আঞ্চলিক

স্ত্রীর কিডনিতে জীবন ফিরে পেয়ে স্বামী থাকছেন পরকীয়া প্রেমিকাকে নিয়ে!

নিজের একটি কিডনি দিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন স্ত্রী। সেই জীবনদানকারী স্ত্রীকেই ঘরছাড়া করলেন অকৃতজ্ঞ স্বামী! এখন পরকীয়া প্রেমিকার সঙ্গে বসবাস করছেন তিনি। সাভারের কলমা এলাকায় ঘটেছে এক হৃদয়বিদারক ও অমানবিক ঘটনা। স্ত্রীর দেয়া কিডনিতে প্রাণ ফিরে পাওয়ার পরও স্বামী জড়িয়ে পড়েছেন পরকীয়ায়। শুধু তাই নয়, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যিনি তাকে বাঁচিয়েছিলেন, সেই স্ত্রীকেই নির্যাতন করে বের করে দিয়েছেন বাড়ি থেকে। বর্তমানে প্রেমিকার সঙ্গে সংসার করছেন ওই স্বামী। ঘটনার পর নারী নির্যাতনের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন স্ত্রী।

ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ 

উম্মে সাহেদীনা টুনি নামের এক নারী অভিযোগ করেছেন, তার স্বামী মো. তারেক, যিনি মালয়েশিয়া প্রবাসী ছিলেন, তাকে বাঁচাতে নিজের একটি কিডনি দান করেছিলেন তিনি। কিন্তু সুস্থ হওয়ার পর স্বামী জড়িয়ে পড়েন এক ডিভোর্সি নারীর সঙ্গে পরকীয়ায়। পরে টুনিকে শারীরিক নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেন এবং প্রেমিকার সঙ্গে সংসার শুরু করেন।

এই নির্মম ঘটনার সূচনা ২০০৬ সালে, যখন পারিবারিকভাবে টুনির সঙ্গে তারেকের বিয়ে হয়। এক বছর পর তাদের ঘর আলোকিত করে আসে একটি পুত্রসন্তান। শুরুটা ছিল সুখেই, কিন্তু ২০০৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে হঠাৎই তারেক গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসায় জানা যায়, তার দুটি কিডনিই প্রায় অকার্যকর হয়ে গেছে।

কিডনি দান ও আত্মত্যাগের কাহিনি (স্ত্রীর আত্মদান):

চিকিৎসকরা জানান, স্বামীকে বাঁচাতে হলে কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে। সেই সময়ে সদ্য সন্তান জন্ম দেয়া টুনি কোনো দ্বিধা না করে নিজের একটি কিডনি দান করার সিদ্ধান্ত নেন। ভারত, চেন্নাইয়ের সিএমসি হাসপাতালে শুরু হয় চিকিৎসা এবং সফলভাবে প্রতিস্থাপন হয় টুনির কিডনি।

টুনি শুধু কিডনিই দেননি, চিকিৎসার ব্যয়ভারও নিজের আয়ে বহন করেছেন। ঢাকায় হোম বিউটি পার্লার ও বুটিকস ব্যবসা শুরু করে মাসে ৪০–৫০ হাজার টাকা আয় করতেন তিনি, যা পুরোটাই ব্যয় হতো স্বামীর চিকিৎসায়। বারবার ভারত যাওয়া, চিকিৎসা ও থাকার খরচ, সবই টুনির কাঁধে পড়ে।

স্বামীর চরিত্রের পরিবর্তন ও পরকীয়া:

অপূর্ব আত্মত্যাগের বদলে কৃতজ্ঞতা নয়, বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারেকের আচরণ হয়ে ওঠে দুর্ব্যবহারপূর্ণ। একসময় টুনি আবিষ্কার করেন, তার স্বামী তাহমিনা নামের এক ডিভোর্সি নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছেন।

তখনই শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। টুনির মোবাইলে পাওয়া চ্যাট ও কল রেকর্ড থেকে প্রমাণ মেলে পরকীয়ার। প্রতিবাদ করায় তাকে মারধর করা হয়। এরপর এক পর্যায়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয় টুনিকে, আর পরকীয়া প্রেমিকার সঙ্গে বসবাস শুরু করেন তারেক।

আইনগত পদক্ষেপ ও মামলা :

এই ঘটনার পর টুনি প্রথমে সাভার থানায় নারী নির্যাতনের অভিযোগ দেন। পরে ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যৌতুক এবং নারী নির্যাতনের মামলা করেন। তারেক গ্রেপ্তার হন এবং প্রায় এক মাস জেলেও থাকেন। তবে জামিনে মুক্ত হওয়ার পর তিনি সরাসরি প্রেমিকার বাসায় গিয়ে উঠেন।

এদিকে তারেক এখন আত্মগোপনে রয়েছেন। তার মোবাইল বন্ধ, এবং পরিবারের কেউই এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি নন।

সমাজ কী বলছে?

এই ঘটনা ঘিরে সাভার এলাকাজুড়ে চলছে তীব্র আলোচনা ও ক্ষোভ। অনেকেই বলছেন, “একজন স্ত্রী যিনি জীবন দিয়ে স্বামীকে ফিরিয়ে এনেছেন, তার সঙ্গে এমন নিষ্ঠুর আচরণ সমাজের জন্য লজ্জাজনক।” কেউ কেউ সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনাকে ‘মানবিকতার অপমান’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন।

সারসংক্ষেপঃ  

জীবনদানের প্রতিদান কী হতে পারে, তার সবচেয়ে নির্মম উদাহরণ যেন সাভারের এই ঘটনা। একজন স্ত্রী যিনি নিজের কিডনি দিয়ে স্বামীকে মৃত্যুর হাত থেকে ফিরিয়ে আনলেন, সেই স্ত্রীই আজ ঘরহারা, আর স্বামী প্রেমিকার ঘরে।

তবে সমাজের প্রশ্ন এখন একটাই— এই ধরনের অকৃতজ্ঞতার বিচার কি শেষ পর্যন্ত হবে?

এম আর এম – ০১৫৬, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button