দা বলছেন, এর আগে ওই এলাকাতেও দু-একটি অনুরূপ ঘটনা ঘটেছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা সঠিক না থাকার কারণে ছাত্রীরা আতঙ্কে আছে। তারা বলছেন, এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে, তার জন্য প্রশাসনের আরও কড়া নজরদারি প্রয়োজন।

তদন্ত ও আইনি অগ্রগতি 

পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে হত্যার সন্দেহ উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। পরিবার থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি।

ওসি পারভেজ আরও জানান, “যেহেতু এটি একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু, এবং সন্দেহজনক অবস্থায় মরদেহ পাওয়া গেছে, তাই আমরা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। প্রয়োজনে সিআইডি বা পিবিআই-এর সহযোগিতাও নেওয়া হবে।”

বিশ্লেষণ ও জনমতের প্রতিফলন 

একজন স্থানীয় সমাজকর্মী বলেন, “যতদিন না পর্যন্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুল-কলেজগামী মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে, ততদিন এমন ঘটনা থামবে না। প্রশাসনের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে।”

অনেকেই বলছেন, শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে সুরক্ষা, নিরাপত্তা ক্যামেরা স্থাপন এবং স্কুলের সময়ের আগে-পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।

সারসংক্ষেপ 

একজন শিক্ষার্থীর এমন অকালমৃত্যু শুধু একটি পরিবারের নয়, গোটা সমাজের বেদনার কারণ। এই মৃত্যু কি নিছক দুর্ঘটনা, নাকি এর পেছনে আছে কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড? প্রশাসনের উপর এখন দায়িত্ব এই ঘটনার স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটন এবং অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।

এম আর এম – ০১৬২, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button