বই আনতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার শিক্ষার্থী, শিক্ষক কারাগারে

গাজীপুরের শ্রীপুরে প্রাইভেট শিক্ষকের কাছ থেকে বই আনতে গিয়ে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ঘটনায় মামলা দায়েরের পর অভিযুক্ত শিক্ষক আরিফ মিয়াকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনাটির সারসংক্ষেপ
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় চাঞ্চল্যকর একটি ঘটনা ঘটেছে। একটি স্কুলছাত্রী, যার বয়স আনুমানিক ১৩ বছর, সে তার প্রাইভেট শিক্ষকের কাছ থেকে বই আনতে গিয়েছিল। কিন্তু সেই বই আনাই যে তার জীবনের জন্য বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা হয়ে উঠবে, তা কে জানতো! অভিযুক্ত শিক্ষক আরিফ মিয়া তাকে ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। পরে ভুক্তভোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দায়ের করলে, পুলিশ দ্রুত অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে।
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী উপজেলার একটি বেসরকারি স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। সে একই স্কুলের শিক্ষক আরিফ মিয়ার কাছে প্রাইভেট পড়ত। এই শিক্ষক মুলাইদ গ্রামের আয়শা প্রি-ক্যাডেট অ্যান্ড হাই স্কুলের শিক্ষক এবং তালিমুল কুরআন আন্তর্জাতিক মহিলা মাদ্রাসার সঙ্গে যুক্ত।
ঘটনার কয়েক দিন আগে শিক্ষক আরিফ, ওই শিক্ষার্থীর কাছ থেকে একটি বিজ্ঞান বই ধার নেন। পরে ২৮ জুন, শনিবার সকালে সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষক বই ফেরত দেওয়ার কথা বলে তাকে মাদ্রাসায় আসতে বলেন। শিক্ষার্থী নির্দ্বিধায় সেখানে গেলে, শিক্ষক তাকে মাদ্রাসার তৃতীয় তলার অফিস কক্ষে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন।
এই সময় ছাত্রীর চিৎকারের চেষ্টা হুমকি দিয়ে দমন করে আরিফ এবং ঘটনা কাউকে না জানানোর জন্য চাপ প্রয়োগ করেন।
পরিবারের অবস্থান ও মামলার বিবরণ
বাড়িতে ফিরে শিক্ষার্থী পুরো ঘটনা মাকে জানায়। পরে বিষয়টি পরিবারের অন্য সদস্যদের জানানো হলে তারা মেয়েটির দাদার নেতৃত্বে শ্রীপুর থানায় অভিযোগ জানায়। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) শিক্ষার্থীর দাদা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। মামলা গ্রহণের পর পরই পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক আরিফ মিয়াকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশের বক্তব্য ও অভিযুক্তের স্বীকারোক্তি
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহম্মদ আব্দুল বারিক জানান, “ভিকটিমের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত আরিফ মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।”
ওসি আরও জানান, “গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে গাজীপুর আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।”
স্থানীয় প্রতিক্রিয়া ও জনমত
এই ঘটনার পর স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই জানান, “শিক্ষক যদি এমন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা কোথায়?”
একজন অভিভাবক বলেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙিয়ে যারা এমন ঘৃণ্য কাজ করে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।”
শিশু সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন ও উদ্বেগ
এই ঘটনাটি শুধু একজন শিক্ষার্থীর জীবনকেই নয়, পুরো সমাজের মূল্যবোধকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। একজন শিক্ষকের দায়িত্ব শুধুমাত্র পড়ানো নয়, বরং শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করাও তার নৈতিক দায়িত্ব। অথচ সে দায়িত্বের চরম অপব্যবহার করেছেন অভিযুক্ত শিক্ষক।
আগে এমন ঘটনা আরও ঘটেছে?
গাজীপুর জেলায় পূর্বেও একাধিকবার শিক্ষক বা অভিভাবকের হাতে শিশু নির্যাতনের ঘটনা শোনা গেছে। তবে এই ঘটনাটি সামাজিকভাবে আরও বেশি আলোচিত হচ্ছে কারণ এতে শিক্ষার্থীকে ধোঁকা দিয়ে ফাঁদে ফেলা হয়েছে।
আইন কী বলছে?
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের আওতায় ধর্ষণের অভিযোগে প্রমাণিত হলে অপরাধীর যাবজ্জীবন বা মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। আদালত সাধারণত প্রমাণ, স্বীকারোক্তি ও ঘটনার প্রেক্ষাপট বিচার করে রায় দেয়।
“ভিকটিমের পরিবারের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে শিক্ষক আরিফ মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি ঘটনার দায় স্বীকার করেছেন।” — ওসি, শ্রীপুর থানা
গাজীপুরের এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা আমাদের সমাজ ও শিক্ষা ব্যবস্থার একটি ভয়ংকর দুর্বল দিককে প্রকাশ করে দিয়েছে। এ ঘটনায় শুধু বিচার নয়, শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও মনিটরিংয়ের আওতায় না আনা হলে, ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধ কঠিন হয়ে পড়বে।
এম আর এম – ০১৬০, Signalbd.com